নীরবতার ভাষা । হাবিবুর রহমান এনার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, | ৩৭৬ বার পঠিত
হর্ম্য
পুষ্প প্রস্ফুটিত হবার পূর্বে—
প্রতিটি কুঁড়ি— দৃষ্টি বুজে রয়,
নৈঃশব্দ্য একাকী— মনোহর—
পবনে দোলে দুদুল!
মাজা ভাঙা নিশির আলো,
ওই অন্ধ দিনের কালোতে;
মানিয়ে নেয় আপনাকে।
নিজেকে মেলে ধরার প্রর্থনায়
অতিশয় মত ও পথের বিরোধ,
সেও বিভাজন ছড়িয়ে দেয়।
একক নয়—
আসলে বিবিধ মত ও পথের,
পরস্পরের হৃদ্য গাঁথনি তৈরি
হোক; পরম সুখ-শান্তির হর্ম্য!
দৃশ্যাবলি
ঝলমলে প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে দেখো,
অন্ধকারের বেগ কখনও হারায় না।
অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থেকে উঠে এসেছি,
আগন্তুক হয়ে ছিলাম না কখনও।
দরজার চৌকাঠের অভ্যন্তরে প্রতিবিম্ব,
আর ঘাসের জন্ম… জনপথ।
নিরুপায়!
চেতনায় ফিরে কি আসে, একজীবনের ঘর;
হাল-গিরস্তি জীবন?
পলাতক হয়েছে শুধু মৃত্তিকার…মধুকর!
অপরাহ্ণ
সন্নিহিত চেতনার—গলিপথে গলাগলি করে আছে,
গমনের সূর্যরশ্মি এবঙ…
না বলা যতো অদ্যকার গল্পসল্প।
লিপিবদ্ধ পাথরে উপযুক্ত কারা চিহ্ন রেখেছে?
ভিন্ন কথা— তথাপি শুভ্র সত্য প্রকাশিত জলে;
জেনে যায় ভ্রমণ…পতনোন্মুখ অপরাহ্ণ!
শূন্যলোকে
শূন্যলোকে বোবা মনস্তাপের নীরব অনুভূতির মতো,
সকল ভাষা কেবল ধ্বনিতে প্রস্ফুটিত হয় না,
কিছু ভাষা ধ্বনিহীনতার প্রগাঢ়তায় জিয়ল থেকে যায়;
না বলা… অদৃশ্য দেহে।
অন্তরে… নিরুপম কথামালার কাতর ব্যঞ্জনার মতো,
আমার পরান পেতে… শ্রবণের অনবদ্য উদ্বিগ্নতার অভ্যন্তর!
স্বৈরতান্ত্রিক
আমাদের বাস্তবতাগুলো যাতনার নোনা জলে—
মুখগহ্বরে নির্যাস জমে,সেই নির্যাসের
বাস্তবতা;
সুদৃশ্যে প্রস্ফুটিত হয়!
অথচ দীর্ঘকাল ধরে আমরা স্বৈরতান্ত্রিক প্রথার দালাল।
স্বকীয় স্বার্থে আমরা বেড়ে উঠেছি,
তাই জাতীয় স্বার্থে… যত অসম্মতি।
ন্যায়-নীতির হিস্যা শুধু পুস্তকে লালনপালন হয়,
বৃহৎ হয়, বেড়ে ওঠে; তবুও বুকে…
শূন্যস্থান।
সময়ের দেহসন্ধি মোচনে… সতর্কতার ভান করি।
রাষ্ট্রযন্ত্রের আদ্যিকাল থেকেই আমাদের জমে
অভ্যন্তরিন অর্দ্রতা; ন্যায়-নীতির রৌদ্রে
উঁকি দিয়েও ফিরে যায়…
অক্ষাংশ অতিক্রমকালে সময়ের কানাগলিতে
আমাদের হতবাক হৃদয়!
পোষা বাঁদর
এ কেমন—পলকে ছিনিয়ে নিলে জলপূর্ণ গ্লাস?
তৃষ্ণায় বুকের জমিনে হাহাকার— পুড়ে পুড়ে ছাই—
ভস্ম হচ্ছি— ফুসফুসেও ঢুকে গেছে বেদনার ছাই!
তবুও কাইড়া নিলে বর্তন থেকে আহার্যদ্রব্য আর
গতরের মুণ্ডু হতে ছিন্ন বস্ত্র—ছেদা করে দিবি?
