বড়ছড়া । আহমদ সায়েম
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৫, ১:০৭ অপরাহ্ণ, | ২৪৩২ বার পঠিত
বিশাল মরুমাঠ সারাদিনের রোদে-পোড়া শরীর ছুঁলে মনে হয় যেন দগ্ধজাত যন্ত্রণায় পোড়া পাঁজর; হাতের রঙ আর অন্ধকারের দূরত্ব বেশি নেই, হাত-পায়ের ছায়া দেখলে মনে হয় ভূতের শহরে হাঁটা হচ্ছে, প্রতি সন্ধ্যায় জন্ম নিচ্ছে ভূতের ঘরবাড়ি, বোবা কান্নায় সিঁথির মতো বেঁকে চলে ছোট্ট নদী, সন্ধ্যাকালীন সংগীত বাজে আকাশে, ভয়ে ভয়ে পাহাড় ঘেঁষে হাঁটলে পাশ থেকে শব্দ আসে : হাতের তালুতে যাদের নাম লেখা আছে তাদের ভাষা হচ্ছে : ঝলমলে আলোতে কখনোই উত্তরীয় দেওয়া হয় না
খ
একা একা নিজেই নিজের কাছে ব্যক্ত করি কল্পনাপ্রসূত ইচ্ছেগুলো, তড়িঘড়ি সাজিয়ে রাখি বাস্তববোধসম্পন্ন দুরন্ত পুরাণ কথা —সতত উচ্চারিত বাক্য দিয়ে মিথ্যে করে দেয়া হয় নদীদীর্ঘ পথ ও ছন্দ; তবু যদি কিছু কিছু মুখ মনে না-রেখে কাজ করা হতো, কোনো সম্পর্কের নির্জনতা না-ভেবে দেখানো হতো অসাধারণ কিছু অশ্লীলতা, এতদিনে একটা ঠিকানা হয়ে যেত; —অবজ্ঞা নিয়ে হলেও তৈরি করা যেত শব্দের পুতুলগৃহ
গ
জিরো পয়েন্টে দাঁড়ালে নিজেরে ইঁদুর মনে হয়, বড়ছড়া নাম নিলে মনে আসে কালো রঙের কয়েকটি ভূতের বাড়ি আর শয়ে শয়ে ট্রাকের লাইন যাদের গায়ে ভূতের গন্ধ; —বিশ্বাস করো আকাশ-সমান মাঠের মাঝে যখন নিজেরে আবিষ্কার করি হাতের আঙুলে কামড় দিয়ে জানতে হয় ইহা আমারিই ছায়া, যারে ইঁদুর ভাবছি সে আমারে বলছে ভূতের বাড়ি
ঘ
প্রাচীন শোকেসে ধুলোর সংসার তার পরতে পরতে খেলা করছে টিকটিকির ডিম, যেন কতকাল পরে শুরু হয়েছে ধর্মপাঠ, নবাগতের আগমনে উৎফুল্ল সুর উড়ছে ক্ষুধার্ত মহাজনের পকেটে, আবারও অবিশ্বাস ও দংশনের একটি পত্র রচিত হবে; তা না-হলে ভ্রান্ত প্রতিভাগুলো আরো কয়েক পৃষ্ঠায় প্রচারিত হয়ে যাবে…
ঙ
নদীর স্রোত যেন বারে বারে সে-কথাই বলে গেল—কোনো পোশাকে রহস্য ফুটায়ে তোলা অতিমানবীয় কোনো কর্ম নয়, ফলন আসার জন্য যে-সকল বিশ্বাসের প্রয়োজন তা সন্ধ্যায় কারো হাতেই ছিল না, বৈচিত্র্য থাকতে হবে এর জন্য আত্মবুদ্ধি নিয়ে স্রোতের বাইরে চলাই হবে আদর্শ, মাঝে মাঝে মনে হয় গাছের পাতাগুলোই জ্ঞানী, প্রোজ্জ্বল তার রূপ-নৃত্য, সকল কর্ম মিথ্যে করে তুলাতো বেশ সহজ আবার জলের শব্দেও কাঁপে বুক…পিতার মুখ মনে পড়ে; উদ্বাস্তু —তা হবার কোনো কারণ খুঁজে পাই না… নিশ্চল মেঘ প্রতি আষাঢ়ে এসে দাঁড়িয়েছে শাপগ্রস্ত যক্ষের মতো, ফের ফেরি করি অচেনা সুর শ্রাবণপিপাসা…
