নিজেকে ভাঙার শব্দ । আহমদ সায়েম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:১০ অপরাহ্ণ, | ১১৪১ বার পঠিত
‘কে যে কারে ধ্বংস করে—হিংসার এ গাঙে,
কূল ভাঙতে গিয়ে ঢেউ, নিজে আগে ভাঙে।’
এমন অনেক অনেক শব্দ দিয়ে তিনি নিজেকে ভাঙেন, আর স্থান করে নেন পাঠকের মন ও মননে। তিনি আমাদের কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ। প্রিয়জন অসুস্থ শুনলে খারাপ লাগে, উনার সাথে দেখা হয়নি কখনো, মেসেঞ্জারে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে, এর বেশি নয়। কিন্তু তার অসুস্থতার সংবাদটি ভীষণভাবে আক্রান্ত করেছে আমাকে, এই সত্যিটি আবারো সামনে এনেছে যে প্রকৃতির কাছে আমরা এখনো কতোটা অসহায়, মানুষকে বারবার প্রকৃতির ছায়ায় ফিরে আসতে হয়, তার শাসনে, মানতে হয় তার ভালোবাসাও। ইমতিয়াজও প্রকৃতির ভালোবাসায় ফিরবেন, আমরা তার কবিতায়, ভাবনায় নিজেকে দেখতে পারব এমনই আশা করছি। তার কবিতা সেই বার্তাটি দেয় আমাদের…
“অনেক যুদ্ধের পর, একটি ভোর আসে সান্ত্বনার মতো, তুমি যাকে আলো বলো— সূর্য তাকে বলে তার ক্ষত।”
তার কবিতাগুলো যেনো স্থান করে নিয়েছে মননের বিন্দু-বিসর্গে। ‘আমি এমন ঘামছি, তবু, তুমি যাচ্ছ জানলা দিতে, আমাদের বাস একই ফ্ল্যাটে– ভিন্ন দুটি শতাব্দীতে।’ কবিতা বুঝিয়ে দিতে হয় না, বুঝিয়ে বলাও যায় না; কিন্তু কবিতা আমাদের নিয়ে যায় অনুভবের গভীর থেকে গভীরে । ইমতিয়াজ মানুষ হিসেবে কেমন তা নিশ্চ্য় পাঠকের কাছে অতটা গুরুত্ব বহন করে না, যতটা তার কবিসত্ত্বা বহন করে, যেকোনো সৃজনশীল মানুষের জন্যই তা সমানভাবে সত্য । অভিনেতাকে পাওয়া যায় তার অভিনয়ে আর একজন লেখককে তার লেখাতেই পাওয়া যায়। দেখা হলে হয়ত ভালো লাগা কাজ করে কিন্তু সত্যিকারের মানুষকে পাওয়া যায় তার কর্মে। আমাদের বাস একটা আকাশের নিচে অথচ আলোয় অন্ধকার খেলা করে সময়ের নিয়মে, দিনের আলোয় ফোন পেলে শুনা যায় রাতের শব্দ, খিট-খিট, ঝি-ঝি পোকার আপন করা শব্দ। এমন আপনকিছু শব্দের কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ, তাঁর কিছু কবিতা রাশপ্রিন্ট পাঠকদের জন্য তুলে রাখলাম।
#
তোমার দিকে যাই
চোখের সামনে পুড়ছে আমার ডানা
তীরন্দাজের তীরগুলো তাক করা
তবুও তোমাকে বলছি দূরের পাখি
আমার এখনো উড়তে অনেক বাকি. কবিপুত্র
. মাকে টোকিও শহরটা কিনে দিতে ইচ্ছে হয়
. কত খরচ পড়বে কে জানে
. জিনিসপত্রের যা দাম!
. এক পোয়া রসুনের দাম কুড়ি টাকা।
. বিশ্বাস হয়!
. বাবা রাগ করে বাজারে যান না।
. তার বয়স বাড়ছে
. শরীরও খারাপ হচ্ছে
. বোম্বে গিয়ে
. একবার চেক-আপ করাতে পারলে হতো।
. বোম্বে যেতে কত লাগে
. কে জানে!
