পাণ্ডুলিপি থেকে । জহিরুল মিঠু
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৬৩ বার পঠিত
কবি জহিরুল মিঠু’র কবিতার বই অহংকারে পা পড়ে না বার্ধক্যের উঠোনে বের হচ্ছে ২০১৮ সালের একুশে বইমেলায়। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী শাহানূর মামুন এবং প্রকাশিত হচ্ছে অগ্রদূত এন্ড কোম্পানি প্রকাশনী থেকে।
শীর্ষসুখ
কান পাতার চেয়ে
আমি চোখ পেতে রাখি,
কখন আমার বুকে
সাগরের জল ছুঁয়ে যায়।
পূর্ব পুরুষের সব পাপ
মুছে নেবো নোনা জলে,
দীর্ঘ দৃষ্টিতে দিগন্তে ছুঁড়ে দেব
সব না বলা বোধ-কষ্ট-শূন্যতা।
এই মায়াবী ঢেউ আমার সত্তা বেয়ে
আমাকে পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই পৌঁছে দেবে আমার
অষ্টাদশী মায়ের গর্ভে।
এবার সেখান থেকেই আমি তার গর্জন শুনবো।
আমার আদি চোখের বিভ্রম শুষে নেবে
সে শব্দ , আমার কানকে আরও প্রশয়ে
সে তীক্ষ্ণ করে তুলবে যে
এ যাত্রায় আমি চোখ বন্ধ না করেও
শুনতে পাবো শীর্ষ সুখ — সাগর-সঙ্গমের !
মূর্খের তাণ্ডব
আসুন দেশটাকে বৃক্ষ মুক্ত করি,
বড় বড় দানব বৃক্ষগুলো তো যাবেই
সাথে মূলসহ টেনে তুলে ফেলবো —
ন্যাংটো, আধা ন্যাংটো বিরুৎ-গুল্ম।
বাঁশ বাগানের মাথায় দেখবে না কেউ চাঁদ,
বিষ মন্ত্র ছুঁড়ে উর্বর মাটিতে মিশাবো খাদ।
অক্সিজেন ছাড়া মরুর দেশে
উট যদি ঘুরে ফিরে,
অক্সিজেন আবিষ্কারের আগে মানুষ বাঁচতো কী করে?
এ মাটিতে আর কস্মিনকালেও কোনো বীজ
মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
পারবে না কেউ ন্যায়ের জন্য দু’কলম
উপচে লিখতে, পারবে না কেউ শাদা কাপড়ে শান্তির দিন
গুণতে!
এরপর পুরো পৃথিবী থেকেই খসে যাবে বৃক্ষ।সিলিন্ডার
গ্যাস কিংবা বোতলজাত পানির মতো, নিষিদ্ধ পলিথিনে
বিশুদ্ধ বাতাস কিনবে একমাত্র সেই সচেতন বুর্জোয়া!
আর পুরো বিশ্বের বাকি সব মানুষ, রোহিঙ্গা হয়ে হাহাকারে
সাগরের সব জল শুকিয়ে
লবন বানিয়ে ঘষতে থাকবে
নিজেদের রক্তাক্ত অমানুষ শরীরে!
সাজেক
চোখ বন্ধ করলেই ছুঁয়ে ফেলি করতল।
ঝাঁ ঝাঁ দুপুরেও কত রূপে সাজতে পারো,
মিশতে পারো গভীর রাতে,
মেঘের সাথে ফিসফিস সুরে।
সব বন্ধন টুটে গেলে
আচানক বড় শূন্য হয়ে গেলে
সে সময়টা না হয় — এখানেই ফিরবো !
এ রাস্তা দিয়েই কল্পনা হেঁটেছিলেন
কাল্পনিক সমাজ বপন করতে ;
আমি না হয়, তাঁর শেষ থেকে শুরু করবো।
ইশ্, যদি কেউ গুম করে,
ফেলে দিত এই জুম পাহাড়ে,
লতা-গুল্মের বুনো গন্ধে
সাষ্টাঙ্গে যৌবন মেখে নিতাম !
কিন্তু সত্য এই যে —
যথেষ্ট ধার-ভাড় নেই বলে,
এ অধম গুমের অযোগ্য এক পতিত রাহি !
বিতাড়িততা
পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ করে বাহাস করি,
পুরানো সব মুছে ফেলে,
অখণ্ড-গুমোট কষ্টটাকে ফুৎকারে উড়িয়ে,
কবর-নিস্তদ্ধতায় বসে থাকি — চুপটি !
নরকের আকাশ নেমে আসুক,
জ্বালিয়ে দিক মেঘেদের আগুন।
ফেরা — না ফেরার সঙ্ঘাতে,
স্বেচ্ছায় কোরবানি — জীবনের সুখটি !
বইয়ের কবিতাই এগুলো
উপলব্ধি
কিছুদিন শামুকবাস ছিলাম।
তাতে ক্ষতি হয়নি কার?
যার জন্য বিশ্বসংসার ছিন্নভিন্ন করলাম,
সেও পৃথক,
সাজেকের বিস্তৃত দিগন্তে
স্বাধীন মৌন পাহাড়ের মত!
একের নামতা গুনছি আমরণ!
গুমোট অমাবস্যায় নিধুবাবুর টপ্পা আর চৌরাসিয়া;
বুকের মধ্যেই — ভেসে যেতে থাকে।
স্নাত হতে হতে মুছতে থাকি —
অতীতের ভুল নামক পর্বত — যত!