কোথাও বৃষ্টিনামুক । রওশন হাসান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ৯:২৯ অপরাহ্ণ, | ২৪৩ বার পঠিত
সমবেত প্রার্থনা
ভাবনাগুলো আমার মনকে বিক্ষিপ্ত করে রাখে
দিন-রাতের ক্রমাগত আবর্তনে
আমরা কি সত্যিই নিজেকে মানুষ ভাবি ?
পরন্তু আমরা শুধুমাত্র মানুষের আদল নিয়ে চলি lআমরা দেশ, অঞ্চল, যুদ্ধ সৃষ্টি করেছি
আমাদের অস্তিত্ব, জাতীয়তা, পরিচয়, নিয়ম, ব্যবস্থা, জয়-পরাজয় গঠন করেছি
আমরা সম্প্রদায়, ধর্ম, সংস্কৃতি, বর্ণবাদ, শ্রেনী, ঘৃণা নির্মাণ করেছি
আমরা কি বুঝতে পারি না যে আমরা মানবিকতা ভুলে বিভেদ তৈরি করেছি?
মহাদেশ, ধনী, দরিদ্র, সভ্যতা, ক্ষমতা, অবস্থান
এইসব অসমতা উদযাপন করে চলেছি ?
আমরা কি চিরতরে অনৈক্য নির্মূল করতে পারি না?
বদলে শান্তি, সান্ত্বনা এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করতে কি পারি?আমরা বিভক্তির গন্ডিতে বসবাস করছি
সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
আত্মার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
জীবনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
মানবিক ও অতিমানবিক হতে অব্যক্ত প্রার্থনা আমার
ওহ সৃষ্টিকর্তা ! মানবতার বিজয় রক্ষা করুন lদ্রষ্টব্য অপরাপর
এই সমবেত সন্ধ্যায় প্রাক-বাসন্তী হাওয়ায়
বৃক্ষরা বিসর্জনের শোকগীত গায়
অতর্কিত রঙে মৃদু কম্পিত হার্ডসন রিভার
দূরে ঝিমিয়ে পড়া দিন, চলন্ত ট্রেনের
মিলিয়ে যাওয়া শব্দ
পরিচ্ছেদের ঘ্রাণ, বিচ্ছেদের চাহনি কুয়াশায় ভেজা l
কোন অসমাপ্ত মুহূর্তে ভিন্ন আকাশের নীচে স্থগিত দৃষ্টি
গুমোট পতঙ্গ হয়ে উড়ে যায়— পলাতক ক্ষীণস্মৃতি
আমার অন্ত:স্থ প্রান পাঠ করে আনমনে
বিপন্ন পৃথিবীর দীর্ঘশ্বাস, মানুষশাস্ত্র
তুমি আমি মুখোমুখি সামাজিক ক্ষণকাল
ঘোলাটে বা স্বচ্ছতার প্রশ্নচিহ্নে বেঁচে থাকে—
সময়কে কত শত নামে ভাগ করে নেওয়া—
অনর্গল জিজ্ঞাসায় আর্তির পোড়া ছাই
পথের অন্ধকার অলি-গলিতে
কিছুক্ষণের মধ্যে
দেখা দেবে গলন্ত চাঁদ
আজ সপ্তাহান্তে অন্তরটান যদি জেগে থাকে—
একখন্ড জমাট জলে জন্ম হবে অবধারিত মনুষ্যত্বের lসান্নিধ্য
এই শীতার্ত হাওয়ায় নিস্বঃতা ছাড়া
কিছুই জীবন্ত নয়
বৃক্ষ, লতাগুল্ম, পাখি জড়সড়, অগোছালো বাগান
বুনো চাঁদ হন্যে হয়ে খোঁজে তারার উষ্ণতা
এ উদ্বৃত্ত দিনে আঁধার রাঙে সংঘাতে সংঘাতে lএ বিচলিত নিতান্ত নিজস্বতার নামহীন বিস্তীর্ণতায়
খুব শব্দহীন শূন্যতার ভাঁজ খুলে খুলে ভেসে চলেছি শীতল খড়কুটোর মত
ব্যক্তিগত দূরত্বে আমরা চেয়ে আছি চোখে চোখে
চেনা পারফিউমের সুবাস, বাহুর বিন্যাস
বিঁধছে যেন ছুরির মত
ভেতরটা ফাঁকা গহবর, বিধ্বস্ত স্মৃতির স্পন্দনে জ্বলে লাল-নীল বাতি
অথচ আমি একা উদ্ধত ফিরে ফিরে চাই
মগ্ন, সংগোপন ভাষার ক্ষতগুলোর মত
বিশীর্ণ আলোরেখায় ঘোরলাগা কন্ঠস্বর শুনে শুনে
ছায়াছন্ন পংক্তিতে টুকরো টুকরো ঈর্ষা কুড়াতে চাই lকোথাও বৃষ্টি নামুক
সুর্য উত্তাপে গলে পড়ে নগর
জানালার শার্সিতে আগুন
বৃক্ষ উর্ধ্বমুখী আকাশের পানে
তৃষ্ণায় প্রাণ যায় বিহঙ্গ বধির
ক্লান্ত দূর্বা, নুইয়ে পড়া মৃত্তিকা ফুল
জল— প্রার্থনায় জানুক
অঝোর বৃষ্টি নামুক কোথাও lনিষিক্ত শয্যায় কাঁদে তপ্ত ঘর্মদেহ
দহনবেদনায় রক্তমাংস শরীর
ধিকিধিকি জ্বলে সঙ্গী মুমুর্ষ চাঁদ
অধর ছুঁয়ে ঝরে যে জল
বিরহী রাতে অনর্গল
বিরাম উপশম চোখের পাতায় থামুক
অঝোর বৃষ্টি নামুক কোথাও lমরণভয়ে খরানদী সাগর সন্ধানে
অরণ্যের অলিগলি পথ
ছুটে চলে শিথিল পিপাসাঘোর
ভাসিয়ে প্লাবন জড়-জীব
প্রাচীন কাঠের গুঁড়ি, প্রত্নকুটির
মুষলধারায় আকাশ ভাঙুক
অঝোর বৃষ্টি নামুক কোথাও lনিঃশ্বাসে বারুদ, মরণাস্ত্রের দাবানল
ছিন্নভিন্ন বাড়িঘর, শবের সারি
প্রতিশোধ, ধ্বংসপ্রবণতার জয়ধ্বনি
ফাঁসির কাষ্ঠে মানবতা বিকোয়
শিশু-নারীর হাহাকার বিদারক
দগ্ধ, ভস্ম লেলিহান নেভে না
কোন মহাত্মা জাগুক
অঝোর বৃষ্টি নামুক কোথাও lস্পন্দন
আকাশের আছে প্রেম, প্রিয়তম মেঘ
পালকে পালকে রোদের অভিষেক
ফুলের আছে রুপ, গ্রীবা জড়ানো পাতাদের সংলাপে
অব্যক্ত কথারা জমে থাকে, আমার চোখে যেমন তোমার শব্দেরা কাঁপে lবৃক্ষের আছে ছায়া, সংগোপন মায়ার সংশ্লেষ
বিকেল নামায় সন্ধ্যা, রেখে যায় দিনের রেশ
এমন বর্ণীল দিনে ঘাসের পল্লবে অনুরাগ বিছিয়ে দাও
জলের দর্পণে নীল ভেসে চলে, মুগ্ধপ্রবণ আমাকে অমর করে দাও।…