স্যাঁস্যাঁতে কাঁকরযুক্ত তৃণবিশেষ—পঁচন ধরা চাল,
সহসা ঝড়ো জলে সিক্ত বাজপাখির মতো…কাঁপি;
বুভুক্ষায় বলহীন গরু-বাছুরের মতো কাতরাই,
আর হাম্বা হাম্বা স্বরে ডাকি।
আমরা আমজনতা রাষ্ট্রযন্ত্রের কূটকৌশলে পোষা—
বাঁদর…
আর কতো রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুরতার চাকায় পিষ্ট হবো,
বলে যাও ওহো প্রজাপতি; চিন্তা চেতনার চাপাবুকে—
ঘৃণাভরে বর্জন করেছি তোমাকে—ওলো লাস্যময়ী!
স্নেহার্দ্র শৈশব
অন্তরীক্ষে উড়ে যাও সফেদ সারস
জলধর অঝোর ধারায় ঝরে বিগত
নীলিমার হৃদয় ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
মেঠোপথে ছড়ানো-ছিটানো বিচালি,
নীরবতায় বিধবা শস্য।
আমাকে নির্মমতায় হত্যা করে— সময়
হাসুক; হাসুক আরেকটি অবরোধ।
কথা হবে— নিরিবিলি… নদীদের সাথে,
প্রিয় নদীরা ফিরে পাক স্নেহার্দ্র শৈশব!
বিযুক্ত
সুচিন্তিত তনুরুহের বিনাশ, রমরমা রক্ত খুনের হাট,
সারি সারি লাশ; ভীষণ স্তম্ভিত স্বয়ং যমের অনুচর!
বিযুক্ত যতো সব উপলব্ধি, জন্মজন্মান্তরের ক্ষত—
পোঁছে না কখনও মালিন্য; হৃদমাজারে রহে অক্ষত!
কৃত্রিম মুখাবরণ— বহুবর্ণময় মানুষ,
বড়ই রহস্যময়,
বিস্মৃত চোখজুড়ে বিস্মৃত দ্যাখা; হৃদয় শুধু অনৈক্য।
ডারাইও না ও প্রস্ফুটিত কৃষ্ণকলি,
ক্যানো লক্ষ্যহীন,
নেবো না অমিতব্যয়ী; রক্ত ঝরা হরিৎ শস্যপূর্ণ।
স্বচ্ছন্দ্যের প্রহেলিকাস্নাত নিশি—
হৃদয় কাঁপানো ওপরে ওঠার সিঁড়ি আর প্রজাপতি
ও ঘাস-ফড়িঙের অবশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর!
নীরবতার ভাষা
দেহ হতে —রয়ে রয়ে হাস্নুহেনার ঘ্রাণ ঝরছে,
আচানক পুরনো দয়িতার ছদ্মবেশী এলেও,
আমি ভুলে যাই; শীত এবঙ রমণীর তফাৎ।
চন্দ্র সেতো,দূর গগণেই অতি রূপবান দেখায়,
অনুভূতিতে —পড়ে নিও হিসেবের হালখাতা;
আর আবেগস্নাত… নীরবতার ভাষা!
মহেশ্বর বিভাবসু তার আলো… আমারে
বড় বেশি টান!
সময় থাকলে চলো, দু’জনে হাঁটতে যেতে পারি;
দেখব যতো পৃথিবীর কোলাহল।
বুর্জোয়া রঙ
রঙের নেই কোন মুখ, তবু মুখে মুখে মোহ,
চোখে স্থীতু —পাল্টে যায় আপন রঙ।
হরিৎ প্রণয়ে —কেউবা অঙ্কন করে রাঙাপদ্ম,
বিকল্প —স্বর্ণেমুড়া মুখ।
পাল্টায় সূর্যের রঙ এবঙ পল্টায় —জীবনের রঙ।
মাথার উপর নীলের ছড়াছড়ি,হৃদয়ে নীল —পাহাড়;
এতো রঙের মাঝে কালোটিই বেশি।
মানুষের আস্থা স্পর্শে দেখি, বিনাশ ও বিন্যস্ত
বুর্জোয়া রঙ।
বর্ণিল গগজের বাইরে,অগন্য নিগৃহীত মানুষ;
দিনযাপনের বুকে —ফ্যাকাসে চোখ!