আজন্ম নাগরিক ও ব্রাত্যের রাতলিপি । সন্তর্পণ ভৌমিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৩:৫১ পূর্বাহ্ণ, | ৭১১ বার পঠিত

ব্রাত্যের রাতলিপি ০১
পৃথিবীতে আজ কেউ নেই
আছে শুধু ছায়া আর ছায়াময় কেউ
মরীচিকা স্ফীত হয়ে আজ
খর্ব করে দিয়ে গেছে জ্যা পরিধি…
পরিসীমা বৃত্তাকারে ছোট হয়ে এলে
খুব ভীত হয়ে পড়ে যতসব পাখি ও প্রাণী
নীরন্ধ্র আঁধারপ্রিয় শববাহী কেউ
জেগে উঠে অমাবস্যা রাতে
অসহ বিষন্নে তুমি জেগে রও সময় পেরিয়ে
শ্বাস আজ বন্ধ হলো হাজার পাহাড় সরিয়ে।
ব্রাত্যের রাতলিপি ০২
কি যেনো আসে রোজ, কি যেনো হয়
কি হলো আজ
আশায় আশায় সবাই…
একদিন ভোর হয়ে এলে
জল্পনা শুরু হলো রাষ্ট্রের আনাচে কানাচে
সুদিনের রাতদিন কই
অলিতে গলিতে আজ অন্ধকার নামে
রক্তাল্প শ্বাপদের নিরেট চোখে
তুমি আমি বসে থাকি
নিরাপদ দুরত্ব ভেবে
রাত ছাড়া ভোর হবে নাকি
আমি ওই মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকি
বিষদিন পার হলো কি!
বিষন্ন প্রায়শ শুষ্ক
দুহাতে দেখি আটপৌরে পিপীলিকার বাস
কিসের অপেক্ষা তাদের, নিরাশার মেঘ দেখি ওই
স্থির ও স্থাণু হয়ে বসে রও আকাল অবধি।
কেউ কি আসেনি আজ, তুমি তাই খিদের আশায়
দিন দিন প্রতিদিন সহ্যের সীমান্তে এসে
বিষন্ন পাগলপ্রায়, কার দিকে বাড়িয়েছো হাত
দুএকটা রক্তবিন্দু মুখে, আমি হাসি আর ভাবি
এতো যদি ক্ষুদ্র হয় মৃতপ্রায় পাকস্থলী
কি করে দিবস যায়, জীবনের শুষ্ক পিপাসায়
ছলে বলে মৃত্যু আসে, খুব ভোরে গুটি গুটি পায়
তুমি গিয়ে শুয়ে থাকো অবোধ শিশির নিয়ে সাথে
বাইরে দাঁড়িয়ে আছি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হবে বলে।
আজন্ম নাগরিক
কিসের নেশায় থাকি?
নাগরিক সন্তজন শোনো
দুই চক্ষু টলোমলো, ধূলোময়লা পানি
আর
আহত শব্দ এলে মৃদুচালে দূরদেশে পালাই পালাই
কেউবা দাঁতালসম
উত্তপ্ত প্রস্তরে মাথা ঠুকে অবনত প্রার্থনার ছলে
কেউবা বলাৎকারে বংশত সিদ্ধহস্ত
কারো চক্ষু মাতালশ্রুত
আমিও আসতে পারি
অধিক গর্ভচূ্ত্যির অহেতু অনাস্থার দ্বন্ধ ভাঙচুরে।
ইহাতে স্বর্গের দেশে
বিবিধে তুমিও স্বর্গ
তোমাদের উপসর্গ দেখি
মাঝে মাঝে অন্ধকারে
অদূরে ছায়ার দেশে
হুটোপুটি, ভাঙাভাঙি আরো কত কি
আবার কখনো কখনো
ঐ বৃহত্তর বটবৃক্ষে ফুঁ দিয়ে জিজ্ঞেস করি
দু-একটি দুঃখ থাকলে মন্দ হতো না
আবার কখনো অভিমান
শব্দ ও নিঃশব্দ প্রতি
তারপর অনেকক্ষণ পালিয়ে পালিয়ে ঘুরি
তারপর বদহজমি বকাঝকা খেয়ে
হিমালয় থেকে ঘুরে এলে দেখি
অপেক্ষমান, শত ও সহস্র মৃত নাগরিক।
তীর নেই, তরী নেই
দাঁড়াই সহসা তীরে
প্রবল স্রোতের সাথে
ওই দেখো
আমাদের রক্তবিন্দু মিশে
প্রবাসে ও গৃহে আজ
রঙিন ও শান্ত ভোর
হিমাংকে জমে।
কার চিঠি আসে রোজ
জরাভারাতুর আর বেদনাদায়ক
তাহাকে বলিও তুমি
পৃথিবীরা অনিবার্য দুঃখপ্রিয় হয়
অতএব মেনে নাও সহজ উপায়
এরকম বেঁচে থাকো
নিরুত্তর, খোলস বিহীন।