. আমার তো টাকা নাই কাগজ কেনার
. তবু বাতাসে লিখে ফেলি,
. ‘বাবা যেন একশ বছর বাঁচে।’একদিন
একদিন সব অবহেলা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেব। সব দাঁড়িয়ে থাকা।
চেয়ার থাকতেও বসতে না বলা- ফিরিয়ে দেব। ঐদিন আমিও খুব
ভ্রু কুঁচকে তাকাব। এমন ভাব দেখাব যে কোন কথাই শুনছি
না। যেন আমার সময় নাই। আমি এসকল ব্যস্ততা ফিরিয়ে দেব।
সব অবহেলা দ্বিগুণ করে। একদিন আর কোথাও যাব না। আমার
কবরের পাশ দিয়ে তুমি হেঁটে যাবে ঠিকই। আমি ফিরেও তাকাবনা।. স্বপ্ন
. মা এত কম
. উপকরণ নিয়ে
. স্বপ্ন দেখেন যে
. অবাক হতে হয়।
. তিনি দেখেন
. সবুজ মাঠ ও
. সবুজ ঘাস।
. ঘাসের মধ্যে
. দৌড়ে বেড়ায়
. এগারটা হাঁস।
. এরপর দেখা যায়
. একটা করাতকল।
. যেটা পার হতে গিয়ে
. হাঁসগুলোর গলা কাটা পড়ে
. মা হাঁসগুলোর নাম ধরে ডাকা
. শুরু করেন। মা আমার নাম ধরে ডাকতে থাকেন।
. আমি তার কন্ঠের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে স্বপ্নের মধ্যে
. ঢুকে পড়ি। এত কম উপকরণ নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন। তিনি
. দেখেন সবুজ মাঠ– আমি সেই মাঠের মধ্যে চলে এসেছি
. সবুজ ঘাস– আমি সেই ঘাসের নিচে আটকা পড়েছি
. মা আমার নাম ধরে ডাকেন, আমি বের হতে পারি না
. আমি আর বের হতে পারি না
. বুকের মধ্যে দৌড়ে বেড়ায়
. গলাকাটা হাঁস।সম্পর্ক
আমার বাবাকে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছি।
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কীইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!কালো কৌতুক/২০১৭
আপন মাহমুদের মৃত্যু
আপন মাহমুদ ঐ অর্থে আমার আপন কেউ ছিলো না। তার সাথে আমার ৪/৫ বার দেখা হয়েছে। তারপর সে মারা গেছে। আপন ভালো কবিতা লিখতো। তার মৃত্যুর পর কবিমহলে খুব শোরগোল হয়। আমার প্রথম মন খারাপ হয়েছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি ঐদিন খুব ভালোভাবে অফিস করেছি। টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেছি।
রাতের সংবাদের সময় এক মন্ত্রীকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম। তখন আপন মাহমুদ বললো, ইমতিয়াজ, আমি মারা গেছি আর আপনি হাসতেছেন! আমি হাসি বন্ধ করলাম। আমি হাসি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম। আপন বললো, কবরের ভেতর খুব গরম। ইমতিয়াজ এখানে কোন বাতাস নাই। ঘুম আসে না। আমি বুঝতে পারলাম এক বন্ধুর মৃত্যুতে আমি সামান্য ঘোরগ্রস্থ হয়েছি। আপন বললো, পরশু আপনার একটা কবিতা আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে এসেছিলাম। দেখেছেন? আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোরে তাকে নিয়ে একটা গদ্য লিখতে বসলাম। ‘আমি মারা গেছি আর আপনি আমার মৃত্যু নিয়াও ব্যবসা শুরু করছেন!’ আমি আপন মাহমুদকে সাথে নিয়ে অফিস করলাম। আপন বললো, কবরে এত নিঃসঙ্গ লাগে। এমন নিঃসঙ্গ! সন্ধ্যায় তরুণ কবিকে নিয়ে একটা স্মরণ সভা ছিলো। আমি যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিলাম। আমাকে আটকে দিলো!
সবাই যখন শোক করছে। স্মৃতিচারণ করছে। অনেক অনেক সভা করছে। আমি তখন আপন মাহমুদের কবরটা কাঁধে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি।ঈদ
আমার কোন ঈদ নাই। এগার বছর আগে নামাজ পড়তে যাবার সময় আমার ঈদ চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐদিন সবার মতো পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। বাড়তি বলতে হাতে একটা তসবিহ ছিলো। ঐ তসবিহ’র দিকে মন দিতে গিয়ে কোন ফাঁকে ঈদ হারিয়ে ফেলেছি টের পাই নাই। থানা পুলিশ করার মতো সঙ্গতি বাবার ছিলো না। তিনি বলেছিলেন মন খারাপ করিস না। সবার ঈদ থাকে না। এর চেয়ে আমার ঈদটা তুই নিয়ে নে। আমি বললাম আপনি ঈদ কোথায় পাবেন? আমি তো শুনেছি দাদা বেঁচে থাকতেই আপনার ঈদ হারিয়ে গেছে। বাবা অপরাধীর মতো বললেন তা ঠিক আছে, তবে তোর মায়ের ঈদটা আমি চুরি করে রেখেছি!
