পতন ও রাষ্ট্রের সঙ্গম । সহুল আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, | ১৫৬৬ বার পঠিত
কান্দে শুধু মানুষ
প্রভুদের পাখিগুলো যখন উড়া-উড়ি করে
তোমার আমার মত ভুখা-নাঙ্গাদের আকাশে
মেজাজ-মর্জিমত যখন মিঠাই পাঠায়
উপর হতে, কিংবা স্বয়ংক্রিয় মেশিন
যখন ঝলসে দেয় কাঁচা লাল লাল মাংস
তখন আমি, একজন সাংবাদিক,
গুনে দেখি কয়টা মাথা পড়েছে থেঁতলে
ঝলসে গিয়েছে, নাকি টুকরো টুকরো হয়েছে
খাতায় টুকে রাখি যতনে,
ক্যামেরার জুম লেন্স দিয়ে গ্রহণ করি পোড়া মাংসের স্বাদ ।
তখন আমি, একজন রাজনীতিবিদ ,
খুঁজে পাই দাবার নতুন গুটি
বৃথা যেতে নাহি দেব কোন দেহ – বলে
মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ে দেই জনতার কাতারে
প্রতিটা লাশ, প্রতিটা মাথা
আমার জন্যে তৈরি করে উপ্রে উঠার নতুন নতুন সিঁড়ি।
তখন আমি, একজন বুদ্ধিজীবী,
দেখি মৃত্যু,
আঁতকে উঠে চলে যাই রূপালি পর্দায়
কাঁদি, হাউ মাউ করে কাঁদি
কান্না শেষে আশ্রয় নেই প্রভুদের পাখির আরামদায়ক ডানার নিচে।
আমরা, সবাই, যারাই পাখির নিচে ঘুমাই
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়,
আদরে কিংবা অনাদরে,
প্রেমে কিংবা হিংসায়,
সকলেই উর্দির তল হতে দেখি শুধু, লাশ।
ভুলে যাই, সেকেন্ড খানেক আগেও
রক্তের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল লাশের শিরায় উপশিরায়
চোখ থেকে ঝরছিল আলোর স্ফুরণ
কালো মনিতে বাসা বেঁধেছিল নক্ষত্র
গোলাপ হয়ে ফুটছিল একেকটি হাসি
সেই হাসিমাখা ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়েছিল
কোন পিতাকে, কোন মাতাকে
কোন প্রিয়াকে, কোন সন্তানকে।
রঙ বেরঙের চশমা চোখে দিয়ে ঢেকে দেই
মস্তিষ্কের কোষগুলোকে; ভুলে যাই,
সেও আমাদের মতো খায় দায় ঘুমায়, এবং
গভীর রাতে স্ত্রীর সাথে ভেসে যায় স্বর্গোদ্যানে।
অথচ, এর কিছুই ছুঁয়ে দেখা হল না
ইট-কাঠ-পাথরের লাশের নিচে আজ
তাই কান্দে শুধু মানুষ।
চক্র
একই ছবির দিকে তাকিয়ে পিতা-পুত্র
গভীর রাইতে হস্তমৈথুন করি
আমার কোলে একদা জন্ম নেয়া ঈশ্বর
আজ আমাকেই করছেন তৈরি।
পতন
লোহালক্কড়ের যোগ বিয়োগে
গড়ে ছিলাম যে গাড়ি
তার নাট-বল্টু সবি
খসে পড়ছে একে একে।
মাটির পর্দা এফোঁড়-ওফোঁড় করে
মাথা তুলেছে শহর
দালানের শীর্ষে ঝলমল করছে
লুটেরাদের খোদাইকৃত নাম।
মধুর গন্ধে উড়ে আসছে দালালদের দল
গাড়ির মতো তাদেরও, খসে পড়ছে চামড়া
অন্ধকার শহরে
হাস্নাহেনার টিকিও খুঁজে পাই না
লোকমুখে শুনলাম –
সাপেরা নাকি এখন আর সঙ্গম করে না।
রাষ্ট্র
আমার খুনের জন্যে আছে মস্ত এক কারাগার
অথচ, তোমার খুনের নাম হয়ে যায় সুবিচার।
সঙ্গম
তোমার আমার সঙ্গমের ফলে
উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল একঝাক কবুতরের।
তুমি চেয়েছিলে, প্রথমে, গোলাপ
আমি বলেছিলাম, না। এলাকার
চ্যাংড়া প্রেমিকেরা তাদের ব্যর্থ প্রেমের
পায়ের তলায় প্রতিদিন জমা দিবে আমাদের সন্তানকে।
তুমি বললে, তাহলে রজনীগন্ধা?
আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম।
আমি চাই নি আমার সন্তানের সুগন্ধ উপভোগ করুক
সঙ্গমরত কোন কপোত-কপোতী।
ফুল ছেড়ে তুমি গেলে প্রাণীকুলের দিকে,
অতঃপর, কসাইর ছুরি হতে নিঃসৃত রক্তের ঢেউ দেখে
তুমি সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলে।
আমরা কি তবে সন্তান নিতে পারব না?
আমরা কি তবে নিঃসন্তান রয়ে যাব, আজীবন?
কি লাভ তাহলে এই সঙ্গম করে, রাতদিন?
অভিমানের খেয়া থেকে মুখ তুলে
আমরা তাকালাম আকাশের দিকে।
প্রথমেই যে পাখি উড়ে গেল,
সাদা পালক ফেলে গেল তার।
আকাশের বিশালত্ব দেখে আমরা, মানে
তুমি আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, কবুতরই হবে আমাদের সন্তান।
উৎপাদনের চিন্তায় মগ্ন সে রাতের কথা মনে পড়ে, তোমার?
শ্রেষ্ঠতম রাতের স্মৃতি কিভাবেই বা ভুলে যাওয়া সম্ভব, বলো?
ঠিক পরেরদিনই দেখলাম, নীলাকাশ জুড়ে ফোঁসফোঁস করছে
মস্তবড় এক সাপ। বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ঢেকে গেছে রূপালী চাঁদ।
অথচ, তোমার আমার সঙ্গমের ফলে তো
উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল একঝাক কবুতরের?