আমার চোখকে গ্রাস করছে সম্মোহনী সৌন্দর্য । মহসীন চৌধুরী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, | ২৩০৩ বার পঠিত

রমণী
রমণীর কি জানা আছে টিপের নিচে লুকিয়ে থাকে চামড়ার কষ্ট
প্রকাশের তাড়নায় বিন্দু বিন্দু ঘেমে যাওয়া!
টিপ কি বুঝতে পারে?
খসে পড়ে কপালের আকাশ থেকে
রঙিন নখগুলো অস্তিত্বের সঙ্কটে
রঙ তার শাদাজীবনের অভিশাপ
রমণী, যে চুড়ি নিয়ে রঙে মাতো দ্বিতীয় পুরুষের সামনে
ক্লান্ত চুড়ি হয়তো বিশ্রামে ছিল দ্বিপ্রহরে
কানের দুল কতটুকু শুনে নেয় প্রেমিকের রগরগে গান!
চোখ, চুম্বনের স্বাদ পেয়েই লজ্জায় পর্দা টেনে দেয়…
নূপুর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম রেখেছে কান্না
নূপুরের কান্নাই তোমার কানে রিনিঝিনি হয়ে বাজে
রমণী, তুমি কি জান, নথও তোমার সৌন্দর্যের ঘ্রাণ নিতে আশ্রয় নেয় নাকের আসনে…
পাঞ্জাবি
পাঞ্জাবির বোতামের সাথে সুতোর যে সম্পর্ক তার মর্মে পৌঁছে আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছি—
মৌন ভালোবাসা!
সুতো-বোতামের প্রেমের গায়েতে রমণীর কাঁপা কাঁপা হাতে ছিল সুচের নিখুঁত পাঠ!
রমণীর চোখে প্রেমিকের শরীর—
ঘর্মাক্ত সকালের কাহিনি—
হাওয়ার-বিকেলের সাথে খুঁতহীন বুননে সন্ধ্যায় চলে যাওয়া।
বিদগ্ধ কারুকাজ! পাঞ্জাবির গায়েতে যে নকশার হাসি তাতে আয়নাও হেসে উঠে পাঞ্জাবির সাথে—শৈল্পিক হাসি, রমণীর ছোয়াতে!
পুরুষের শরীরে মিশে থাকুক রমণীর মৌন আদর…
ঘড়ি
উপহারের ঘড়িতে চোখ রেখে সময় দেখতে পাই
বৈশাখ ছিল—তাণ্ডব! প্রকৃতির সাথে নদী ও গাছের বিদ্রোহ
মসৃণ রাস্তায় কান্নারত পাতার স্তূপ—ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে চলে যাওয়া কুকুরের দীর্ঘশ্বাস
একান্তে সময় কাটানো পাখিদের নির্মম স্মৃতি—নীড়হারা পাখি-শাবকের চিঁ চিঁ চিঁ…
প্রথমা দিয়েছিল ঘড়িটা—ঘড়িতে চোখ রাখলেই সময় সামনে চলে আসে
খোলা চুলে হাওয়া ছিল—দুচোখে হাসির ঢেউ ছিল
প্রথমার কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠাধরে কথা বলার প্রস্তুতি ছিল
প্রতিটি অঙ্গকে শাড়ি জড়িয়ে ছিল—
কুমারী বুকেতে, নাভীর গভীরে, উন্নত ঊরুর সন্ধিক্ষণে ঘুরে আসা আমার দু’চোখে শাড়ি-রঙের বিষাদ জমে ছিল…
তবুও মনে হচ্ছিল মুহূর্তটি কিনে নেই সময়ের কাছ থেকে
আমাদের অস্তিত্ব আড়াল হোক—প্রকৃতির কাছ থেকে—আমাদের ছায়ার কাছ থেকেও…
সে সময়টা ছিল আমার—প্রথমার—বিমুক্ত প্রাণ প্রবাহ!
বন্ধ ঘড়িতে চোখ রাখি—সময়টা ঠিক সামনে চলে আসে সন্তের চোখে…
ক্লিউপেট্রা
নিমীলিত চোখে রাত দ্রুত চলে
আজ চোখ খুলে মিশে থাকব রাতে। নৈশব্দে ডুবে রাত বড় হোক। কামে, ঘামে, সুর-ছন্দে চলুক রাত-উদ্যাপন।
অনুভূতিকে ছেড়ে দিয়েছি পুরো ঘরময়। দখিনের বাতায়ন পথে অনুভূতির প্রখরতায় আমি বিস্মিত!
বিছানায় ছেড়ে দিলাম দেহভার!
শরীর! ঘ্রাণ! আমার পাশে শুয়ে আছে ক্লিউপেট্রার নাইটি…
এ কি মৃত্যুর ঘ্রাণ? অ্যান্টনি, সিজার চেখেছিল এ সুধা!
আমার চোখকে গ্রাস করছে সম্মোহনী সৌন্দর্য—
তীক্ষ্ণ, প্রত্যয়ী, কৌশলী, কামুকী—নেচে চলছে—নিরাবরণ ও নিরাভরণ—উন্মুক্ত পদ্ম!
চাক্ষুস নাচের এ মুদ্রা আমার অপরিচিত—ঘেমে উঠছি—চোখ সরিয়ে নিলাম—নাচ সহ্য হচ্ছে না।
কামান্ধ হাওয়া দ্রুত শরীরে এসে বসে। অঙ্গ শীতল—লোম কাঁপে—মর্ম জাগে—চোখ নড়ে—ঘরময় ছুটে চলে—ক্লিউপেট্রা—শরীর—সুতীব্র ঘ্রাণ! দখলকৃত আঁধারে চাঁদের আলো ঢুকে হাসে।
পর্দা টেনে দেই—জানালার—চোখের…
গাঢ় রাতে শুয়ে পড়ি ক্লিউপেট্রার ঘ্রাণ মেখে…
পত্র
মর্ম—স্পর্শকাতর চিরপথ!
নিভৃতে—যে বোধ এসে ধাক্কা লাগে
তা আলোকগুচ্ছ শব্দে সাজানো মর্মপত্রের কপি
ধুলোর কোরাস—কিন্নর বেশে, সুগঠিত হামলা শেষে
বুক কতটুকু ধূসর করে?
প্রকৃতির উন্মাতাল পত্রে অধিক পরিচিত হয় রাত
ছায়া, বুঝিয়ে দেয়—ধৈর্যের দিনলিপি নিভৃতে গাঢ় হয়, সমৃদ্ধ হয়
রাত—ঘন আর কালোকে সুন্দর করে
তাতে যে পত্রের প্রকাশ ফুটে উঠে তা আলো-আঁধার কেটে ঔজ্জ্বল্য রঙ আনে।