শাদা ঘোড়ার দৌড় ও অন্যান্য কবিতা । মোস্তফা মঈন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১০:০৩ অপরাহ্ণ, | ১৬৪১ বার পঠিত
সাকার
জন্মসূত্রে এই দেহঘরে আমি আমার সাকার পেয়েছিলাম। এই ঘরে
ঠাঁই-ঠিকানা হয়েছিল আমার। যখন সেই পরম সত্তার প্রদীপ্ত আলো থেকে সহসা
ভ্রমণে বেরিয়ে এসেছিলাম আমি।
ইতোমধ্যেই আমি জেনে গেছি, পৃথিবীর ছায়া-সবুজ আলো-ঝলমল
এই মনোমুগ্ধকর বাড়িতে আমার আর বেশিদিন থাকা চলবে না।
রহস্যঘেরা এই গ্রহের বাসিন্দাদের প্রতিটি মুখে আমি তাকিয়ে দেখেছি
কারো দেহকোঠাতেই আমার দি¦তীয় ঠিকানা নেই।
শাদা ঘোড়ার দৌড়
রাত্রির শিকড়ে আমার ঢুলুঢুলু ঘোর। ঘোর একটা আকর গ্রন্থ। তার চিরল
পাতা পৃষ্ঠায় ছাই। জীবনের কয়লাখনিতে জমা হয় ছাইয়ের স্তুপ। স্তুপে শোয়ে
থাকে চকচকে নক্ষত্র। আমার নক্ষত্র ধোয়া রাত একনিষ্ঠ হই আকর গ্রন্থে।
প্রতিটি আকরিক নক্ষত্র আমার ছেলেবেলার কুড়ানো পাথর। পাথর দিয়ে আমি
আকাশ ছোঁয়া ইমারত বানাই। আকাশচুম্বী ইমারতটা নৈশ আলোক।
আমি আলোর চাতালে এসে দাঁড়াই। পান করি আলো। পাঠ করি জীবন।
এই পানশালায় পানরত সবাই প্রতি মুহূর্তে হয়ে ওঠে এক একটি তেজী ঘোড়া।
চারদিকে দৃপ্ত দাপট। ছড়িয়ে পড়ে আলোক হ্রেষা, খুর। জন্ম নেয় অখ- হীরক।
কু-লী পাকায় হীরক জোছনা।
আমার ঢুলুঢুলু ঘোর। ঘোর একটা শাদা ঘোড়ার দৌড়। দ্যোতিমান ঘোড়ার
লেজে ঝুলে যায় আমার চোখ। ওর রেশমি লেজ ছড়িয়ে দেয় সবুজ শস্য ভরা
ধান নদী দারুচিনি গ্রাম। মসলা ঘ্রাণ সচিত্র পাতা বৃক্ষ সবুজ ডাল। ডালের
দিকে ওড়ে যায় পাখি বনঘুঘু।
গ্রাম বালিকা হাসে। আলোর উৎস মুখে লাল শাড়ি বউ কলসী ডুবায়।
আমরা পান করি আলোর মধু।
স্বপ্নফল
যেদিন জেনে গেছি, একটা স্বপ্নেরই পি-িফল এই আমি
সবুজ পাতায় মোড়া ঝুলে রয়েছি গাছের শাখায়, বাতাসে দোলছি গাঢ় লাল
পাখিরা পাকা ফলে ঠোঁট গলাচ্ছে, ঠোকরে ঠোকরে খাচ্ছে আমারই হৃৎপি- ফল।
আমি সেদিনই জেনেছি, পাখিজন্মে যারা নেচে উঠেছিল আমারই মাতৃজঠরে
আমি তাদেরই ঠোঁটে জীবনরস চুইয়ে পড়েছি অনন্তের ফোঁটা।
জীবন-বৃক্ষ থেকে কারো স্বপ্নফল গলে গলে এই আমি, আমারই জন্ম করেছি সার্থক
তাঁর চাওয়া, তাঁর তৃপ্ত অহং গলে গলে পাখিদের ঠোঁটে।
সরোদ স্বপ্ন
আমার শরীর বেয়ে খোয়া গেছে স্বপ্ন। জীবনের ফাঁক ফোকর ভেদ করে
বাতাসের আলিঙ্গন পাই। স্পর্শ পাই পাতা ও পাথর।
পাতায় দোয়েলের ডিম। উঁকি দেয় জীবন।
আমি হাঁটি। আমার শরীর বেয়ে যেন পোনা মাছের ঝাঁক নামে।
কতবার টেনে তুলে আনি সেই সরোদ স্বপ্ন। কলাপাতা মাছরাঙা
বাঁশপাতা ঘুঙুর বালিকা ঘুঘু।
বর্ষায় বৃষ্টিতে কৈ মাছের স্বপ্ন চড়চড় করে হাঁটে। পুকুরপাড় উলুখাগড়া
ধানখেত বিলপাথারে দৌড়ায় স্বপ্নেরা। মাথায় ছাতা করে কোঁচ হাতে
দৌড়ায় গৌরাঙ্গদা। তার চকচকা চোখ। ডিঙি নৌকায় দোল তোলে স্বপ্ন।
আমি হাঁটি। চরাচরে ভ্রমণ করে চোখ। আকাশের চোখ মেলে ধরে
গভীর নীল দেহের ক্ষুধিত তারা। স্বপ্নের ভেতর স্বপ্নান্তরিত হই আমি।
শিকারি
‘অতঃপর তোমরা প্রভুর কোন সৃষ্টিকে অস্বীকার করবে বলো?’
. — আল কোরআন
সৃষ্টিতো সেই মহা জাগরণ। নভঃ ও ভূম-লের বোধ আঁকড়ে আছে।
মুহূর্তে মুহূর্তে বোধের জগত থেকে, থেকে থেকে পরাক্রম—
রাংচিতা বনে বিতংসি
পৃষতী নিজের ছায়া মৃত্যুর সাথে ডিগবাজি খেলা করে।
দৌড়–তে দৌড়–তে এসে জীবন বাথানে ধরা পড়ে। মৃত্যুর হাতে ঝলসানো ছুরি!
শিকারি! এই দুর্বোধ্য জঙ্গলে কী অস্বীকার করবে তুমি ?
চোখের মণি থেকে মুদ্রাশঙ্খ ওড়ে যায়। তোর অংকুশের ঘায়ে পিঠ গলে।
অবশেষে অপর্ণা কোন অবন্তির পথে—।