কোন এক প্রেসনোটের অন্তরালে । রাসেল রাজু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০১৯, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, | ১৪৫৭ বার পঠিত
১
বাঁইচা থাকবার উপহার শেষ বিন্দু অবধি উপভোগ করবার পরে জীবনের পানপাত্র খালি হইয়া আইছে নানীর গতরাইত একটার সময়। কষ্ট হইছিল তার? কে জানে! অনেকেই কল দিছে রাইত। ঘুমায়ে থাকায় কলটল ধরতে পারছিনা। ঘুম থেকে উঠে এতগুলা কল দেইখা যা ভাবছি তা কারোর মউত এর কথাই। স্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ পাবো- অতোটা সুখকল্পনা ছিলনা। না থাকলেও এই সংবাদই পাইলাম। বয়স হইছিল নানীর, একশোর উপরে। আম্মা কইছে গপ করতে করতে মরছে নানী। সৌভাইগ্য বটে! সবার মুখে মুখেই মনয় এখন তার সৌভাইগ্যর কথা, এইরকম ইন্তেকাল কয়জনের কপালে জোটে!
বিপরীত দশা আমার। বাঁচিয়া থাকবার আতংকই আমার মনে ঠাণ্ডা এক বিচ্ছেদ বেদনা চাগায়ে দিছে যেন। সত্যই আমি ডরাইছি? নাকি ডর আমারে, আমরার সবাইরে পাইয়া বইয়া আছে অনেক দিন যাবত? ফেইসবুকে দেখলাম অনেকে লেখছে বিগত কয়েক বছরের মাঝে এইটাই হয়তো একমাত্র স্বাভাবিক মৃত্যু।
টের পাইলাম একটা কিছু যেন গলায় ঝুলতেছে! সেইটা যে কী তা আমি দেখতে পাইতেছি না। শুধু অনুভব করতেছি তীব্র এক আতঙ্ক। যেইদিন মৃত্যু প্রত্যক্ষ করি পয়লা সেইদিনও এই আতঙ্কই অদৃশ্য হইয়া ঝুইলা আছিল কণ্ঠনালীর নিচে। তাও চুপচাপ আছিলাম। অতোদিনও ঠিক তাই আছি। নানীর লাইগা আমার মন কেমন কইরা উঠছে না—শেষবার যখন দেখা হইছিল নিজের মৃত্যুই কামনা করেছিল উনি। মইরা যাওয়া খুব স্বাভাবিক তার লাইগা! আমি কিন্তু বাঁচতাম চাই খুব করি।
বাঁইচা থাকতে পারমু? বাঁইচা থাকতে দিবো তারা? সবার মনে আতঙ্ক লাইগাই আছে আইজকাইল। ব্যাপক আতঙ্কের লগে আমিও মনে করতে পারলাম যে আমি মানুষ। আমারেও মারবো, মাইরা লাশ ফেলাই রাখব। নানীর আগে শেষ কবে যে কার লাশ দাফন করা হইছে কে জানে! আইজকাইল আমরার আত্মারে পুড়ায়ে মুক্তি দেওয়ার ব্রত যেন পালন করতেছে ওরা! আত্মারামরে খাঁচাছাড়া করাটা যেন এই যুগর সবচাইতে দরকারি একটা কাম। ওরা ঠিক এইটাই করতেছে।
জানালা দিয়া বাইরে চাইলাম, আন্ধাইরের মাঝে কিছুই দেখতে পাইলাম না। নিজস্ব চিন্তানদীত এক ডুব দিয়া বাইর হইতেই দিন গিয়া রাইত ঘনাইয়া আইলো!
বেদনায় যেন কাঁপি কাঁপি উঠলাম বারকয়েক। কিন্তু আমার কোন দুখ নাই, বেদনা নাই—হাহাকারও কিতা নাই কোন? তাইলে কেনে এতো ডর লাগে সময়ে-অসময়ে? বিরক্তিকর এই একলা লাগা—এক জায়গাতে তারা আমারে লইয়া গেলে আমি সব জায়গাতেই নাই হই যাই। কেউ দেখতে পায় না আমারে। জানতেও পারে না আমি কই আছি। আমার লগে কিতা হইতেছে, না হইতেছে ওরা ছাড়া আর কেউই দেখে না। কোন জায়গাতেই আমার কোন অস্তিত্ব নাই তখন। সকলর মতে হয়তো আমিও বুলেটবিদ্ধ হইয়া ড্রেইনর ভিতরে পড়ি থাকা সন্ত্রাসীর লাশ হই যাইমু কাইল!
