পাতালসিংহী এবং আমিই শবে কদর । অমিত রেজা চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, | ৪৪১ বার পঠিত
অমৃতা, এক রহস্যময় ভাষা
পাল রাজার মেজো ছেলেটির সাথে
সেন রাজার ছোট মেয়েটির বিয়ে হলে কেমন হতো, ভাবি
প্রথমজন ছিলেন মাতৃসাধক, অন্যমনস্ক শরৎকাল,
নদীতে তলিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান গাইতেন
বান-ডাকা সেই নদীর তেজ ধনুকে, ডানায়
ফুটিয়ে তোলা রূপসী ছিলেন দ্বিতীয়জন!
স্বভাবে পরাক্রমশালী কিন্তু নিরামিষাশী, স্বয়ম্বরা
ইতিহাস বলছে,
এইসব নক্ষত্রস্বাক্ষরের নীচে আমি এক শূন্যতারক্ষক।
আর তুমি, ব্রহ্মাণ্ডের তাবৎ মৃৎ ডাকবাকশে জমে থাকা
অতীতের সর্বহারাদের আলোকগুচ্ছ টুকে আনা এক রাজদ্রোহী!
সতেরো শ সাতান্ন’র শূন্যতা পেরিয়ে
একটিবার অর্থবাজারের মিথ্যা থেকে আমায় বাঁচাবে না তুমি?
অনিবার্যকারণবশত
মুহুর্মুহু বজ্রপাত শানিয়েছ তার ধামে,
গোলকধাম কূলকধাম ইন্দ্রের জালে বাঁধা,
স্বপ্নজাল চন্দ্রজাল ছড়ানো দেহের যামে
পরিখা-ঘেরা চতুর্দিক, জলের ধারক রাধা
রাধার ঘরে মূর্তি ধ’রে বসে আছে কালকেতু,
পরিখা বিনে মরুআলেয়াদেহে গড়ে উঠে সেতু,
যথা আলোক বিনে পাতায় বসন্ত, ডার্করুমে!
অপুষ্পক উদ্ভিদেরও কিছু ঔষধিগুণ
থাকতে হয়, নিদেন কিছু বাহারী পাতা ও ধুন।
মুহুর্মুহু বজ্রপাত কুড়িয়েছ তার চুমে,
চুম্বনের ভিতর থেকে উঠে আসে কাটাজিভ
চুষে নিচ্ছে, যা! কসমিক চম্বুকক্ষেত্রের
মতো এ ঊনজীবন, ঊনঅক্ষধামের শিব—
আত্মভোলা হতে পারলে ভাল, নাহলে আখের
রস খেয়েও সারবে না গো জন্ডিস, সংসারে।
কূলকধামে মূর্তি গড়ে পালিয়েছে অভিসারে
সে কালকেতু, অনন্তের চিরশত্রু ও বীজ
বয়ে নিয়েছে দ্রাঘিমাংশে নিজেই নিজের দ্বিজ।
কতটুকু বা বৃষ্টি ফিরে আকাশে, নাভির কাছে?
তোমার আজও শত আয়নামৃত্যু পাওনা আছে।
শরীরে কোন অপাপ নেই পাপও নেই, কাঁদে মন
বৃন্দাবন সি-হর্সের মতন রক্তে গোত্তা
খেতে খেতে— কী জানে তাহার সুহাসিনী? যেই নোক্তা
খোয়া গেছে অ-প্রেমে তোমার আদি বাসনায়; ক্ষণ
দিয়ে কী করে গাঁথবে মালা নির্ঝরিণীর মতো?
সরল চাঁদ মধ্যযামে না উঠিয়ে ওগো ক্ষত!
পলাতকার চোখে সে এক উড়ন্ত ভস্মাধার
ইনফার্নো, বাষ্প থেকে এঁকো মুখ অস্মিতার
পাতালসিংহী
১
দুটো মহাকাশের মাঝে যে সৌরক্ষত,
দেখলাম, সেখানে দুটো বন্যশুয়োর এগিয়ে আসছে
বিশাল এক পানপাত্রের দিকে!
সেই গেলাসের মধ্যে এক নারীবাদী পোলভল্ট খেলোয়াড়
সমানে পার হতে চাইছে
মাতৃত্বকালীন সময়ে তার প্রেমিকের যৌন-প্যাথোস, দাম্পত্যের গৌরব!
২
সোনাটা হল অপমৃত্যুর ভুল ব্যাখ্যা—
এর আলায়ায় দাঁড়িয়ে কারা যেন বলে গেল,
এ মাধুকরী জীবন তবে কি পরিত্যক্ত বেসক্যাম্পে ছড়িয়ে থাকা
ব্যর্থ পর্বত-অভিযাত্রীর হাড়গোড়?
আমিই শবে কদর
শরীর ফেটে বেরিয়ে আসছে আলো
শরীর জুড়ে অযুত তারার ক্ষয়
ভাসছে পাতা, কুড়িয়ে নিলাম কুহর
খুঁড়ছে পাঁজর উন্মাদিনীর ভয়
লহর আমার ডানা থেকে ঝরে,
আমার প্রপোজ তবু পায় না কোরাস,
তীর্থপথে শুকনো খাবার, লিরিক
সঙ্গে রেখো, কুমির করো না চাষ
মনটি তোমার ভাসছে আমার শব—
কুয়োয় কাহার লাশ খোঁজে ডুবুরি?
মরুবার্তা ফুটিয়ে চোখের কোণে
পুড়ছো নিজেই, পুড়ছে আমার ঘুড়ি
হাওয়ায় হাওয়া ধরছে হাওয়ার মূর্তি
নিঃস্ব আমি, তোমার নূরের মাতম
ভাষামৃত ময়ূর বেশে নাচছি
তুমিই নাচছো আমায় করে খতম
তোমার কল্পতরুর পাতা ঝরে
নিযুত তৃষ্ণা, আয়াত হয়ে এ দেহে—
আয়াত, নূরে এ শরীর নিরঞ্জন
মৃদু হাসছে কেউ আমাদের বিদেহে
আমার হৃদয়, জিজেক-মৃত্যু, শঙ্খ
আর বুরবাক, বাঘগুহা বা অপ্রেম…
সবই পরম, ভেসে চলা পিদিম—
আমি বিষাদ যার, উন্মাদ সে হেম
সন্ধানী ফিরিয়ে দিলে
নদীর দু’পাশে দু’ভাবে রাত্রি নামে।
একপাশে রঘুবংশের শেষরাজা প্রেতযোনীর দিকে
রূপোর তরবারি ছুঁড়ে ঘুমিয়ে পড়েন
অন্যপাশে, অতিবেঁটে এক কুস্তিগির
অফ গ্রামাটোলজির ছেঁড়া পৃষ্ঠা থেকে সেই তরবারি কুড়িয়ে এনে
তাবৎ টেক্সট সেলাই করে হরিণগাছে ঝুলিয়ে দেন
নদীর দু’পাশে অনুরূপ দু’রকম সকাল হয়।
রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা ফুরিয়ে এলে
প্রতিটি মানুষকে ব্লাড ডোনার মনেহয়।