তমালপুরাণ । মোস্তাক আহমাদ দীন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ৯:৪২ অপরাহ্ণ, | ৩০০ বার পঠিত
ফুলের মুহূর্ত
ফুলের মুহূর্ত নিয়ে ভেবে আমি তোমাকেই পাই, দেখি তুমি ফুলেরই জাতিকা, মাঝেসাঝে অকারণে মুখে আনো পাথরের কথা, মুখে তোলো নিষ্ফুল পাহাড়ের কথা। অথচ দেখেছি আমি ফুলটুঙ্গি ঘরে বসে নরম জলের সঙ্গে মনগপ করো। ফুলের মুহূর্ত নিয়ে ভেবে আমি তোমাকেই পাই, মিছে সাজো রূঢ় শাহরিকা।
স্থির ঋতু
তুমি চুপে-চুপে সয়ে যাচ্ছ একটি-দুটি সর্প-শিহরন —আমি তার যতটাই বুঝি, জানি কোন জল কোন পথে গেলে রয়ে যায় দুঃখ-পারাপার; কারও-কারও মনে হয় এই জল ধরে রাখে কালের অন্তিম
আমি দেখি নীরবে দীক্ষা-নিতে-আসা গোপিনীর মুখ, দেখি সে নিবিড় মুখ গৃহ-নীরবতা ভেঙে বাজারের দিকে গেলে আজনবি হাওয়া এসে খুলে দেয় দরোজা তোমার। তোমার গোপন রত্ন দিনের-রাতের তালুক যথাপাত্রের নিবিড়তা ভেঙে বাতাসে-বাতাসে আজ হৈ হৈ করে
এখন তোমারও জানি মনে হবে, আমার এ-শরীরও ঠিক দুটি-তিনটি সর্পে শিহরিত
তমালপুরাণ
তমাল গাছের মর্মে কতটুকু পাওয়া যায় বাণী? আজও দেখতে পাই শিলাপাথরের-ধর্মে-বসা মুখ —স্থির আর অল্প-অল্প দুর্বিনীত আভা অলখ ছায়ার নিচে কাঁপে
বটের ঝুরির পাশে মাঝেমধ্যে বসে থাকি আমি, তখন দ্যুতির ছন্দে পাহাড়ের অপ্রকাশ ঝরনার গতি। মনে-মনে ঘুরে আসি বন, মনে-মনে ঘুরি-ফিরি গণিকার স্বামীর সহিত —তখন পথের মর্মে ধু-ধু চিরলতা
হঠাৎ-হঠাৎ শুধু মনে পড়ে ধ্যানী বৃক্ষমুখ, তমাল গাছের মর্ম মিশে থাকে অলখের নির্জনতা ঘিরে
মুক্তি
বাধ্যতালিকার বাইরে এসে পৃথিবী তোমার প্রতি তাকানোর ইচ্ছে রয়ে গেছে, কিন্তু দেহ আজো ভিক্ষা চায়, সুধন বানিয়ার কথা রোজ-রোজ ভাবে, এবং অভ্যাসবশে যাত্রা করে প্রিয় রাধা-পুঞ্জির দিকে-সেই গ্রাম ছোটোমোটো, সেই গ্রাম সীমারেখা-বাঁধা
পৃথিবী তোমার প্রতি মন ছুটে যায়—প্রাণ ছুটে যায়। পথ-বাতাসের ছাঁটে ডাল ভাঙে— ঝরে পড়ে পাতা—পড়ে যায় হস্ত-পদ, ধীরে-ধীরে ঝরে পড়ে নখ ও আঙুল
পৃথিবী তোমার প্রতি আনচান করতে থাকে আমার পরান…
বাগান
‘মালির আঙুল কাটা’, এই তথ্যে ভরা ওই জীর্ণপত্র-জাল। গাছের মাঝারে আরও শাদাবর্ণ সাপ। পায়ের আঙুল ঘিরে—টখ্নো আর জঙ্ঘা ঘিরে সেই সাপ কোনোদিন বেয়েছে শুনিনি, তবু কে যে ঠুকরে-ছিবড়ে নিয়ে গেছে, কেউ তা জানে না
তবু কেটে, খেয়ে পালিয়েছে—এই কথা সর্বত্র প্রচার : এই বার্তা সম-অর্থে বেহুলাবয়ান
ব্যঘ্রকাল
বাঘও নীরবে আসে, ধীরে ও নির্জনে—রাতের মোকামে-মাজার-প্রণামে; তবু শুনি পথে-পড়া ছায়াটি গর্জায়—এই তথ্যে চারদিকে ভীতিকর চাপা গুঞ্জরন
মুখ বুজে, জেগে-জেগে সবাই ঘুমায়!
…