স্বাভাবিকভাবে যে কেউ মরতে পারে ভুলতে বইছিলাম এই কথা। নানীর মউতের ভিতর দিয়া স্বাভাবিক মরাটাও হইছে আইজ! জানাজা দেড়টায়। কয়টা বাজে দেখতে মোবাইল হাতে নিতেই টের পাইলাম ওইটা অফ। একদম চার্জ নাই। মানুষ হইলো পাখির মতন। একটা বুলেটেই সব শেষ। মানুষে পাখি শিকার করে খাইতে, মানুষে মানুষ শিকার করে কেনে?
২
খুব আন্ধাইর বাইরে। হাত বাইর করলে হাত দেখা যায় না। চিল্লাচিৎকার হয়তো শুনতেছি। মনে হইলো আশপাশে একদল যমদূত হাসতেছেই শুধু লগে ভৌতিক উল্লাসে মরদেহ লইয়া মিছিল হইতেছে। আর ঠিক ওই সময়েই চাপা আতঙ্কে কাঁপি কাঁপি উঠলাম আমি। মরার ডর আমারে জোঁকের মতো কামড়াইয়া ধরল। এই টেনশনে জ্বলতে জ্বলতে ঘোর অমানিশায় আরবার টের পাইলাম কণ্ঠনালীত লেপটাইয়া থাকা আগের উদ্বেগটা—আমারে কেউ মার্ডার করতেছে না ত! আতঙ্কে গলাটা শুকাইয়া কাঠ হই গেলো। তবু আতঙ্কগ্রস্ত হইয়াও সেই বিপদ থেইকা রক্ষা পাইলাম প্রশান্ত বীর্যপাতর ভিতর দিয়া। আতঙ্কে এইরকম কইরা অর্গাজম হই গেলো? আশপাশে মাইনসে দেখলে কিতা ভাববো? কিন্তু অর্গাজম হইলে যেইরকম শান্তি লাগে তেমন ত হইতেছে না। মনটা কেমন জানি উচাটন হইয়া আছে!
“দেখইন, শুয়োরর বাচ্চায় মুতছে, প্যান্ট ভিজাই ফেলছে। বাইনচোতটা ডরাইছে খুব।”
কে যেন দূর থাইকা কাউরে কইল। আমার খুব শরম লাগলো, ধ্যেত! কিতা যে হইলো! বাইরে আরবার দিনের আলো আইছে। তখন তাইলে রাইত আছিল? একটা বাজারের মতো জায়গা পাড়ি দিয়া আগায়ে যাইতেছে বাস। এক আশ্চর্য অনুভবের উপস্থিতি টের পাইলাম আরবার—শূন্যতার এই অনুভূতির লগে জানাশোনা বহুত আগের। অদ্ভুত ভালা লাগে এই অনুভূতি যেন বুকের ভিতরটা একবারে ভইরা উঠে অপার শূন্যতায়। দুইচোখ বন্ধ হইয়া আইতেছে ক্লান্তির লাইগা। বাসটাতে এতো চিপাচাপি!
