চারটি কবিতা । আসমা অধরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০১৯, ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ, | ১১০৯ বার পঠিত
ভ্রমণ
অসীম আহ্লাদে করতলে চেয়ে দেখি এক ছায়াছবি,
সে এক আগুনের নাম, বাকীটা পোড়ন।
নৈঃশব্দের মধ্যে ডুবে গেলে আঙুল বলে ওঠে
এই সব অরণ্য বা দিন রাত্রি কতটা নিয়ন্ত্রিত।
ভোর হয়ে আসলে, জারুলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি
রাধাচূড়া গাছের নীচে মাটি নেই, কেবল হলুদ!
অন্য ভাষার গানের মতো বাতাস শিষ কাটছে বাতাস
এই ভরপুর গরমকালে কান্নারত লালাবাই যেন, মিহিসুর।
ক্ষয় হতে হতে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ, কে মনে রাখে
তারপর জোছনা এলেই হিংসুকের মতো চেয়ে থাকা
উত্তর নেই কোনো, কেবল মলিন হতে হতে একদিন
চাঁদের ঘ্রাণেই মনে পড়ে যাওয়া সমুদ্র কে বলি-
এই দু’কূল ছাপানো যে নদী তার নাম রাখি জীবন,
অশেষ কৃতজ্ঞতা; আনন্দ বা ভেজা চোখের অভূতপূর্ব ভ্রমণ!
চাঁদ নিশ্চুপ
আমি তো বলতেই পারতাম, পৃথিবীতে কোনদিন
তার মুখের মতো চাঁদ ওঠেনি একবার! অমন চোখে
মহাসাগর। অমন জলপথে হাঁটতে পারিনি কখনো।
আমি তো বলতেই পারতাম, দারুচিনির মতো সুঘ্রাণ
যে কথা কয় মূর্চ্ছনায়। লবঙ্গের বনের ভেতর পথ আর পথ
পর্বত, টিলা। অমন গভীর চূড়ায় পৌঁছুতে পারিনি কখনো।
আমি তো বলতেই পারতাম, কত নোঙ্গর ভীড় করে থাকে
আঙ্গুলে কী সিম্ফোনি! চওড়া কপাল জুড়ে হীরার কুঁচো ঘাম
যেন সহস্র নক্ষত্র। অমন জোছনা রাতে ঘুমোইনি কখনো।
আমিতো বলতেই পারতাম, এসব ভেবে ভেবেই চুপ করে থাকা
হাতের কাছে কাঁচি জমা রেখে সারাবাড়ীতে খোঁজ খোঁজ অনুযোগ! চুমুর মতো তুমুল জড়াজড়ি
করে থাকা কথারা বেঁচে যায়।
আমিতো বলতেই পারতাম; সে মানুষের মতো শুভ্র কাশফুল
একটিও দেখিনি সারাজীবন…
কেউ নেই
ব্যধির মতো পড়ে থাকা দিন
হাহাকারের ভেতর উপচে পড়া নেই
বিজন হয়ে বসে থাকলে কোনো নাম
খঞ্জর হয়ে কাটে। এর নাম গুণ।
গল্পটা শুরুই হয়নি, মোটিভ নেই
ইতিউতি চেয়ে চিন্তায় ডুকরে উঠে
এই যে সাবলীল নিঃশ্বাস গুনতে পারা যায়
একে কী বলে ডাকি, মহিমা?
মঞ্চায়ন হোক ক্রুশকাঠ, পর্দার পেছন থেকে
সাজপোশাক পরে ঝাঁপিয়ে পড়লে
আর্তনাদের কেউ নেই।
কেউ নেই, ফাঁকা আঙুলের ভাঁজ থেকে গড়িয়ে পড়ছে সময়;
কেউ নেই, এপিটাফের পাশে হাঁটু মুড়ে দু’দণ্ড বিমর্ষ হবার…
মুখোশ
মাংস খুবলে খেতে চাওয়া মানুষ জানে
মীথ নয়; কেবল বিষ ছলকে দিলে
শিরা জুড়ে জ্বলবে নবমীর দ্বীপ সম আগুন।
মদ ও ইত্যকার দ্রব্যাদি ছুঁয়ে কসম করো
মাদী গোত্র বলে- মানুষ বা কুকুরী সবই
ভোগ ও ত্যাগে যাবে জীবনভর!
তবু সুরারোপ করার কালে উন্নত বক্ষ
টিকালো নাক, আর মধ্যাকাশ জুড়ে গনগনে
আগুন ও আলোর মতো এক কপাল টিপ খুঁজে
ভুলে যাও বুক পেতে দেয়া সেই আকাশ;
যে আজন্ম তোমাদের জন্য শর বিঁধে ঠায় রয়ে যায়।
বলো তবে, তার কাঁচুলি খোলার আগে
তোমার সন্ন্যাস ব্রত উপড়ে রেখেছো কোথায়
নির্মোক ছুরিতে শান দিয়ে, ত্যাজ্য করো সব
শাস্ত্র গুলে খাবার আগে আয়নায় রাখো চোখ।
বুকের ওপর হামলে পড়ে
জলে ভাসায় যে জন, সে
আজীবন ঢেকে গ্যাছে সব
উন্মুক্ত করেনি, জানে তর্জনী
এসব ভিন্ন আলাদা ভূমিকা যার
শত্রুই বোলো তাকে, তীর্যক নামদার…