দোস্ত সিরিজ ও গুজব । স্বপ্ন কুমার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, | ৪৭০ বার পঠিত
ধরো—০১
গুজব
ধরো,
ইস্কুলের পাস দিয়া হন্যে হইয়া ঘরে যাইবার সময়
কেউ একজন গুজব রটাইলো —
আমি নাকি ছেলে ধরা
আমার কাঁধে চটের ব্যাগ দেইখা
কেউ একজন গুজব রটাইলো যে
আমি হইলাম খুচকর
আর
আমার ব্যাগের ভিতর নাকি
বাচ্চাদের কল্লা আছে
ধরো,
কেউ আবার গুজব রটাইলো
আমি হইলাম ছিনতাইকারি,
আমি হইলাম পকেটমার
আবার কেউ হয়তো গুজব রটাইলো যে
আমি একজন ধর্ষক
ধরো,
এই সমস্ত গুজব শুইনা অনেক গুলা মানুষ
আমারে ঘিরিয়া ধরলো
যাদের চক্ষে কোনো রক্ত নাই
মাগার রক্তের পিপাসা আছে অনেক
ধরো
তারা কেউ-ই আমার নামটা জানতে চাইলো না
তারা জানতে চাইলো না যে
আমার ব্যাগে কি আছে
আমি কোথায় থাকি,
কি করি
আমার পরিবার আছে কি না
তা-ও তারা জানতে চাইলোনা
ধরো,
তারা সবাই আমারে গনহারে পিটাইতে শুরু করলো
ধরো
তারা আমারে লোহা দিয়া পিটাইলো
কাঠ দিয়া পিটাইলো
তারা আমারে শিকল দিয়া বান্ধিয়া পিটাইলো
তারা আমারে দড়ি দিয়া বান্ধিয়া পিটাইলো
মাগার
কেউ একজন আগাইয়া আসলোনা আমারে বাঁচাইতে
ধরো,
কেউ একজনে খোঁচাই খোঁচাই
আমার চোখ দুইটা তুইলা ফেললো
আবার
কেউ একজন কইলো
আমার নুনুটা কাইটা ফেলার জন্যে
আর সাথে সাথে
আমি টের পাইলাম
আমার তলপেটে ধারালো কিছু একটার পোছ
আমার দম বন্ধ হইয়া আসতেছিলো,
অথচ আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না
কিংবা হয়তো বলছিলাম
মাগার কেউ শুনছিলো না
কিউকি
সবাই তখন ব্যস্ত ছিল আমার রক্তাক্ত মুখের ছবি ফেইসবুকে লাইভ আর লোড দিতে
ফেইস বুকের ঐ সমস্ত ছবিতে একটু নজর দিলে দেখবেন
আমি যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলাম
তখন একজন পুলিশ
আমার অদুরে দাঁড়াইয়া কেমন আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁত খোঁচাইতেছিল
আর
আমার মরে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে
একজন বিজ্ঞ সাংবাদিক
আমার মুখের সামনে একটা মাইক্রোফন ধইরা
আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছিলো
আমার কপালটা এমনই খারাপ যে
আমি উনার একটা কথারও উত্তর দিতে পারি নাই
তবে কাজের কাজ একটা হইছে
উনি আমারে পুরা-ই ভাইরাল কইরা দিছেন
ধরো,
সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি সংবাদ পত্র
আমার রক্তমাখা মুখের ছবি ছাপলো
আমারে নিয়া টক শো হইলো টিভিতে
সমাজ বিজ্ঞানী—মনো বিজ্ঞানী
সরকারী দল——বিরোধীদল
নারীবাদী——পুরুষবাদী
সাহিত্যিক——দার্শনিক
কবি——বুদ্ধিজীবি সবাই
সবাই আমারে নিয়া যার যার মত কইরা
কথা কইলো
গোল টেবিল বৈঠক হইলো কিছু
কয়েক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠিত হইলো
একটা
ধরো,
এই ফাঁকে কিছু কিছু লোক
বলাবলি করতে লাগলো যে
এই সমস্ত গুজব-টুজব আসলে কিছু না
ফরমালিন,
শেয়ার বাজার,
খাদ্যে বিষ,
টাকা পাচার,
গুম-হত্যা-ধর্ষন
ইত্যাদী কুড়ি কুড়ি ইস্যু ঢাকতেই নাকি
এই গুজব ইস্যু তৈরি করা হইছে
আমারও ক্যান জানি মনে হইলো
এইটা হইলেও হইতে পারে
লেকিন,
আমি যে এই গুজব ইস্যুর বলি হইলাম
এইটার কি হইবে গো—মাননীয়?
ধরো—০২
ধরো, আবারও আমি
মাল খাইয়া
রিকসার চাকার মতন টাল হইয়া
ঘরে ফিরলাম
ধরো, আবারও তুমি
আমারে ঘরে ঢুকতে দিলা না
ধরো,
আবারও তুমি সেই পুরানা ডায়লগ মাইরা বললা—
‘যেখানে গু খাইছো সেইখানে গিয়া ঘুমাও…এই ঘরে তোমার কোনো জায়গা নাই কইলাম’
আর তা শুইনা; আমিও ধরো,
ঘুমভরা গলায় তোমারে বল্লাম—
‘বেইবি এইটা করেনা বেইবি…
বেইবি আমি না তোমার জান,
তুমিনা আমার লক্ষী সোনা…
আর জান যদি বাইরে থাকে তাইলে
তুমি বাঁচবা কেম্নে বেইবি’
‘ঘরে ঢুকতে পারবা, মাগার বিছানায় কোনো জায়গা হইবো না’ বইলা—
ধরো,
শেষমেষ তুমি আমারে ঘরে ঢুকতে দিলা
ধরো,
ঘরে ঢোকার সুযোগ পাইয়া আমিও কোনোমতে
বিছানায় যাওয়ার কোশিশ করতে লাগলাম
ধরো,
তোমার হাতে পায়ে ধইরা, কান্না-কাটি কইরা শেষতক বিছানা পর্যন্তও চইলা গেলাম
ধরো,
‘গায়ে গা না লাগা’র শর্তে
তুমিও আমারে বিছানায় ঠাঁই দিলা
তারপর ?
ধরো,
তারপর বাকিটা ইতিহাস
তো আমার প্রাণ প্রিয় শ্রোতা ও সুধি দর্শক মন্ডলি
আপনারাও কইলাম কুমারের এই লেখাটি পড়তে পড়তে সেই ইতিহাসের মামুলি একটা অংশ হইয়া গেলেন
তো এইবার
বাকিটা আপনারা নিজের মতো কইরা ধইরা লন…
দোস্ত সিরিজ
আমার ভার্জিন দোস্তটা মক্তবে যায়
শনিবার আমার ঘুমের দিন
শনিবারে আমি লম্বা ঘুমাই
বাট, দোস্তের যন্ত্রনায় ইদানীং তাও পারতেছিনা
খুব সকালে একটা লোক এসে দরজা ধাক্কায়—দোস্তের নাম ধইরা ডাকে—
‘উজ্বল উঠো…উজ্বল উঠো…’
‘আইতাছি হুজুর’— বইলা দোস্ত আবার ঘুমায়
আমার ঘুম ভাঙ্গে—
আর আমি ঝাইড়া একটা গাইল দেই দোস্তরে
দোস্ত তবুও কিচ্ছু কয় না
অনেকক্ষন পর দোস্ত কম্বলের নিচ থাইকা বাহির