ফিরে দেখা জাতীয় চলচ্চিত্র উত্সব ২০১৫
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫, ৫:২৫ অপরাহ্ণ, | ২১০০ বার পঠিত
![](https://raashprint.net/files/uploads/2015/12/Untitled-w3-.jpg)
সুবর্ণ বাগচী : দেশের জেলাশহরগুলোতে এইবার একযোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চলচ্চিত্রোৎসব। সদ্য শেষ হওয়া ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উত্সব ২০১৫’ গোটা দেশের ৬৪ জেলায় আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ১০ ডিসেম্বর ‘সবার জন্য চলচ্চিত্র, সবার জন্য শিল্প-সংস্কৃতি’ স্লোগ্যান্ নিয়ে ১৫ দিনব্যাপী সিলেট অংশের উত্সবের উদ্বোধন করেছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ২৪ ডিসেম্বর উত্সবের সমাপ্তি হয়েছে।
সিলেটের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে উৎসবের প্রদর্শনীগুলো হবে জেনে চলচ্চিত্রপিপাসু দর্শকেরা আগ্রহী হলেও বাস্তবে সন্ধ্যা-পরবর্তী শোগুলো হয়েছে একাডেমির চত্বরে খোলা আকাশের তলায়। এমনিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎসব চলাকালীন শুক্রবার, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন বিকাল ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় একটি করে এবং অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৬টায় একটি করে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে মর্মে দেশব্যাপী বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল। উত্সব উপলক্ষে বেরোনো প্রচারপত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনটিকে প্রেক্ষাকক্ষ হিশেবে প্রচার করা হলেও সন্ধ্যা-উত্তর প্রতিটি প্রদর্শনী হয়েছে উন্মুক্ত ও কনকনে হিমের হাওয়ায়। শিশিরে-কুয়াশায় ন্যাতানো মুমূর্ষু উপস্থিত দর্শকদের ত্রাহি অবস্থায় ব্যবস্থাপনাকারী কারোর কোনো ভ্রুক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির এহেন দায়সারা ভাব চলচ্চিত্রামোদীদের কাছে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।
এমনিতেই এবারকার পৌষ সিলেটে জেঁকে বসেছে মাসের শুরু থেকেই। বিগত একপক্ষকাল ধরে হাড়কাঁপা শীতে শহরবাসীরা কাতরপ্রায়। এর মধ্যে শিল্পসংস্কৃতির সুধা পান করতে গিয়ে শীতার্ত দর্শকভোক্তাদের দশা প্রায় কাহিল। সন্ধ্যা-উত্তর শোগুলোতে এই শীতসুরক্ষা-ব্যবস্থাপনাহীনতার কারণে দর্শক সমাগম শুরুর দুই-তিনের মধ্যে কমে গিয়ে একেবারে তেরো-চোদ্দজনে এসে ঠেকে। এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশু উদ্যোগ আছে কি না, জানতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ব্যক্তিবর্গের কারো নাগাল সান্ধ্য শো চলাকালীন পাওয়া যায়নি। সিলেট শিল্পকলা একাডেমির একজন সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই শীতবিধ্বস্ত প্রদর্শনীপ্রান্তরে বৈকালোত্তর অধিবেশনে এই প্রতিবেদক দেখতে পাননি। নিজেদের ভেন্যুতে ডেকে এনে খোদ আমন্ত্রকবর্গের এহেন অনুপস্থিতিজনিত অসৌজন্য সমালোচিত হয়েছে। এমনকি মিলনায়তন তথা প্রেক্ষাগার তালাবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকলার কর্তাব্যক্তিরা প্রস্রাবাগার তালাবদ্ধ করে যাবার ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে।
১৫ দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘বৈষম্য’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘কাচের দেয়াল’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ি ’, ‘মেঘের অনেক রং’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘গেরিলা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘কমন জেন্ডার’, ‘রানওয়ে’, ‘বৃহন্নলা’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘ঘাসফুল’, ‘আধিয়ার’, ‘লালন’, ‘ঘুড্ডি’, ‘সারেং বৌ’ এবং ‘সুতরাং’ প্রভৃতি বাংলাদেশের নতুন দিনের সুস্থধারার উন্নত চলচ্চিত্রগুলো। প্রশ্ন হচ্ছে, দেখেছে কয়জন? নগদ দর্শনী ব্যতিরেকে এই জাতীয়-পর্যায়িক আয়োজনে এহেন বেহাল দশা ভাবিয়ে তুলেছে জেলার চলচ্চিত্রকুশলকামী ব্যক্তিবর্গ সকলকে। দেশের অন্য ৬৩ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি একই আচরণ করে থাকলে এই উত্সব আয়োজনের লক্ষ্য ও অর্জন নিয়ে পুনর্ভাবনা এবং পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই। শীতকালে এদেশের বেশিরভাগ উত্সব আয়োজিত হয় স্বাভাবিক ও সংগত কারণে। এইভাবে দায়িত্ববাহক প্রতিষ্ঠান শীতে কাবু হয়ে সুখী গৃহকোণের উষ্ণ আরামে যেতে চাইলে সেই প্রতিষ্ঠানের কাঁধে ভবিষ্যতে দায়িত্ব অর্পণের আগে সিদ্ধান্তপ্রণেতারা ভাববেন বলে আশা রাখছেন সবাই।