৩
চাচা ইন্তেকাল করছেন, চাচার শোকে চাচী এবং একই কারণে হৃদযন্ত্রর ক্রিয়া বন্ধ হয়া মইরা গেলো চাচাতো ভাই, আমারই চউখর সামনে। এরপরে মরলো চাচাতো বইন, এবং একে একে পরিচিত সব মইরা পড়ি থাকলো দেইখা মৃত্যু আমার দুয়ারে হর্ন দিতে লাগলো। দরোজা একটু শক্ত কইরা লাগাইতে যাইতাম তখনই মৃত্যু আমার কান্ধে আইয়া আলতো ধাক্কা দিতেই ভয় পাইয়া চউখ মেলিয়া চাইলাম। যাক বাবা! বাঁইচা আছি তাইলে! দুঃস্বপ্ন দেখতেছিলাম! কেউ নাশতা দিতে আইয়া ঘুম ভাঙ্গাইতে ধাক্কা দিয়া গেলো পীঠে। খাইতে বইলাম, বইয়াই বুঝলাম খাবার নায়, গিলতেছি ভীষণ গরম কিছু। হতবাক হইলাম? সম্ভবত না, হই নাই। আমি যদি মাইনসর মতন বাঁইচা থাকি তাইলে আমার লাইগা একটা বুলেট বরাদ্দ হইয়াই আছে। সেই ডরেই আমি নিভতেছি, নিভতেছে আমার দেহের সব আলো। শেষবার দপ কইরা জ্বইলা উইঠাই নিভতে হইলে ত তাপ লাগবোই, সেই অসইহ্য গরম তাপ গিলতেছি এখন। দাঁতে দাঁত ঘষে নিজেরে শক্ত রাখলাম। কিন্তু আমি যেন মইরা যাইতেছি, গইলা যাইতেছি। আমারে হারায়ে যাইতে হইবো! আমারে মেরে ফেলতেছে ওরা! ওরা সব যমদূত! মৃতরাইজ্যত বাঁইচা থাকা একজন দেহধারী আমি। রাইফেলের নল তাক করি আমার দিকে চাইয়া চাইয়া হু হু করি হাসতেছে যমদূত, ডর আমারে গিলে গিলে খাইতেছে। এইবার কিতা আমার পুটকিত গরম কিছু ঢুকতেছে? ইয়াল্লা, এতো যন্ত্রণা হইতেছে কেনে! আমি অসুস্থ এখন?
“হালার পুতর পাছা দিয়া গরম রড পুরাটাই হান্দাই দে। হালা একটা রাষ্ট্রদ্রোহী, সন্ত্রাসী! হা হা! এরে গরম রড থেরাপি দিয়া যাইতে হইব!”
বেদনায় যেন কাঁপি কাঁপি উঠলাম বারকয়েক। কিন্তু আমার কোন দুখ নাই, বেদনা নাই—হাহাকারও কিতা নাই কোন? তাইলে কেনে এতো ডর লাগে সময়ে-অসময়ে? বিরক্তিকর এই একলা লাগা—এক জায়গাতে তারা আমারে লইয়া গেলে আমি সব জায়গাতেই নাই হই যাই। কেউ দেখতে পায় না আমারে। জানতেও পারে না আমি কই আছি। আমার লগে কিতা হইতেছে, না হইতেছে ওরা ছাড়া আর কেউই দেখে না। কোন জায়গাতেই আমার কোন অস্তিত্ব নাই তখন। সকলর মতে হয়তো আমিও বুলেটবিদ্ধ হইয়া ড্রেইনর ভিতরে পড়ি থাকা সন্ত্রাসীর লাশ হই যাইমু কাইল!
চউখ মেললাম বাসের হর্ন বাজতেই। ওহহো, নানী মারা গেছে। আমি জানাজায় যাইতেছি।
“কই যাইতেছস, জানস?” পাশ থেকে কেউ কি তাই জিগাইলো?
“নানীর জানাজায়।”
“ঠিক করি ক, মিছা কথা কইস না হারামজাদা!”
“এই বধ্যভূমির বাইরে যাইতে চাই, যদিও জানি যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এই নরকই আমরার আবাস, যাই আর কই, ক’ন?”
“তোর নানীর সৌভাইগ্য! আর আমরার দুর্ভাগ্যই কইতে পারিস।”
“কিতা কইতেছেন খেয়াল আছে?”
“মুখে যা আইছে তাই কইলাম। এই আমার স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা। তুই ত তাই চাইছিলি, ঠিক না?”
“মুখে যা আসে তাই কইবার সময় এখন নয়। আপনে তাই কইবেন যা ওরা শুনতে চায়।”
“ওরা মানে ত আমরাই। কী সৌভাইগ্য আমরার!”
“আপনে যেইরকম করি ব্যাপারটা দেখতেছেন হয়তো তা এমনটা নয়। নরকে কেউই আসলে ভাইগ্যবান না।”
“আমারে জ্ঞান দিস না, খানকির পুৎ। আটচল্লিশ বছরর জীবনে যা যা দেখবার সব দেখছি; যা যা জানবার, বুঝবার সবই জানছি, বুঝছিও। আর বুঝতে হইবো না। তুই যে আটক হইছস, জানস ত এই কথা?”
