বন্দনা । সহুল আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০১৯, ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, | ১৩৩৬ বার পঠিত
বন্দনা
না পেয়ে আশ্রয়, গড়িলাম আলয় তোমার নামে
ভুলিয়াছি পরিচয়, হারিয়েছি সব শহুরে জ্যামে।
জমিন ছেড়ে ইট-পাথরের দালান ফুঁড়ে
বেড়ে ওঠছে শিমুলবাগান, আকাশজুড়ে
সুখের নামে ফালা ফালা করে কাঁটা চাঁদ
চাঁদের তলায় কৃষ্ণচূড়ার অবাধ আবাদ
লাশের দেহে তুলেছিল বিয়ের শেরওয়ানি
তুমি দেখনি কিছুই আল্লা, কিছুই দেখও নি!
**
আজানের সুরে কান্নার স্বরে কেঁপেছিল আকাশ
আঁতুড় ঘরে ষোড়শী দেহের অনবরত হাঁসফাঁস
পুরুষ মনে কিঞ্চিত আচড় কেটে রব তুলে হায়
মাছের শরিরে সওয়ার করে সপ্তাকাশের চূড়ায়
পৌছে যায় মালিকের দরবারে
তুমি তখন মত্ত ছিলে খোদা ইমানের কারবারে।
**
অদ্ভুত এক শিশু বসে আছে গোলাপের তলে
যত সু-গন্ধ, ততই দূর-গন্ধ যবে পচে গলে।
গোলাপের পাপড়ি হতে চুইয়ে পড়ছে রক্ত
আধমরা হয়ে শুয়ে আছে তোর ভূখা ভক্ত
বিকলাঙ্গ শিশুর পাশে। শোনা যায় বাতাসে—
পণ্যের যোগানদাতাও নাকি তোরে ভালোবাসে?
**
প্রবল বিষ্ময়কর সন্ধ্যায় এসেছে লহরী
নদীর কৈশোরে, দুলে উঠছে নৌকা—
বেঁচে থাকার আদি বাসনায় ফুটছে গোলাপ
প্রাণের ভেতর, খুঁজছে স্রেফ মওকা।
চাঁদ সওদাগরের প্রতি চিৎকার চাবুক হয়ে
চমকাচ্ছে বিজলী, তবু হবে না নত মাথা—
আগামীর বাসরে পুত্রের জান হয়ে যাক
কোরবান তবু, মানি না তোমার দৈবতা।
কোন বেশে আসতে চাও তুমি, কোন চেহারায়?
যতই রাগ করো ততই আমার, নাও আগায়।
**
কী অপার ভালোবাসায় সাজিয়েছিলাম তোমায়
স্বপ্নগ্রস্থ মনু রুপালি সিড়ি দিয়ে নেমে গিয়েছিল
চান্দের ডোবায়। আর, পূবালী নরম হাওয়ায়
পর্দায় ঢেকে দিয়েছিলে তুমি— ছায়ায় ও মায়ায়।
যতবার চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম আকাশ পানে
তুমি দিয়েছিলে বারিষ, করিম চাচার ঘরে
এসেছিলো দখিনা হাওয়া, চাচি জ্বেলেছিল লন্ঠন;
প্রলয়ের ভয় গিয়েছিল উবে দাদার আজানে।
তুমি এসেছিলে বাপ-দাদাদের মনুসংহিতায়
দিয়েছিলাম পিঁড়ি, দাদীর নূরনামায় আসর পেতে
শুনিয়েছিলে বেহুলার ক্রন্দন, অশ্রুশিক্ত মায়ের
জায়নামাজে তসবির বন্ধনে বেধেছিলাম তোমায়।
জোনাক রাতের প্রসবে দ্যাখি আলো জ্বলে
ধানের শীষে। হেঁটে হেঁটে শিশিরসাগর পার
হয়ে যাই, তুমিও উড়াল দাও ফেলে আমায়;
চেয়ে দ্যাখলাম— তোমায় তুলে নিল সবল দলে।
**
দোজখে নাই ভয়, বেহেশতের নাই লোভ
মানি তবু তুমিই রব— প্রাণেরও বান্ধব।
তোমারই নাম জপে সূর্য ফোঁটার সাথে
ভব সাগরে ছেড়েছি নৌকা; জমিনে পুতেছি
বীজ। মাটির পর্দা ভেদ করে সুরুজের ডাকে
মিছিল নিয়ে এসেছে শয়েশয়ে প্রাণ। ছড়িয়ে
দিয়েছে সুবাস, উতলে উঠছে মধু, উড়ছে
ভ্রমর, শুকে নিয়েছে ফুল-ফসলের প্রাণ।
আমিই কুলুঙ্গের ভেতর বসিয়েছি প্রদীপ—
কোলে বসে তুমি পান করেছো মাতৃদুগ্ধ।
আসমান ও জমিনের ‘পরে যা আছে— সবই
তোমার, তবু আমি মনুর সন্তান, তোমার
বুকে এনেছি উর্বরতা, তোমার কন্ঠে দিয়েছি
সুর, ছড়িয়ে দিয়েছি আকাশে— বাতাসে।
আমি ফলিয়েছি স্বর্ণালী ধান, ছিটিয়ে দিয়েছি
মাঠে, আর তুমি ফলিয়েছ তোমার গৌরব।
আমি ঘোষণা দিয়েছি বলেই তুমি অনিন্দ্য, তুমি সুন্দর।
অতঃপর, তুমি—
আমার কোন কোন অবদান অস্বীকার করিবে?
** ** **