পাখি । তানভির বখতিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, | ১১৩৬ বার পঠিত
বাসার ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি। দখিনা বাতাস। দশ বছর আগে এমনই একদিন ছিলাম আমি।. ছাদে, একা। হঠাৎ কোন এক রূপবতী কিশোরীর আগমন। বাতাসে ভেসে যাওয়া তার চুল। লম্বা ঘন কালো চুল।
শিমা। আমাদের বাসার উপর তলায় থাকে। একই বয়েসের দুজন।
সে ছিল সুন্দরি। তার বেনির স্মৃতি আজও ভুলিনি। খুলা থাকলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ত সাপের মত।
বাবা মা কেউই ফরসা ছিলেন না। অথছ সে ছিল একে বারে দুধে আলতা। লজ্জা পেলেই ওর নাকের ডগায় ঘাম জমে। সুযোগ পেলেই যাওয়া হত ওদের বাসায়।
দেখা হলেই বলতাম” কিরে তর গাল লাল হয় কি না?”
সীমার গালে টোকা দিলেই রক্ত জমত। সাথে সাথেই সেই জায়গা হয়ে যেত জবাফুল।
তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। অদের বাসায় গেলাম। গালে টোকা দিতে।
কিন্তু দেয়া হল না।
সে দাঁড়িয়ে রইল বেশ দূরে। হঠাৎ দৌঁড়ে চলে গেল।
ওর মা আমাকে দেখে বললেন…” পিন্টু, সীমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে”
“সে কি ” আমি চমকে উঠলাম।
” কি করব বল। ছেলে আমেরিকায় থাকে। ভালো চাকরি করে। মাইনেও খারাপ না।”
কথা শুনে খুব অভিমান হল। খুব রাগ। চাপা কষ্ট।
সিমার কাছে গেলাম। ” কিরে তর বিয়ে হয়ে যাবে?”
সে খুব জোর দিয়ে বলল ” হ্যা ”
“তোর বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে?”
“হ্যা, করছে তো, কেন করবে না??”
“তুই পড়ালেখা করবি না?”
“পড়ালেখা করেও তো বিয়ে করতে হবে, রান্না করতে হবে। তাই বিয়ে করাই ভাল।”
আমার খুব রাগ হয়েছিল, জবাব শুনে।
তাও জিজ্ঞেস করলাম
“আমাকে আর দেখতে পাবি না, তোর ভাল লাগবে???”
সে কিছুটা ভেবে বলল
“তা তো একটু লাগবেই। পরে ঠিক হয়ে যাবে।”
বাসায় চলে আসলাম। রাত হল। সেই সাথে জ্বর। রাতের গভীরতার সাথে জ্বরের গভিরতাও বাড়ল। শেষতক হাসপাতালে। কিছুদিন যমে মানুষে টানাটানি। একদিন ছাড়া পেলাম।
শুনলাম বিয়ে হয়ে গেছে ওর। বর অন্তত ২০ বছরে বড়। মানে ওর বরের বয়স ৪০ হবে। ৪০ বছরের একজন লোকের সাথে ওর প্রেম হতে পারে না!
বিয়ের পর প্রেম হয় কিনা জানা হয়নি কখনো।
সময়ের সাথে কত বাতাসই বয়ে যায়।
পাখি তার নীড় বদল করে।
এক নীড় থেকে আর এক নীড়ে যায়।
কিন্তু মনের সব আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে বাননো সে নিড়ে ফিরবে কি সেই পাখি…