“জ্বিওয়, নরকরাষ্ট্রত ত আমরারে আটকাইয়াই রাখা হয়।”
“চুপ কর, মান্দার পুৎ।”
আসলেই কিতা আটকে আছি? নাহ! আর ত মাত্র একটুকু রাস্তা। দেখতে দেখতেই চলে যাবো। কিন্তুক ভয়ঙ্কর সব নিয়মের ভিতর দিয়া আমরা কাটাইতেছি নরকবাস। লাগলে একটা বুলেট, অথবা ছোরার আঘাতই যথেষ্ট। পরে রুটিন পরিচয় সন্ত্রাসী। এইগুলা না চাইলে নিজ থেইকা মইরা যাওয়া, মানে চুপ করি থাকতে হইবো আরকি।
৪
আকতা ঝাঁকুনি দিয়া বাস থামছে?
“কিতা ব্যাপার! বাস থামলো কেনে?”
“ত? বাস আরও সামনে যাইব না কিতা? নাম! এইখানেই সব শেষ।”
“সব শেষ মানে! আমি ত নানীর জানাজায় যাইতেছি। আপনে কে, ভাই?”
“আমরা আইনের লোক, খানকীর পোলা। কথা কম। স্যার, এই লোকটাই। ছবির লগে হুবহু মিলে।”
“বাইর কইরা লইয়া আয়। আমরা অপেক্ষায় আছি।”
“মাগির পোলা, সামনে আগাইতে থাক।”
বাসটাও দেখি আন্ধাইর হইয়া আইলো। বাইরে, ভিতরে সবখানেই গভীর আন্ধাইর। কানের ভিতরে বাজতে থাকলো, “আমারে জ্ঞান দিস না, খানকির পুৎ। আটচল্লিশ বছরর জীবনে যা যা দেখবার সব দেখছি; যা যা জানবার, বুঝবার সবই জানছি, বুঝছিও। আর বুঝতে হইবো না।”
মানুষের আর লাঠির ঠেলা-ধাক্কা খাইয়া খাইয়া আন্ধাইরের মাঝে যাইতে থাকলাম। এই পথ অনন্তকাল ধরি চলতে থাকব যেন। কর্কশ শাসানী শুনতে পাইলাম, “সেট টার্গেট। এইম! প্রিপেয়ার টু ফায়ার! ওয়ান, টু, থ্রি… ফায়ার!” রক্তের ছিটা ভাসতে ভাসতে আইসা পৌঁছাইল কনুইত, তরল রক্তর ঘ্রাণ প্রবেশ করলো নাকে। ডরের লগে এক ধরণের মৃদু পুলকের উদ্রেক ঘটলো মনে। আমি বোধয় বাঁইচা আছি। মউত বন্দুক হাতে হয়তো আমার পিছনে। যেকোনো সময় নাড়িভুঁড়ি সব বাইর করি দিতে ছুটতে ছুটতে আইবো আঙুলের ধাক্কা পাইলেই!
“এইদিকে কই যাস?” কেউ কি জিজ্ঞেস করলো?
“ভাগবার পথ খুঁজে বেড়াইতেছি আমি। এইদিকে গেলেই হয়তো জানে বাঁচমু।”
“মাদারচোদ! বাঁচতে পারা তোর বাপ-দাদার পুটকি মারা খাইয়া আয় করা সম্পত্তি আরকি যে চাইলি আর পাইলি……হ্যালো? জ্বি, স্যার। আমাদের সবাইরেই আস্তানাতে থাকতে হইব, স্যার? ……আরও সন্ত্রাসীর লাশ দরকার, স্যার? ……ঠিকাছে, স্যার ……এই খানকির পোলা, দাঁড়ায়া থাক। তোর পাছা দিয়া বাকস্বাধীনতা ভইরা দিমু।”
এইসব অশান্তি ভাল্লাগে না আর! আলো-আন্ধারিত সব দেখতে পাইতেছি আবছা আবছা। হাকাহাকি করে কে? কিতা কয়?
“ভাইসব, অমূল্য সুযোগ। দশ টেকার একটি লটারি কিনে জিত্যা লইন স্বাভবিক মিরত্যুর লাইসেন্স। আর দশজনর মতন বুলেটে ঝাঁঝরা হইয়া মরবার চে যদি বাঁইচা থাইকা স্বাভাবিক মিরত্যু চান, তাইলে এইখানে আসেন। মাত্র দশ টেকায় স্বাভাবিক মিরত্যু যদি লাইগা যায়!”
