প্রকাশিতব্য বই কবিকে নিয়ে কবিতা থেকে ৭টি কবিতা । পিয়াস মজিদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ, | ৩২২৩ বার পঠিত

জীবনব্যথা, জীবনানন্দ
রোদে পুড়ে তামা হয়ে যাওয়া
সোনালি চিলের ডানা খুঁড়ে
জাগিয়ে তুললাম
করুণ কঠিন ছায়াপাতের দিন।
রক্ত-ক্লেদ নিরন্তর
আর স্বপ্নে
একগাছা ধূসর দড়ি।
তাই এখন
দেশপ্রিয় পার্কের মোড়ে
তুমি আসতেই
রাত্রিকে নিঃসঙ্গ করে
মধুকূপী ঘাস আমি;
সুন্দর সে ট্রামের তলে
মাথা পেতে দিলাম।
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ
ওই ঘরে জাদুভস্ম।
ছাইয়ে, অঙ্গারে
সুতীর্থ
কারুবাসনা
নক্ষত্রের দোষ।
দরজাটা খুলে কে ঢুকল?
পাপ ও পুণ্যের সওদাগর।
আজ রাতেই বসবে
তোমাদের লাভালাভের মুশায়েরা।
আর আমার দোলনায় মা ছিটিয়েছিল
থোকা থোকা বলির কুসুম।
গন্ধের লোভে ট্রাংক ভেঙে বেরিয়ে পড়েছে
উৎপলা, মাল্যবান।
রিমঝিম মাংসবিতান
বরিশালের বেলস্পার্কে বসে
জীবনানন্দ বিকেলকে বলছিলেন
ফুলপাখিতরুলতার আবডালে
ব্যাপক-বিপুল মাংস মহোৎসবের কথা।
বিকেল ঠিক জানে কিন্তু ক’জন বুঝি
এই ঘুমন্ত নিসর্গনেপথ্যে
রক্তগর্ভ নানা উন্মীলনের গল্প?
কুসুমকলির আড়ালে কীটমাংসের আরাধনা তো
জীবনানন্দের জন্মের আগেও ছিল
মাংসোদ্ভূত রণরক্ত সাফল্য কি ব্যর্থতার গল্প
এমন করে কেউ তো বলল না;
সব কেবল ফুল্ললিত সামন্ত বন্দনা!
ওই দ্যাখো দেশপ্রিয় পার্কের মোড়ে
মাংসচর্বি-ভুরভুর ট্রামকাটা
জীবনানন্দ নাম্নী অনন্ত শতাব্দী
নির্বিকার ঝুলে থাকে;
তার গা থেকে টপ টপ ঝরে পড়ে
আধুনিক বাংলা কবিতার লীলাবিধুর রক্ত।
চাঁদের অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে রাখা যায় না কারণ চাঁদ তো শুধু চন্দ্রিমা নয়, তার স্থাপত্যে কোটি কোটি মনুষ্যদৃষ্টির অশ্রুময় ছোপ। দূর বাগানে হরিদ্রাভ ছুরিকার ঝাড়। আর কৃপাণের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে রক্তাভ কুসুম। যেতে যেতে সমুদ্র। আমরা সুরভিবিরহিত তবে জল ঠিকই শুষে নেয় ফুলের ছন্দ। অতঃপর সবাই মিলে ভেসে চলি একটা গোপন দৈবের নৌকায়।
আলেখ্য র্যাঁবো
রাত হল
বেবুনের বিস্তৃত আত্মকথা;
এক একটি পৃষ্ঠার জন্য বরাদ্দ
অভিশপ্ত চোখ আমার।
দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে
যেদিকেই যাই
লিরিক-প্রস্রাবকারীর সরাইখানা;
যদিও জীবন ছিল
কুকুরের পরিভাষাময়
তবু স্বর্গীয় সব মচ্ছবে ফেনিল
তোমাদের বর্ষা-বসন্ত।
অদূরে এক নিঃসঙ্গ আবর্তে
সযতনে বাঁচিয়ে রাখে কেউ
সুনীল নরকের নন্দন।
বোর্হেসের ছায়ায়
চাঁদের অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে রাখা যায় না
কারণ চাঁদ তো শুধু চন্দ্রিমা নয়,
তার স্থাপত্যে
কোটি কোটি মনুষ্যদৃষ্টির অশ্রুময় ছোপ।
দূর বাগানে হরিদ্রাভ ছুরিকার ঝাড়।
আর কৃপাণের ভেতর দিয়ে
বয়ে গেছে রক্তাভ কুসুম।
যেতে যেতে সমুদ্র।
আমরা সুরভিবিরহিত
তবে জল ঠিকই
শুষে নেয়
ফুলের ছন্দ।
অতঃপর সবাই মিলে ভেসে চলি
একটা গোপন দৈবের নৌকায়।
আবুল হাসান জানালেন
উদিত দুঃখের দেশে
লাবণ্যবিকাশ পাথরের পা ছুঁয়ে
সরলরেখা-সমস্তে খুঁজেছি
কোথায় আমার পৃথক পালঙ্ক!
রাজা গিয়ে রাজা চলে আসে
তবু অশেষ তোমার
হরণের কাল।
জীবন মানে
বিরহের বর্ণমালা মুখস্তের ক্লাস,
তবু মাঝেমধ্যে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে
জেনে যেতে থাকি—
মিলনই অনন্তমৌলিকের নাম।
পরিস্থিতি
হৃৎকমল খুঁজছিলেন
শঙ্খ ঘোষ;
পেলেন —
ধাতব কলকাতা।