বৃক্ষ । মৃণালিনী
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, | ১৪৮৪ বার পঠিত
সৃষ্টির জন্মের কিছুকাল পর মুহূর্তেই কর্দমাক্ত জলে প্রাণ ভরিয়া স্নান সারিয়া রোদ্দুর প্রাতঃকালে ঈষৎ স্ফীত নন্দিত নিজস্ব বাগানে নিটোল সৌন্দর্যের অপূর্ব সবুজ প্রতিমায় নিজেকে ধারণ করিয়া সূক্ষ্ম নরম পেলব গন্ধযুক্ত ফুলরাজি, রবি রশ্মীর উদার প্রাচুর্যে প্রান দোদুল্যমান। জীবন ও জীবের আশ্রয় দিতেই প্রফুল্ল শরীরে প্রবেশ ও আশ্রয় ঘূণপোকা, আত্মার নরম অংশ সাদা ছাই হইয়া পড়িয়া থাকে প্রতিবাদহীন পদ প্রান্তে। পথে পাহাড়ে ছায়া ছোট্ট হইলেও তপ্ত লালা নিঃসরণ হইতে প্রশান্তি, ভূ-ভাগের অতি ক্ষুদ্রতম স্হান হইতে বিশালকায় ভুমিতে মহাকাব্যিক উপল চঞ্চল গতিতে দৌড় পাড়িতে আপারগ হইলেও কালকে নিজের শরীরে আশ্রয় দিয়া তাহাদের কার্য কলাপ দেখিয়া দেখিয়া বর্তমান কালের বিকৃত স্বার্থান্বেষী কার্য কলাপ অপলক চক্ষে দেখিয়া চলিতেছে যন্ত্রণা জর্জরিত হৃদয়ে।
গীষ্ম বর্ষা নানান ঋতুর পাখি- অন্যান্য জীব কুলের আশ্রয় ছায়ারূপী, অথচ ঘরের আবর্জনা ও বিকট শ্রুতি পার করিয়া যায় যেন তাহার মানসিক বা শারীরিক ক্ষত বা ক্ষতের প্রলেপ নিঃপ্রয়োজন। পঞ্চভূতে বিলীন হইলেও অপর প্রান্ত থেকে উঠিয়া আসিবে নতুন আলো কিংবা ভূ-গর্ভের অন্ধকারে চির নিদ্রায় লীল হইবে।হয়তো বা প্রবল অনুরাগ বশত কচি পক্ষি শিশু হইয়া জন্ম লইতে ইচ্ছুক আরও একবার প্রবাহের শীতলে নিজের সমস্ত শক্তিরস নিঃশেষে প্রদান করিয়া পাখি জীবনের আনন্দে অপূর্ব অনিকেত উড়ে যাওয়ার সংকেতবিহীন যাত্রা পথে ছায়ার অপরাহ্নে নিজেকেই খুঁজিয়া ফিরিবে। অভিযোজনে অভ্যস্ত শরীর সিমেন্টের দেওয়ালের মাপে শরীরকে জ্যামেতিক আকারে পরিবর্তিত করিলেও সন্ধ্যায় পাখিরা যেন পরিচিত ঘর হারাইয়া ভাঙা কার্ণিসে বসে, মমতামাখা শীতল আশ্রয় খোঁজে, স্তনে মুখ গুজে খুঁজিয়া পাইতে চায় উড়ন্ত পাখার ক্ষণিক বিরাম, মাতৃ- পিতৃ স্নেহের স্নেহসুধারস।
শীত বা বসন্তের হলদে পাতাগুলো যে সংগীতের সৃষ্টি করিয়া থাকে, তাতে হতবাক হইয়া হস্ত উত্থানে থাকে শেষবারের ভালোবাসা, বৃন্ত হইতে হারাইয়া যাইবার করুন লবণাক্ত জলের বাতাস মিশ্রিত বাস্পের সুর সংগীতের বিদায়ী মূর্চ্ছনা। ভেতরের তালগোল কথা খসিয়া যাওয়া চামড়ায় সংখ্যা চিহ্ন, শেষ বিদাইয়ের আগে শেষ হিসাব । ধারালো কাঁটারি দ্বারা অঙ্গচ্ছেদে ভেতরের জমায়িত রস শ্রাবণ ভেজা চক্ষের জলের সঙ্গে মিশ্রিত মর্ মর্ ধ্বনি যা শিকড় হইতে মৃত্তিকার পাঁজরে আঘাত করে জোড়ালো ভাবে। দুই মূক নির্জীব- সজীবের ব্যথা ভরা কান্না আগামীর অশনি সংকেত বহন করিতে উদ্যত । শূন্য স্হানের অনন্ত ঐশ্বর্য, বিকল্প রাগ, অভিমান, নখকলমে লেখা নাম, অস্ত্রাঘাত, রক্ত স্নান, বা শিকড়ের পথ চলা, গৌরব গঠনে, ভাঙনে, বিচ্যুতিতে নানা বিশেষণে অস্তিত্ব।জন্ম-মৃত্যু অপ্রাসঙ্গিক হইলেও সবুজ রূপে সূর্যের হলদে আলোর অভিযান , ফুল-ভ্রমরের সঙ্গম, ফলের স্তনে রাক্ষুসে দাঁতালো দাঁতের কামড়, বীজ-চারা- গাছ নতুন সৃষ্টি ও আবমান কালের সাক্ষী স্বরূপ জীব জীবনের সজীব সুন্দর থাকিবার অলিখিত হস্তাক্ষর।
(সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে যে বৃক্ষ জীবন পেয়েছে ,সেই সময় থেকে বর্তমান কালেও জীবন ধারণ করে চলেছে, এবং আবহমান কাল বা সৃষ্টির বিনাশ পর্যন্ত সে তার দায়িত্ব পালন করে যাবে একই ভাবে। যে রূপ সৌন্দর্য ধৈর্যে মাতৃসরূপা, ফুল ফল ছায়া দিয়ে জীব ও প্রাণীকুলের শরীর ও মন প্রশান্তিতে ভরে দিয়েছে,এত গুণের অধিকারিনী অথচ ঈশ্বর তার চলাচল ও কথা বলার শক্তি থেকে বিরত রেখেছেন, সেই সবুজ সুন্দরী নারীর মনের কিছু ভাবকে শব্দরূপ দেবার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র – শব্দেরও সুর ও ধ্বনি ঝংকার অনুরণিত হয়েছে মূক বৃক্ষের হৃদয়ের সুরের সঙ্গে মিলেমিশে।)