চেতনার বাইরে । মাসুমা অাক্তার রুমা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০১৬, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ, | ২৫৮৭ বার পঠিত
চেতনার বাইরে
চায়ের কাপে জমে আছে রাতের মধ্যভাগ।
প্রেমের আকাশে ধুমকেতু হয়ে
৭৫ টি লগ্ন পেড়িয়ে
উদয় হবে তোমার অবয়ব ।
চোখের ভেতরেও থাকে চোখ
সে চোখে ঝরে অশ্রু
তৈরী হয় গভীর সমুদ্র ।
মনের সীমানা পেরিয়ে
পেছনে তাকিয়ে ভাবি
হবেনা ফেরা আর।
অধিকারের উইল গেছে ছিড়ে
স্থানচ্যুত হৃদয়ের কেন্দ্র হতে।
আজ তোমার হাতের মুঠোয়
আমার পুরোটা জীবন ।
হৃদস্পন্দন
অনেক দিনের ইচ্ছে অামার—
তোমার হৃদস্পন্দনের সাথে
অামার স্পন্দনকে মিলিয়ে দেখবো।
স্পন্দনের গতিবিধি নাকি
ভালবাসার স্পর্শে ওঠানামা করে
প্রিয় মানুষের নাম উচ্চারণ করে ক্রমাগত।
প্রিয়তম-তোমার স্পন্দন কি
প্রতিনিয়ত অামার কথাই বলে?
তোমার এই অস্থিরতার কারন কি
কেবলই অামি ?
নাকি হৃদরোগাক্রান্ত তুমি?
সত্যি করে বলবে কি?
পুনর্জন্ম
জন্ম থেকেই অদৃষ্ট আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে
জীবনের জটিলতার পরিপূর্ণ স্পর্শ উপলব্ধির সুযোগ করে দিয়েছে।
এ শরীরে যেদিন পরিবর্তেনর দমকা হাওয়ার ঝাঁপটা লেগেছিল
বুঝেছিলাম এক বিস্ময়ের অপেক্ষায় সমগ্র পৃথিবী ।
এরপর অনাগত ভবিষ্যতের জন্য কেবলই স্বপ্নের জাল বোনা।
মাঝে মাঝে সময়ের কাঁধে ভর করে আসা
কিছু আধ্যাত্মিক শব্দের প্রয়োগে
সকলের নিকট মুহূর্তেই পাগল বনে যেতাম।
ওরা যখন বোকার মতো হাসতো আমি তখন কান পেতে মগ্ন ধ্যানে।
বলেছিলাম সে আসছে,এবার অভিশপ্ত জীবনের ঘটবে সমাপ্তি,
অবহেলার পাহাড় কেঁটে তৈরী হবে শ্রদ্ধার মিনার।
কখনো বা ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে সেও বলে যেত-সম্ভব না, এ সম্ভব না।
আমি বলতাম-সে যা জানে সত্যিই আমরা জানিনা।
সেদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি-আমি আর আগের মতো নেই
চিন্তা-চেতনায় পরিপূর্ণ এক মানুষ।
সেদিন সূর্যের চোখে আনন্দ অশ্রু দেখে অবাক পৃথিবী আরও অবাক হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গোনে।
আর তুমি আমার পুনর্জন্মকে আশীর্বাদ ভেবে নিজেকে সপে দিলে স্রষ্টার নিকট
এই পুনর্জন্ম পৃথিবীর ললাটে এঁকে দিল ভালবাসার নতুন তিলক।
রক্তজবা
এ শরীরে অার মানুষ জেগে ওঠে না ।
জেগে ওঠে না কোনো স্বপ্ন, প্রত্যাশা;
বিশ্বব্রহ্মান্ড ছুঁয়ে দেবার অাকুলতা।
জেগে ওঠে না কোনো কবিতা
কবির প্রতি অাজন্ম প্রেম।
ইচ্ছে করে না জিইয়ে রাখি
সময়ের ল্যাম্বপোষ্টে
সূর্যের সোনালী অাভা
ইচ্ছে করে না বিস্ময়কন্যার মতো
অবলোকন করি দুরন্ত মেঘের গতিবিধি।
কেবল ইচ্ছে করে চাঁদনী রাতে
একটি দুর্লভ পদ্ম বুকে জড়িয়ে
নির্জন প্রকৃতি হয়ে যাই চিরতরে।
অনিয়ম অার অসামন্ঞ্জস্যতা
চলমান সময়কে অালিঙ্গন করে
অন্তরাত্মায় পুতে দিয়েছিল একটি রক্তবীজ।
যে বীজ হতে জন্ম এক রক্ততাক্ত ফুলের
নাম যার রক্তজবা।
এ শরীরে অার মানুষ জেগে ওঠে না
জেগে ওঠে শুধু এক রক্তজবা।
বিস্ময়কন্যা
অাজকাল প্রায়ই হৃদয়ের গভীর থেকে
প্রবাহমান নদীর মতো
কিংবা ঝরনার বুক চিরে
ঝরে পড়া স্বচ্ছ জলের মতো
অথবা রাতজাগা পাখির মতো
এক অনাগত ভবিষ্যতের ধ্বনি
ভেসে অাসে।
তখন রক্তচোষা বাদুড়ের মতো
নির্মম বাস্তবতাকে ছুঁড়ে ফেলে
হয়ে যাই কোনো সাদা পায়রার প্রতিমূর্তি।
হয়ে যাই ডানপিটে গ্রাম্য শিশুর
সুতোকাঁটা ঘুড়ির মতন
কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় উড়ন্ত
শুকনো পাতার দল
অথবা অল্পবয়সী গ্রাম্য নারীর
সদ্য পড়া নাকের নোলক।
মুহূর্তের জন্য নিজেকে মনে হয়
অামি যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়কন্যা।