রুচি
সাত বছর বয়সে একটা সাইক্লোন খেয়ে আমি বিখ্যাত হয়েছিলাম।
কয়েক বছরের মধ্যে দুর্যোগ খাওয়ার বিষয়ে আমার সুনাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
কোথাও কোনো বন্যা, টর্নেডো, দাবদাহ বা
দুর্ভিক্ষ হলে আমার ডাক পড়ত। আমি খেয়ে আসতাম।
.
এরপর পৃথিবীতে একদিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। তাইপে বা কুয়েত থেকে এটা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইওরোপের সম্মান রাখার জন্য শেষমুহূর্তে আংকারা থেকে শুরু হয়।
এবার আর কেউ আমাকে ডাকে না…।
.
তবু কী মনে করে যেন সুলতানী আমলের এক সড়কে বসে আমি বিশ্বযুদ্ধটা খেয়ে ফেলি।
আর
তুমুল
আক্রোশের মুখোমুখি হই।
.
উত্তর সন্দেহ করল পুবের স্বার্থ
রক্ষায় আমি এই কাজ করেছি।
পুব ভাবল পশ্চিমের। আর পশ্চিম ভাবল দক্ষিণের।
দক্ষিণ কিছু ভাবেনি।
কেননা এ বিষয়ে তাদের
না ভাবার জন্য আগে থেকে প্রস্তাব পাশ করা ছিলো। তাদের ঢের মতানৈক্যের মধ্যেও তবু আমাকে হত্যা করার বিষয়ে তারা সবাই
একমত হলো।
প্রথমে তারা আমাকে বিদ্যুতের শক দিয়ে মারার
কথা ভেবেছিলো।
আমি বিদ্যুৎ খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে সেই
চিন্তা থেকে তারা সরে আসে।
আটলান্টিকে ডুবিয়ে মারার পরিকল্পনাও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে।
.
একবার ফাঁসিতে ঝোলানোর আলোচনাও হয়েছিল।
পরে তারা ভাবে ঐখানে নিলে
আমি মঞ্চসহ ফাঁসি খেয়ে ফেলতে পারি।
তারা আর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
তাদের উদ্বেগ দেখে আমি হাসি।
গরুর দল জানে না,
একটা বিশ্বযুদ্ধ খেয়ে ফেলার পর মানুষের আর খাবার রুচি থাকে না!হাইকু
নিঃসঙ্গ এক পথ
অপেক্ষা করে আছে
এক জোড়া পায়ের।যদি
যদি চুরির অভিযোগে এক দুপুরে তোমার চাকরি চলে যায় আর তার পরদিন
হাতে পাও তোমার বউয়ের ডিভোর্স লেটার। পত্রটা পুরো পড়ার আগেই
শোনো মাদক হাতে ধরা পড়েছে তোমার ছেলে। আর তোমার মেয়ের গোপন
ভিডিও ছড়ায়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্তর্জালে। যদি তুমি রেললাইনে মরতে
যাও আর রেলগাড়ি তোমার মাথা কাটার বদলে পা দুটো কেটে ফেলে।
যদি লোকজন তোমাকে ধরে শোয়ায়ে রাখে পঙ্গু হাসপাতালে। যদি চোখ
খুলে তুমি দেখতে পাও তোমাকে দেখতে এসেছে তোমার
বউ/ছেলে/মেয়ে। যদি তারা পেয়ারা নিয়ে আসে। যদি সবুজ সে পেয়ারা
পড়ে থাকে টেবিলের উপরে। তখন তুমি ভাবতে পারো, কী সুন্দর সবুজ
পেয়ারা! এমন জীবন কয়টা মানুষইবা পায়? যদি না পেয়ারার অর্ধেকটা
তোমার আগেই ক্ষুধার্ত কোন ইঁদুর খেয়ে যায়!
২০১৫নিঃসঙ্গতা
আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির
মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন
জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে
একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলোবিচ্ছেদের পর
তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে আমাদের বনিবনা হতো না। আমাকে
তুমি একদম সহ্য করতে পারতে না। আমি তোমাকে দেখতে পারতাম
না। আমাদের খুব দুর্দশা হতো। প্রতিবেশীদের উৎকণ্ঠা। নিজের ছায়া
দেখতেও তোমার ঘৃণা লাগতো…আমার সন্দেহ হতো…সব ছেড়েছুড়ে দূরে
কোথাও পালিয়ে যাওয়ার কথা বলতে…আমি হত্যা করার কথা ভাবতাম,
তুমি কেবল আমাকে দোষারোপ করতে … আমি আমার নিয়তিকে,
আমার মন বিষাক্ত হয়ে উঠত…তোমার জিহ্বা সাপ হয়ে আমাকে
ছোবল মারত …আমাদের চোখ আগুন হয়ে পরস্পরকে জ্বালিয়ে দিতো,
সব ছাই হতো …সব নরক হতো,
এমন একটা নরকের জন্য আমি কাঁদছি।
.
