একগুচ্ছ কবিতা । বদরুজ্জামান আলমগীর
প্রকাশিত হয়েছে : 08 July 2022, 9:47 am, | ৪৯৩ বার পঠিত

একটি সুরের রেসিপি
কালো রঙের একটি সবুজ গাড়ি
কালো,অন্তর্লোকে সবুজ— দুই মিলে সহমরণের রঙ।
সকালে রাস্তায় বেরুবার মুখেই স্টপ সাইন—
আগে থেকেই জানা ছিল বাঁয়ে যাবে
গাড়ি বাঁয়ে মোড় নেয়;
একব্লক পরেই মূল রাস্তায় এসে নামে।রাস্তা বড়সড়, রাস্তা মার্টিন লুথার কিং
রাস্তা লাল সবুজ ও হলুদ বাতি
রাস্তা আই হেভ এ ড্রিম!সবাই তো যায়, সব গাড়ি ছোটে
কালোরঙ সবুজ গাড়ি রাস্তার পাশে থামে,
৭৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তার বুঝি স্যুয়েটার লাগে!যাবার গন্তব্য ভুলে গ্যাছে না-কী!
ইউরেকা, ইউরেকা! কথা ছিল ঝিলপাড়ে যাবার
চোখের ভিতর স্টিফেন হকিং ছিল
আপেল বাড়ি পাবার— হুড়মুড় মাড়িয়ে যায়
লাল বাতিসব— পুলিশের নিষেধ- ভয়াল বাতি!এতো আলো, নির্লিপ্ত মাকাল ফল—
রামদা’র তীক্ষ্ণতায় সুনসান বধির প্রাসাদ, তার পা ঘেঁষে
কতো লম্বা সড়ক,বাঈজির কোমরের বিছা শুকিয়ে যাওয়া সর্পিল বুড়িগঙ্গা নদী!এপাশে ভ্যাম্পায়ার ওদিকে ড্রাকুলা
তাদের পাশ ঘেঁষে উপকথার খানে দজ্জাল!জলদি যায়, জরুরি হাঁকায়— সময় তো নাই আর ভাইরে; কৃষ্ণবর্ণ সবুজ গাড়ি হর্ণ বাজায়,
পাথর, পাথর অদৃশ্য পাথর— সরে না,
অদৃশ্য মনিব, মালিক, লর্ড— না সাদা, না কালো
না বাদামী, না নারী না পুরুষ!সরে না।
গাড়ি মেইনটেনেন্স সাইন দেখায়!
ফলে রাস্তা ছেড়ে উইপিং উইলোর নিচে এসে থামে।
কেউ তো গাছে ঝাঁকি দেয় নি—
তা-ও মনে হয়, বোশেখ মাসে বুঝি জামগাছ থেকে
টপাটপ পাকা জাম পড়ে, জাম পড়ে বুঝি!
কিন্তু না, আসলে পড়ে উইলোর স্নেহ থেকে জল
জল,জল— টুপটাপ জলের ফোঁটা পড়ে!নানুর হাতে বোনা স্যুয়েটারের নিচে
সময় কীভাবে এমন একচক্ষু দানব হলো?কালোরঙ সবুজ গাড়ির ভিতর একটি মানুষ—
সে দানবকে দেখে না; দানব তাকে, তাহাকে, তাদের
সবাইকে দ্যাখে!দেখা হোক, দেখা হোক,
অদৃশ্য, ভার্চুয়াল যা কিছু হোক— একটা দানবের
সাথে তবু দেখা হোক।কালো গাড়ি, ধুলাপড়া ক্লান্ত বাহন এক
বড় সড়কে এসে পড়ে—
যেতে হবে দূর দানবের মুখোমুখি
সামনে খাড়া মার্সিডিজ, লেম্বারঘিনি—কালোরঙ সবুজ আটপৌরে একটি গাড়ি,
স্নেহের আমপাতা: একটি ভাটিয়ালি,
হেলানো ভাওয়াইয়া গানের সুরের রেসিপি হাতে
অদৃশ্য দানবের সামনে দাঁড়াবে—আই গডা গো, ফাকিং মুভ বিচ!
