অজানা সময় ও কুমারিকা’র কবিতা । শুক্লা মালাকার সাহা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০১৫, ৪:৫৫ অপরাহ্ণ, | ৩১০০ বার পঠিত
দেশ
সেই কবে গিয়েছিলাম নতুন দেশে
কিশোর মন কুয়াশায় দিক হাতড়ায়
লাজুক রোদ্দুর ভাসে।
স্বপ্ন ঝরে, মন স্তব্ধতা পাও
নিঝুম পিছুটান
ছবিতে দাও শরীর, এসবই আলেয়া
মাতাল কবিগান।
ছড়িয়ে যেতে যেতে
বেচারা দেশ
সেই কবে ভাগ হয়ে গেছে,
তবুও তো আছি পাশে
রক্তঝরা দিনে রাতে
চোখে রুমাল বেঁধে দু একটা স্বপ্নও আসে
প্রজাপতি শুকিয়ে কাঠ
গভীর আকাল
রাতটুকু কেটে গেলে
কালকে আবার সকাল।
ভাঙনের আগে
তারপর
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ
দরজার বাইরে পা বাড়ানো সম্পর্কের তলানি ছেঁকে
আগামীর রসদ কুড়োল খানিক
সং-সারীর ভাঁজ খুলে খুলে দেখে নীল শিশিরের ফোঁটা
চাঁদনি রাতের গান, পান পাত্রে উছলে পড়া খুশি
মোবাইল আকুতি, যুদ্ধক্ষেত্রে মত্ত তৃষিত পশুর ডাক
রক্তভেজা চোখের একলা হয়ে যাওয়া –
একে একে সব দেখে নিচ্ছে,
দেখে নিচ্ছে নিয়ন আলোয় অসহ্য রাত ধুয়ে
জীবাশ্ম জলসাঘর।
পা ফেলে ফেলে পেরিয়ে গেল ওরা নিজেদের নরক
তারার থেকে তারায় ফুটে থাকা স্বর্গের হাতছানি
চুরমার করে দিল গণ্ডি
আর দু চার দিন থেকে যাবার কথা বলল না কেউই
ঘরের ভেতরে হাত পেতে চাইল না
ফেলে যাওয়া রুমাল, জলের বোতল
অজানা ভবিষ্যতের দুই মৌমাছি
চুপিচুপি বাক্সবন্দী করে নিল গোপন ইশারা
তুমি হেসো না সময়
ভাঙনের আগে ওরা কপালের ভাঁজ
চোখের পাতা কুড়িয়ে তুলছে।
অজানা সময়
চুরমার হয়ে যায় সময়
কুঁচি কুঁচি ভালোবাসা এদিকে ওদিকে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
মন ভর্তি মাটি, পাঁক,
ভুতের সন্তান সব
খোলামেলা দিন সাহসী রাত মাখা
প্রগতিশীলতা-র মোড়কে প্রজন্ম
‘ইতিহাস ঘেঁটে দেখ কত শত নিন্দুকের
সমালোচনার ধারে কেটে কেটে
আধুনিকতার হাতেখড়ি হয়’ –
একথার পরেও থেকে যায় অনেক কথা
এ এক অজানা অস্থির সময়
বাজারীকরনের চোরা স্রোতে
ভেসে যেতে যেতে হারিয়েছে হুজুগ
রোমান্টিকতা, কৃষ্টি, নস্টালজিয়া, উদারতা
শুধুই ঝাঁ চকচকে মোড়ক,সবই পণ্য
আমিত্বসর্বস্ব নতুন দিন
আমিত্বহীনতার উপন্যাস ভুলে
এক লাইন কবিতার ছবি।
পরিণত
কুড়িয়ে নাও তোমার সব দহন
জাগিয়ে তোল সত্তা
সারা দিনমান দেখশোনা শুধু তিক্ততাই আনে
মশারির ভিতরের প্রেমে সময়
চুপিচুপি দেয়াল গড়ে,
থাকেনা চিরকাল জুঁই ফুলের ঘ্রাণ।
কুড়িয়ে নাও তোমার ভালোবাসা
মুক্ত কর হৃদয়
দুটি মন প্রতিক্ষণ এক হতে পারে না
সকলের ই থাকে একেলার জগৎ।