ক্যানভান্সারের সামনে জটলা। বহুত লোক।
“এইখানে কিতা হইতেছে, বইন?” আমি জিগাইতে চাইলাম একজনরে।
“স্বাভাবিক মৃত্যুর লটারি বেচা হইতেছে। কিনতে চাইলে লাইনে দাঁড়ান।”
“ধইন্যবাদ।” কইয়া লাইনে দাঁড়াইলাম। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকবার পরেও টিকেট পাইলাম না। ঘোষণা হইলো,
“ভাইসব! আমরা দুঃখিত। লটারির টিকেট শেষ হইয়া গেছে। আগামীকাল একই সময় একই জায়গাত আরবার টিকেট বিক্রয় করা হইবো। তখন আপনেরা হগলেই টিকেট পাইবেন।”
“আপনেও বুঝি স্বাভাবিকভাবে মরতে চান? কাইল আরবার আইসেন এইখানে। দেখা হইবো।”
“স্বাভাবিকভাবে মরি যাওয়া আমার নানীর জানাজাত যাইতেছি।”
“কী কইতেছেন এইসব! কেউ ত এখন পর্যন্ত মরছেই না। সবাইরে মারা হইছে।”
“আত্মহত্যা করি, চলেন! আমরা সব মিলে আত্মহত্যা না করলে কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হইতো না।” কেউ একজন কইলো বাঁপাশ থনে।
“আত্মহত্যা কিতা স্বাভাবিক মৃত্যু নি?” ওই মেয়ে রাগ করল।
“বুলেটবিদ্ধ হইয়া যখন তখন খুন হওয়ার চাইতে এইটা কোন দিক থনে খারাপ মনে হয় আপনার কাছে?”
“আত্মহত্যা মহাপাপ বইলাই জানি।” ওই মাইয়ার পক্ষে জবাব আইলো ভিড়ের মধ্যে থেইকা।
“আর কাউরে খুন করা, সেইটা কোন মহাপুণ্য, বলেন?” আরেকজন জিগাইলো।
“এই লোক নাস্তিক, ধর শালারে!” কেউ একজন চিৎকার করলো।
“তুই একটা মালাউন, শালা হিন্দুর বাচ্চা। এরেও ধর।” আরেকজনের চিল্লানি শুনতে পাইলাম।
এরপর রাগে সবাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলো। ভয় পাইলাম খুব। লোকগুলার হাতে বন্দুক, চাপাতি, হকিস্টিক, রামদা। দৌড়াইতে চাইলাম এরার নাগাল থনে, এই মরার দেশ ছাড়িয়া পালাইতে হইবো। কিন্তু আসমানর মতোন এই মরার দেশের কোন শেষ নাই।
পাওয়ের নিচে কিছু একটা টের পাইলাম মনয়—তরল আর বেজুতির ঠাণ্ডা। নিচে চাইলাম। কিছুই নাই! আরও জোরে দৌড়াইয়া ওইখান থাইকা বাইর হইয়া আইতে চাইলাম। এইবার বুকের মইধ্যে কে জানি ধাক্কা দিলো খুব জোরসে। কিছু একটা আমার পেট পেঁচায়ে ধরল। আমার কথা কইবার মতো কোন তাকত-ই আর তখন অবশিষ্ট নাই। ক্লান্তিতে অবসন্ন প্রায় মাথা রাখবার লাগি একটু জায়গা খুঁজতে শুরু করতে চাইতেছি তখন। কিন্তু আমি কিতা রক্তের নদীত পড়লাম এইমাত্র? আমি ত ঠাণ্ডা-হিম রক্তের এই নদীত ডুবরাম। সাঁতরানির সাইধ্য নাই আমার! কিন্তু আমার এতো যন্ত্রণা হইতেছে কেনে? শ্বাস নিতে হইবো আমার! একটু শ্বাস!
কল্পিত প্রেসনোট:
গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা একটি প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সন্দেহে তাকে চট্টগ্রামগামী একটি বাস থেকে গ্রেফতার করেছিল কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সূত্রধরে ব্যাপক অস্ত্র ও গোলাবারুদের অনুসন্ধানে একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালাতে গেলে আস্তানায় ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এরই একপর্যায়ে একটি গুলি এসে লাগে এই যুবকের পীঠে। আহতাবস্থায় পালাতে সে সামনের নদীতে ঝাঁপ দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তার মৃত্যু হয়। এখনো পর্যন্ত নিহত যুবকের কোন পরিচয় মেলেনি।