শহরের কিছু পুড়ে যাওয়া গলি ও চোরাবালি । শুক্লা মালাকার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ, | ৪৫৫ বার পঠিত

চলমান উদাসীনতা
সেই যে একবার দেখা হয়েছিল
নোংরা চাদরে মোড়া চলমান এক উদাসীনতার সঙ্গে
তবে থেকে সমুদ্দুর হয়ে আছি,
মাঝে মাঝে ডুবে যাই, শামুক ঝিনুক গিলে
মুক্তো তুলে আনি,
ঝকঝকে শূন্যতায় ভাবি
মুক্তোরেণু মেখে কসমোপলি
কাছের দূরের সীমারেখা ঠিক পেরিয়ে যাবে
গলে গলে নামিয়ে দেবে জমাটবাধা হিংস্রতা
জাদুদন্ডের মাথায় এলইডি বাল্ব জ্বালিয়ে
চোরাগোপ্তা অভিযান চালাবে ভাঙা-ভাঙা চারদেয়ালের দ্বীপে
ছিন্নভিন্ন করে উড়িয়ে দেবে যাপনের হত্যাদৃশ্য ,
রবোটিক গেরস্থালী…
এইসব ঝোড়ো অজুহাতে মন তেতে ওঠে
আর উদ্ভ্রান্তের মতো উদাসীনতা ডানা ছড়ায়
আমি খেই হারিয়ে ফেলি…
এখন দরকার গভীর ঘুম, এখন শুধু উন্নতির ল্যাম্পপোস্টে
লতা হয়ে জড়িয়ে থাকা, মোহময় আবর্তে ঘুরে ঘুর
বিদ্রোহহীন জেগে ওঠা।
শহরের কিছু পুড়ে যাওয়া গলি
সব শহরেই কিছু গলি থাকে যেখানে
পায়ের তলায় খলবল করে শুকনো
তাজা রঙিন ফুলের পাপড়ি
গোটা চরাচরে যখন ক্লান্তির ঘুম
গলি গুলোতে তখন আগুন জ্বলে
চাঁদ যেভাবে পুড়তে পুড়তে এগিয়ে যায়
অমাবস্যার দিকে,এখানে প্রতিরাতে বেঁচে থাকা
পুড়ে চলে জীবনের খোঁজে
জীবিত সকলের জন্যই মৃত্যু লেখা থাকে
এখানে সবাই চলমান শব
এই আগুন, গলি, জ্বলে যাওয়া পাপড়ির কাছে
কেবল আগমনী বিন্দুর মতো পবিত্রতা খোঁজে।
চোরাবালি
সবাই জেনে গেছি
রোজকার সরকারি খেলা
রকমারি প্রতিশ্রুতি
ভেঙে পড়া সমাজের গায়ে
নরম পেলব তারার চাদর
নীচে চোরাবালি গিলছে
গোছানো ঘর, সততা
উথলে ওঠা প্রতিবাদ
ঝুলে পড়া ব্রিজের ওপরে
ঘুঁটি সাজাচ্ছে যারা, তাদের
লক্ষ কোটির অঙ্কে চলমান কাঁকড়ার গতি
তোমারাও মুছে যাবে
দিনশেষের আয়নায় ভেসে উঠবে
তোমাদেরও লাশ।
মানচিত্র
নিমন্ত্রণ পেয়েছ তুমি আকাশের
উঁচু শিখরের ওপারে আর উঁচু শিখরের খোঁজে
ডানা মেলে পেরিয়ে চলেছ জরাগ্রস্ত বিকেল
পৌঁছতে চাইছ এমন একটা শহরে
যেখানে বিন্দু বিন্দু উচ্চাশা থেকে যখন তখন রক্ত ঝরে
যেখানে সবাই কেমন সহজে পাল্টি খেয়ে যায়
চার হাজার স্কোয়ারফুটের একটা এথনিক কটেজ
শ্যাপ্নেন হাতে তার গলিতে সুখ খুঁজে ফিরবে
দেখবে বদলে যাওয়া মানচিত্র বিষণ্ণ
সেখানে একপাশে তোমার গতজন্ম আঁকা
যে কোন সময় মনে পড়ে যাবে
মফস্বল থেকে শহর পায়চারী করেছিল যে দুটি পা
তারা বটগাছ হয়ে গেছে
তোমার সমস্ত আয়ুষ্কাল জুড়ে সেই বটের ছায়া।
ভাঙন
ভেঙেছ তুমি জড়িয়ে থাকা
আমিও ভেঙেছি কিছু
বৈশাখী রোদে পথ হেঁটে ভেঙেছি
অস্থির টান পিছু।
কিছু টুকরো সময় তোমার কাছে
কিছুটা আমার
দিব্যি কাটছে দিন, রঙিন
কেবল মৌনী রাতে দীর্ঘশ্বাসেরা বলে যায়
ভালোবাসা কতটা কঠিন।
ঝিরঝিরে দুপুর
একরাশ কাল মেঘ চিঁড়ে নেমে এল রুপোলী তার
শহরের হাওয়ায় চনমনে উত্তেজনা
পুরনো প্রেমের চিঠিরা নৌকো হবে বলে অপেক্ষায়
হাওয়ায় উড়তে থাকা শুকনো পাতা
দেখে মনে হয় ঝাঁপ দেবার জন্য প্রস্তুত
তুমুল বৃষ্টিতে হৃদয় খুঁজতে চেয়ে
কানাগলিতে আটকে পড়েছি
এই নির্জন ঝিরঝিরে দুপুরে প্রতিটা জলকণা
পেরিয়ে যাক কোন নতুন জানালা।