নতুন চেতনা ও কবিরা । গিয়োম আপোলিন্যের
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২৩, ৯:০০ অপরাহ্ণ, | ৬৮৭ বার পঠিত
মা পোলিশ, বাবা ইতালীয়ান; উভয়ের বিবাহ হয়নি। আপোলিন্যের বাবাকে ভালো চিনতেন না। তিনি নিজের নাম নিজে ঠিক করেছিলেন। জন্ম ১৮৮০ সালে, শরীরে এক বিন্দু ফরাসি রক্ত নেই, উচ্চশিক্ষা পাননি কিন্তু আপোলিন্যের খাঁটি ফরাসি কবিদের মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেনিতে। জীবনটা অনেক ব্যর্থ প্রেমের মালা; বিশাল চেহারা ছিল, আমুদে; নিজের উৎসাহে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, মাথায় গোলার ঘা খেয়ে ফিরে আসেন, সে আঘাত সারেনি, বিয়ে করলেন, তার ছ’মাস পরেই যুদ্ধ থামার আগের দিন মৃত্যু। শব বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পিকাসো এবং অন্যান্য শিল্পী-বন্ধুরা। ছিলেন বলিষ্ঠ শিল্প-সমালোচক। কবি হিসেবে জীবিতকালে প্রায় অপরিচিত, এখন খ্যাতির শীর্ষে।
সূত্র- অন্য দেশের কবিতা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
কবিতা এবং সৃষ্টি এক এবং একই জিনিস। তাকেই কবি বলা উচিত কেবল যিনি আবিষ্কার করেন, সৃষ্টি করেন, যতদূর মানুষের সৃষ্টির সীমানা। কবি তিনিই যিনি নতুন আনন্দ আবিষ্কার করেন যেটি বহন করা যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন। আপনি সব ক্ষেত্রেই একজন কবি হতে পারেন। আপনাকে শুধু দুঃসাহসী হতে হবে এবং অন্বেষণ করতে যেতে হবে।
এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যে সবচেয়ে জৌলুশের স্থান, কম পরিচিত ক্ষেত্র, অসীমে ব্যাপ্তিতা, কল্পনালগ্নতা ইত্যাদি কবির নামটির সাথে বিশেষভাবে সংরক্ষিত, যারা বিশাল কল্পনাপ্রবণ স্থানগুলিতে বিরামচিহ্নি টেনে নতুন আনন্দের সন্ধান করে।
কবির জন্য সবচেয়ে ছোট কাজ হল অনুমান যার প্রস্তানবিন্দু হল অজানার বিশালতা যেখানে আগুন জ্বলে বহুর মহত্ত্বে।
তার কোন মহান শক্তিশালী আবিস্কারের নিয়ম চয়ন করতে হবে না বা স্বাদের কোন প্রণীতধারা এমনকী মহৎ হিসাবে শ্রেনিবদ্ধ একটি সত্য ইত্যাদিকে। আমরা একটি দৈনন্দিন ঘটনা থেকে এখানে শুরু করতে পারি যেমন একটি রুমাল যদি পড়ে যায় তা কবির জন্য হতে পারে একটি লিভার যা দিয়ে তিনি সমগ্র মহাবিশ্বকে উত্তোলন করবেন। কবিকে বিজ্ঞানী নিউটনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে যিনি আপেলের পতন প্রতক্ষ্য করেছিলেন। এই কারণেই আজকের কবি প্রকৃতির কোনো গতিবিধিকে তুচ্ছ করেন না। তাঁদের আত্মা আবিষ্কারকে অনুসরণ করে বিস্তীর্ণতায় সবচেয়ে অধরা সংশ্লেষে; ভিড়, নীহারিকা, মহাসাগর, জাতি ইত্যাদিতে। হাতের গুঞ্জন যেমনটি বাস্তবে আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে সহজ। একটি পকেটে হাত, ঘর্ষণ দ্বারা প্রজ্বলিত একটি দেয়াসলাই, পশুর কান্না, বৃষ্টির পরে বাগানের গন্ধ, একটি শিখা যেটি কুটিরে জ্বলে ওঠে।
কবিরা শুধু সৌন্দর্যের মানুষ নন। তারা এখনও এবং সর্বোপরি সত্যের পুরুষ যতদূর সম্ভব এটি আমাদের অজানাকে ভেদ করতে দেয়। তাই এটি বিস্ময়, অপ্রত্যাশিত যা কবিতার অন্যতম প্রধান স্রোতধারা। আর কে বলতে সাহস করবে যা আনন্দের যোগ্য তা নতুন বা সুন্দর নয়? অন্যরা দ্রুত এই মহৎ অভিনবত্বকে অবমূল্যায়ন করে নেবে, তার পরে এরা যুক্তির ডোমেইনে নিজেদের প্রবেশ করাবে। তবে কেবলমাত্র কবিই সীমার মধ্যে সৌন্দর্য ও সত্যের একমাত্র প্রবক্তা ‘যে’ প্রস্তাব পেশ করবে।
অন্বেষণের প্রকৃতির দ্বারা কবি নতুন জগতে প্রথম প্রবেশ করেন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তার কাছে একমাত্র সান্ত্বনা অবশিষ্ট থাকে যে মানুষেরা শেষ পর্যন্ত কেবল সত্যের উপরই বেঁচে থাকে। যদিও তারা তাদের সামনে মিথ্যার মাদুর পেতে দেওয়া হয়। এটা স্পষ্টত যে কবি একাই সেই জীবনকে লালন করেন যেখানে মানবতা তার সত্যকে খুঁজে পায়। এ কারণেই আধুনিক কবিরা অগ্রসর। সত্যের সব কবি সবসময় নবীন। তাদের কাজ অসীম, তারা আপনাদের অবাক করেছে এবং আপনাদের আরও অবাক করবে। […]
পরিশেষে, কবিরা গীতিধর্মী পরমকারণ এবং গীতিশাসনের রসায়ন দ্বারা ঐশ্বরিক ধারণার একটি চিরতর শুদ্ধ অর্থ প্রদান করে। আমাদের মধ্যে এটি এত জীবন্ত এবং সত্য যে আমাদেরকে তা চিরস্থায়ীভাবে নবায়ন করে। কবিতার সৃষ্টি চিরন্তন এবং অবিরাম পুনর্জন্ম লাভ করে। [….]
আধুনিক কবিরা তাই স্রষ্টা, উদ্ভাবক এবং নবী। তারা দাবি করে যে যা সর্বজনের জন্য মঙ্গলকর, তা পরীক্ষা করা হোক। তারা প্লেটোর দিকে ফিরে তাকিয়ে অনুরোধ করে যে তিনি যদি তাদেরকে তার প্রজাতন্ত্র থেকে বহিষ্কার করেন তবে অন্তত প্রথমে আগে একবার তাদের কথা শুনতে।
রচনাকাল- ১৯১৮