ম্যাজিকেল চরিত্রের উপন্যাস নারগিস । আহমদ সায়েম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০১৮, ৩:১০ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৯০ বার পঠিত
কষ্ট পেলে পৃথিবীর সবাই আমার কষ্টে কাঁদবে কেনো? এটাই স্বাভাবিক কিন্তু নারগিস এমনই এক চরিত্র যে ভাবে – ‘আমি ছ্যাঁকা খাইলাম কিন্তু দ্যাখ কিছুই হচ্ছে না। সবকিছু আগের মতন আছে। সূর্য উঠতেছে, চাঁদ জ্বলতেছে। আম্মা সকালবেলা ইসুবগুলের ভুষি খাইতেছে।’ তার বান্ধবী অন্য ভাবনায় উদ্বিগ্ন ‘মেয়ে ছ্যাঁকা খাইলে আম্মা কেন ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারবে না!’ এমন নানান ম্যাজিকেল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে যায়।
‘নারগিস’ পড়ে শেষ করেছি মাত্র। কিন্তু দুই দিনেও এর আবেশ কাটছে না। যেনও ‘অপুর সংসার’ সিনেমাটা দেখে শেষ করলাম। পড়া শুরু করে দিলে এর শেষ না দেখা পর্যন্ত আর ক্ষান্তি নেই। নারগিস’র কাহিনী এক কথায় দুর্দান্ত, থ্রিলার জীবনকাহিনী। গল্পে এমন সহজসাধ্য-মোড় নিয়েছে যে হঠাৎ শিউরে ওঠতে হয়, নানন রঙের যৌক্তিক-চরিত্রায়নে খুব দ্রুতই পৃষ্টাগুলো নিঃশেষ হবে। পড়ার ঘোরে কবিতাও মনে হতে পারে কখনো-সখনো।
উপন্যাস – নারগিস, লেখক – পারমিতা হিম, প্রথম সংস্করণ – মার্চ ২০১৮, রচনাকাল – ২০১২ –২০১৮, প্রচ্ছদ – মোস্তাফিজুর রহমান, প্রকাশক – বহিঃপ্রকাশ, পৃষ্ট – ২০৪, মূল্য – ৫০০।
যেমন – ‘ওর চোখে সত্যি সত্যি একটু পানি। তবে সেটা গড়াচ্ছে না। সারা মুখে গড়াগড়ি খাচ্ছে দারুণ যন্ত্রণা। সূর্য ডুবে যাবার আগে সারা আকাশ লাল করে আছে। সে লালচে আভা ওর মুখে ছড়ানো।’ বা ‘একটা ইকোনো ডিএক্স কলম নিয়ে দুই ঘণ্টা বসে বসে ফিতা আগের মত স্বাভাবিক করার পর প্লেয়ার অন করে দেখি ক্যাসেটটা আর চলে না।’ এই উপন্যাসের শেষে আরেক জন নায়িকার মুখে যখন ‘আম্মা’ , ‘আম্মা’ ডাক শুনবেন আমার মতো আপনারও বুক কেঁপে ওঠতে পারে, মনে হতে পারে আম্মা ডাকটা অনেক দিন আপনি শোনেননি বা ডাকেননি। আম্মা…। ‘পৃথিবীটা কি একটা বিশাল এয়ারপোর্ট না যেইখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাচ্ছে আর আসছে? এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার ভাষা, পরিচিত সব ভাষার মধ্যে থেকেও নিজের একটা ভাষা তৈরী করে নেয়া যায় তা নারগিস পড়লেই অনুধাবন-যোগ্য।
.
বইটা শেষ করে আমার আমিটা নানান আমিতে রূপ নিলো। প্রথম আমিটার কথা হচ্ছে একটা উপন্যাসের শেষ এইভাবে হয়? আরেক আমির প্রশ্ন – এইটাতো ছোটগল্প নয়, তবে!! আরেকজন বলছে – তাহলে শেষটা কী ভাবে হবে, শুনি? আরেকজন বলতেছে যে – নারগিসের জীবনে প্রায় সব জায়গাতেই একজন লাভ-লুর প্রয়োজন পড়েছিলো সেই নারগিসের বর মানে সাগর’কে … নাহ! কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না। সবগুলো প্রশ্নের একটাই উত্তর – ভালো গল্পের শেষ সিঁড়িতে অনেক গুলো ভাবনার পথ খোলে থাকে, নারগিস সেই ধারারই একটা উপন্যাস। পাঠকের ভালো লাগবে মনে করি।