আয়ুর পরাবাস্তব
জালে উঠে আসে গুগলি, শামুকের বদলে
স্মৃতি হরিণের দুরঙা শিং, উঠে আসে ধুন
রাগ মিরু বিহাগ— মাঝরাতের দোলানো পর্দা।বুক ও অন্তরীক্ষের মাঝপথে জেগে থাকে গ্যালাক্সি
কোটি নক্ষত্রের আলপথে ফোটে কথার দানা
কথারা ক্রিসেনথিমামের চারপাশে কল্লোলিত নীরবতা।কথারা বুঝি শেষ হয়ে এসেছিল ফুরিয়ে যাওয়া বীজধানের সাথে।
লক্ষ্মীপেঁচা নিরাশায় ঠোঁট গুঁজে বসেছিল শ্যাওলাপড়া কিশোরীর অশীতিপর বোধে।
ভৈরবী ভৈরবী— প্রথম অঙ্কুরোদ্গমে ফেটে পড়ে
মন্দিরে সচকিত পেয়ারা দিনের ঘ্রাণ!বালুর পাহাড় বেয়ে পুঁই লতা সঞ্চারীতে মেশে।
মাথার উপর নিমপাতার ভেষজ মর্মরধ্বনি; কিশোরী আমোনকর— দুঃখজাগানিয়া আনন্দমর্মর, সামসাদ বেগম, কী হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, গাঙ্গুবাই হেঙ্গল, কী ইয়াহুদি মেনুহিন;
সব সঙ্গীত যায় থামিয়া— অবসাদে নুয়ে পড়ে, পেঁচাদের সাথে বালুর ধসে মুখ ঘষে প্রাণ আর চোখের পানচিনি;
বিস্রস্ত জলের তোড়ে আহা ভেসে যায় তারাদের আম্রমুকুল!আকস্মিক কথারা তোমার— মধু প্রজাপতি
উড়েউড়ে বসে যাদুর হুডিনী এক— মৃতে আনে প্রাণ।যেই তুমি কথা বলে ওঠো— বৃষ্টির পয়ারে তুমি
কথা বলে ওঠো— কথারা ঝাঁকে ঝাঁক তোমাকে বলে ওঠে ;তোমার কথাদের পুণ্যে মৃতবৎ গাছের গোড়ায় ছলকে ছলকে বৃষ্টির জল এসে পড়ে,
আর এ-কেমন এক মোচড়ে আমার আয়ু বেড়ে যায়!তামাদি ভ্রমর
একটি বনসাই বৃক্ষের দিকে চাইলে
প্রথমেই খুঁজি দয়াবতী জননী কি আছো
অথবা ধারেকাছে হৃৎকমল রাধিকা আমার?আমাকে এক গ্লাস জল দাও!
এতোগুলো আমি— একজন আমি বনসাই দেখি
কেন বটবৃক্ষ বুঝি সব কাটা পড়ে গ্যাছে,
কবন্ধ প্রেমিকের সাথে শুয়ে পড়েছে নাকি রেইনট্রির গাছ?হরিণেরা জমা হয় এসে খালি আকাশের নিচে
ছায়া ছায়া মিলে যায় পাতাদের ক্লাব
ইতিহাস মুখ দেখে উটের গ্রীবায়
খুঁজে দেখো স্মৃতিকলে শকুন্তলা বন।এযে আমি— বনসাই, কালের তামাদি ভ্রমর
টেনে ধরো পাতা কেটে ডালের দীঘল
চোখের একোরিয়ামে সেঁটে দাও ক্ষরিত স্বনন
হৃৎকম্পনের আয়নায় নির্ঘুম তারা।পিপাসা, পিপাসা এমন ইতিহাসের কাটা তরমুজ
কে দিয়েছে কেটে আমার তিরতির মোরগের ঝুটি
জন্মের ভিতরে কেউ কি আছো রাধিকা আমার?আমাকে এক গ্লাস জল দাও!
…