চ
কয়লার চিপায় জ্যোৎস্নার আলো খেলা দেখে মনে হয় কোনো রহস্যময় ফুলের ইমেজ, এখানে গৃহস্থ গাভী, মানুষ আর শেয়ালের শব্দ কড়া অন্ধকারে মোড়ানো, রাতের ভেতর মুদ্রাগুলি বস্তায় বন্দি করা হচ্ছে, তখনও জীবন্ত জ্যোৎস্নার খেলা, বিএসএফ-এর হুইসেলে শেয়ালের কান্না ভুতুড়ে অন্ধতারে জাগিয়ে দেয়, লাল চোখে অন্ধ দৃষ্টি, তবু সময় কাটে আনন্দে, নরম বিড়ালের হাঁটাহাঁটি…তব অন্ধতারে বলি চুম্বনগুলো তুলে রাখো নদীর ওপারে, লাল ফিতার উঠানে আর কোনো দৃষ্টির জন্ম দেওয়া যাবে না
ছ
উঁচু-নিচু পাথরের রাস্তা পেরিয়ে বালুর মেঘে যুক্ত হচ্ছে কয়েকটি কৌতূহল, যা দিয়ে একদিন তুমিও সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে, এখানে সান্ত্বনার জন্য যে মুর্দার চর্চা হয় তার গায়ে কোনো ডানা নেই অথচ ওড়ার আগে বিড়ালের শিল্পকৌশল প্রকাশ পেয়ে যায়…
জ
ঘুমের ভিতর যেসব শব্দ হয় তার কোনো ঠিকানা দিতে পারি না, শত-শত ভ্রমণকারী অথচ কেউ জানে না ধর্ম-সংসার-কর্ম কারোরই কোনো শব্দে পাঠকরা যায় না, গাছ ও পাতার সবুজে জড়িয়ে থাকে—কিছু হলুদ শব্দ যার শানে-নজুল শুধু ঈশ্বর জানেন…জোড়া পয়োধরে যেসব পদধ্বনি খেলা করে তা দিয়ে হয়তো কবিতা লেখা যাবে কিন্তু অর্থ তোলা হয় বিবাগী হবার…শব্দের যেসব শব্দ তোলা হয় তা ছিল ঈশ্বরের ঘুমন্ত নিঃশ্বাস
ঝ
হয়তো উজ্জ্বলতা আসে তাই এত লম্বা সিঁড়ি রাখা হয়েছিল পাহাড়ের গায়ে, কৃষকের গায়ের প্রসাধনী দিয়ে যে সৌন্দর্য পাঠ করা যায় তা শুধু ভ্রমণকারীই জানে, এবার তাদের বসন্ত দেখে উড়িয়ে দেওয়া হবে কিছু ক্লান্তি, তাই খেউরি মাথায় আপত্তি তুলি না কোথাও, ওগো ঠোঁটে তোমার স্থিরতা ফুটিয়ে তুলব, শুধু একবার ধূসর রাতের পরে আশ্রয় দিও…
ঞ
সময়গুলো সাঁতার দিতে দিতে দ্রুত শেষ হয়ে আসে বিজ্ঞাপনপর্ব, বসে বসে ঠোঁট মিলাই, মজ্জায় কিছু অভিমান খেলা করে যা এখনো রিহার্সেল করা হয়নি, মায়ের লালশাড়ির মতো বাঁকানো দীর্ঘ পথ রাতের লগনে অসংখ্য অসহায় নাম ঘূর্ণি হয়ে ঘুরে, ক্রমে ক্রমে নেশায় অটুট শরীর তব বিজ্ঞাপনে ঠোঁট মিলাই, পাখিদের শরীরে দেখা যায় অস্থিরতার কয়েকটি শব্দ—কখনো স্বচ্ছতা নেই তব হাটে, অথচ বারবার ভুল করে ফেলে আসি জন্মস্বভাব; এর কিছু দিন পর জেনে যাই মুখস্থ ছিল ছায়াদের নামতা…
* * *