মানুষ দেখতে কেমন, ২০১০সমুদ্র
সমুদ্র নির্মাণ করতে হলে প্রচুর পানির দরকার হয়ে পড়ে।
লবণ মেশানো পানি। আর এরসাথে কম হলেও আড়াইশ
প্রজাতির মাছ এবং সাতশ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ লাগবে।
নানারকম খনিজ, ডুবন্ত পাহাড়, ভূমিকম্প আর কয়েকটা
জলদানব। এরপর এগুলোকে পরিমাণমতো মেশাতে হবে।
এগুলোকে মেশানোর সঠিক অনুপাত জানলে আপনি এখানে
ওখানে হাঁটতে হাঁটতে, বাজার অথবা অফিসে, না হয় ঘরে
বসে ডাল দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে আপনার পছন্দমতো
সমুদ্র তৈরি করতে পারবেন। অনেক গভীর। অনেক নীল।ক্ষুদ্রঋণ
তারা আমার কাছে কিস্তির টাকা চাইতে এলো। আমি তাদেরকে বললাম, মৃত মানুষের কোনো ঋণ থাকে না।
তারা বললো, কিন্তু তুমি তো এখনো মরো নাই। আমি তাদেরকে আমার ডেথ সার্টিফিকেট দেখালাম। তারা বললো, এমন সার্টিফিকেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
আমি তাদেরকে আমার শেষকৃত্যের ভিডিও দেখালাম। তারা বললো, ওরকম না মরেও বানানো যায়।
আমি মরিয়া হয়ে তাদেরকে আমার হাত কেটে দেখালাম যে, আমার শরীরে কোনো রক্ত নাই।
তারা বললো, রক্ত না থাকা কাউকে মৃত প্রমাণ করে না। রক্ত না থাকা প্রমাণ করে, সে বেঁচে আছে এবং আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।
গন্দমফুল, ২০১৯#
খারাপ মানুষদের প্রায় প্রত্যেককে আমি এড়িয়ে চলি। শুধু নিজেকে এড়াতে পারি না।
#
বৃষ্টির একটি ফোঁটার সাথে অপর একটি ফোঁটার যখন দেখা হলো, তখন তারা দু’জনেই মাটিতে।
#
ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু হতে পারে ভেবে মানুষ তার বর্তমানকে উপেক্ষা করে। ফলে তার সেরা সময় পড়ে থাকে অতীতে।
#
সরলতা মানুষকে অনেক সুবিধা দেয়, তবু সুবিধার কাছে গিয়ে মানুষ একদিন সরলতা হারায়।
#
“কোনো বিষয়ে কম জানলে অনেক কিছু বলা যায়, কিন্তু বেশি জানলে আর কিছুই বলা যায় না।”
#
কেয়ামতের মুহূর্তে জন্ম নেয়া শিশু,
চোখ মেলে দেখে, পৃথিবী আর নাই।
#
‘একটা বাছুরের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গরু হয়ে ওঠা।’
#
লোকজন কী ভাববে তা নিয়ে অহেতুক ভাববেন না। আপনাকে নিয়ে ভাবার সময় কারো নাই।#
আমরা যতবার নানাবাড়ি যেতাম, ততবারই নানী আমাদের রাজহাঁস খাওয়াতেন। ফেরার সময় তিনি হেঁটে হেঁটে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দিতেন। আর শেষমুহূর্তে বলতেন, “পরেরবার তোমরা আমারে আর পাবা না।”
.
কিন্তু প্রত্যেক পরেরবারই নানাবাড়ি গিয়ে আমরা তাকে পেতাম। তিনি আমাদের ফের রাজহাঁস খাওয়াতেন। আর ফেরার সময় হেঁটে হেঁটে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দিতেন। একই ভুল প্রফেসি আবার একই ভঙ্গিতে করতেন।
.
তারপর একদিন তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়। আমি তখন নওগাঁতে। অত দূর থেকে এসে তাঁর জানাজা পাওয়া যাবে না, জেনেও আমি রওয়ানা হয়েছিলাম।
.
পুরো পথেই মনে হচ্ছিলো, এবারও তিনি আমাদের রাজহাঁস খাওয়াবেন। ফেরার সময় হেঁটে হেঁটে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দেবেন। আর শেষমুহূর্তে বলবেন, “পরেরবার তোমরা আমারে আর পাবা না।”
১০/০২/২১সম্পর্ক
জীবনে হয়নি দেখা, তাও চিরকাল পাশাপাশি,
দুইটি কবর একই প্লটে— সেই সূত্রে প্রতিবেশী।. . .