কোনো ঘর বেঁচে থাকে না চিরকাল
হয় সশব্দ বিচ্ছেদ কিংবা নিঃশব্দ ছাড়াছাড়ি
সময় বয়ে চলে
থেকে যায় শুধু
অনুচ্চারিত অভিযোগের ঝরনা।
আমি কুমারিকা
পথ বেঁধেছি পথে
ছাড়ব সে কোন মতে
কে ভেঙ্গেছে সিঁড়ি
সেও আমি এই আমি
পাথর দেয়াল ভুলব বলে
চোখ ভরেছি আগুন জলের সাথে।
শহর আকাশে রাত্রি সরছে দ্যাখো
জাগছে পাখি জাগছে গাছ গাইছে মনের ছুতো
আমায় নিও লোক দেখানি খেলায়
মেলার থেকে মেলায়
পেরিয়ে যাবো জলের কোলাহল, থাকবে না
আর ক্ষতের মরা স্মৃতি
পেরিয়ে যাবো রূপকথাদের ডেরা
আমরা যাবো যেখানে নেই ফেরা
দাও ফিরিয়ে আমার সেই মাটি, মরবো
তবু এপথেটেই হাটি
পাতার কলি কাঁদুক একা একা
আমার চোখে সপ্তপদী আঁকা
একটি নারী, হারিয়ে যাওয়া আমি কুমারিকা
একটি কুমারিকা।
তোমার আমার জীবন কথা
তোমার আছে সাজানো বাগান সুখের হাতছানি
আমার মনে ঘুরে ফিরে কাঁদে সুদিনের আশাখানি
নরম গদি ঠাণ্ডা ঘরে স্বপ্নেরা আঁকিবুঁকি
আমার ঘরের একচালাতে চাঁদের উঁকিঝুঁকি
তোমার যাপন পড়া ছবি গান মজা আর খেলাতে
ভাঙছি ইট গড়ছি দেয়াল ফোসকা পরা হাতে
তোমার আকাশে মেঘের ভেলা কল্পনা কাশবনে
এসেছে শরৎ লাগেনি পরশ আমার কিশোর মনে
তোমাদের পুজো আলো ঝলমলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
আমি আর ভাই রাস্তার ধারে কুকুরের দঙ্গলে
আমার জীবনে তোমার জীবনে কি করে মিল হবে
ছেলেবেলাটাকে পাই না তো খুঁজে জীবনের উৎসবে।
পথ তুমি
বৃষ্টিকে বোলো ধুয়ে দিতে সব
অভিমানে টসটসে মন,ছোপছোপ হলদে জীবন।
দিগ্ ভ্রান্ত বরষায় চোখ মেলে দেখ
উদোম ধান মাঠের ওপারে আদিগন্ত একলা পথ
তুমি ডাকলেই দিশেহারা আলভোলা টান
সেই ডাকে চলে যেতে পারি যতদূর খুশি-
লেবু পাতার গন্ধ গায়ে মেখে
সেই তিতির কান্নার মাঠে,
মেঘের চাদর জড়িয়ে চল
খোঁজ করি সেই ছেলেটার
যার নাম অরণ্য, আকাশ বা অমলাকান্তি
যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
ভুলে সবাই যায়
ভুলে সবাই যায়
যে পাতা সবুজ জড়িয়ে মায়ায়, তার
ঝড়ে যাওয়া হলুদ মনে রাখেনা গাছ,
তারা খসার রাতে তারারা থাকে নিমগ্ন
আলেয়ার বাতি জ্বেলে।
কতটুকু মনে রাখে নদী
যে স্রোত মোহনায় মিশে সাগর হয়।
গোধূলির আলো মিলিয়ে রাত মনে রাখে না সে দিন।
কী করে মনে থাকবে চোরকাঁটা লাগা শাড়ির আঁচল
কাজের মাঝে দিন, প্রাণহীন মুদ্রাসঙ্গম।
ভুলে সবাই যায়, সময় মিলায় কালে
কল্পনাহীন এ পথ মিলাক হেমন্তের মিঠে রোদে
অবাধ আকাশের নীলে,
পাখিদের বহতা পাখায়
মায়াবী চেতন পার হয়ে যাক দীর্ঘ ইতিহাস।
হৃদয় সুড়ঙ্গে ধুনি জ্বেলে কথাটুকু থাক
সে ছিল, তবু সে ছিল।
# # #