‘Dheere Dheere’ Remake By ‘Yo Yo Honey Shing’ (একটি ক্ল্যাসিক মাস্টারপিসের অপমৃত্যু… !!!) । মোঃ অনিকউজ্জামান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, | ৩৪৫৯ বার পঠিত
আজকাল বলিউডে রিমেকের খুব হিড়িক পড়ে গেছে। মুভিতো হর হামেশাই রিমেক হচ্ছে। কোন কোন রিমেক অরিজিনালকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং বক্স অফিস মাতাচ্ছে আবার কোনটা অরিজিনালের ধারে কাছেও পৌছাতে পারছে না যার ফলাফল বক্স অফিসে ভরাডুবি। তাই বলে রিমেক কিন্তু থেমে নেই, সেটা তামিল মুভিরই হোক আর ক্ল্যাসিক বলিউড মুভিরই হোক। এখন আসা যাক, গানের জগতে। ইদানিং রিমেকের হাওয়া আবার অডিও বাজারেও পড়েছে, যার নতুন ফলাফল ১৯৯০ সালের জনপ্রিয় কাল্ট রোমান্টিক মুভি ‘আশিকী’ এর ‘কুমার শানু’ ও ‘অনুরাধা পারুয়াল’ এর কন্ঠে গাওয়া বিখ্যাত রোমান্টিক ক্ল্যাসিক ‘ধীরে ধীরে সে মেরে জীন্দেগী মে আনা’ গানের রিমেক। সেই সময় ‘আশিকী’ মুভির গানগুলো মূলত তৈরী হয়েছিল এলবাম প্রকাশের উদ্দেশ্যে, পরবর্তীতে যখন ‘মহেশ ভাট’ সেই গান গুলো শোনেন, তার কাছে গানগুলো এতই ভাল লেগে যায় যে তিনি এই গানগুলোর উপর বেজ করে গোটা একটা মুভিই বানিয়ে ফেলতে চান এবং ‘টি-সিরিজের’ প্রতিষ্ঠাতা ‘গুলশান কুমার’ এর কাছে যান এ ব্যাপারে অনুমতি নেবার জন্য। বাকিটা ইতিহাস ! ‘গুলশান কুমার’ এখন বেঁচে নেই। তার ছেলে ‘ভুশন কুমার’ এখন ‘টি-সিরিজ’ এর দ্বায়িত্বে আছেন। অতঃপর তাহারা সকলে মিলিয়া ঠিক করিলেন সেই ক্ল্যাসিক রোমান্টিক গানের আধুনিক রিমেক ভার্সন বের করিবেন। ভাল কথা, আমরা এমন অনেক ক্ল্যাসিক গানের রিমেক এখন শুনে আসছি, আমাদের কাছে ভালও লাগছে। কিন্তু আমার মাথায় ইহা কাজ করিল না যে তাহারা কোন দুঃখে ‘ইয়ো ইয়ো হানি সিং’ কে এই গুরু দ্বায়িত্ব দিল তার কন্ঠে এই আবেদনময়ী গানটি ধারণ করার ? আমি জাস্ট এই মাত্র গানটি ডাউনলোড করে দেখছিলাম, কিন্তু কয়েক লাইন শোনার পরে আমার আর রুচী কাজ করছিল না এই গানটি পুরোপুরি শোনার। শুধু মাত্র ‘হৃতিক’ ও ‘সোনম’ এর ক্যামিস্ট্রি দেখার জন্যই গানটি পুরোপুরি দেখলাম এবং অনেক আফসোস নিয়ে এই লেখাটা লিখতে বসলাম।
এখনকার বলিউডের গান হিট করার কিছু ফর্মুলা আছে। গানের ভিতর কিছু পাঞ্জাবী লাইন ঢুকিয়ে দাও, কিন্তু র্যাপ মার্কা লাইন ঢুকিয়ে দাও, কিছু ইংলিশ অর্থহীন লাইন ঢুকিয়ে দাও, তারপর সেই গান কোন অগা-মগা-বগাকে দিয়ে গাইয়ে একটা ল্যাপটপে ঢুকিয়ে সাউন্ড মিক্সিং করে কন্ঠ একদম চিকন করে সুরেলা বানিয়ে দাও, ব্যস গান হিট। কারণ, বলিউডের মগজহীন শ্রোতা-দর্শকেরা আছে না ? তারা তো এই ধরণের গানই পছন্দ করে। আমি বুঝি না, খ্যাতির মোহ একটা মানুষকে কোন লেবেলে নামাতে পারে। ইদানিং বলিউডের নায়ক-নায়িকারাও সিঙ্গার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। ‘আলিয়া ভাট’, ‘শ্রদ্ধা কাপুর’ এবং আমাদের জনপ্রিয় ভাইজান ‘সালমান খান’ এদের কন্ঠে গান মানে তো এখন মুভিও হিট। ‘সালমান’ নাকি তার প্রোডাকশনের ‘হিরো’ মুভির ‘ম্যা হু হিরো তেরা’ গানটি শোনার পর এতই দিওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন যে মাঝ রাতে গোটা মিউজিক কোম্পনীকে জাগিয়ে সারা রাত ধরে স্টুডিওতে নিজের কন্ঠে গানটি রেকর্ড করলেন। সেই গান শোনার পর আমার মনে হচ্ছিল আমিও একখান মিউজিক কোম্পানী খুলে বসি। কিছুই লাগবে না, জাস্ট একটা ল্যাপটপ হলেই হবে। আর লাগবে ঐযে বললাম, সেই ফর্মুলাগুলো। ‘ম্যা হু হিরো তেরা’ গানে ‘সালমান’ এর ফাটা বাঁশের মত গলাকে মিউজিক, ইন্সট্রুমেন্ট ও মিক্সিং করে এমন চিকন বানানো হয়েছে যা ‘হিমেশ রেশামিয়া’কেও ফেল মারছে। এই গান শুনেই মনে হচ্ছিল গানে মিউজিক ও ইন্সট্রুমেন্ট দিয়েই কন্ঠটা এমন সুরেলা বানানো হয়েছে, মিউজিক ও ইন্সট্রুমেন্ট বাদ দিলে এই গানে শোনার মত আর কিছুই নেই। আরে, ‘কিক’ মুভির ‘হ্যাংওভার’ গানে অন্তত ‘সালমান’ এর কন্ঠ নিয়ে একটু কম কাজ করা হয়েছিল, যা শুনতেও বেশ শ্রতিমধুর লেগেছিল। একই ব্যাপার ‘আলিয়া’ ও ‘শ্রদ্ধা’র ব্যাপারেও। ‘আলিয়া’র কন্ঠ মোটামুটি ভাল আছে। তার ‘সামঝাওয়া’ গানটি মোটামুটি অরিজিনাল ছিল ও মিউজিক এবং ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবহার ছিল কম, কিন্তু ‘শ্রদ্ধা’তো কোন লেবেলের মধ্যেই পড়ে না। তার কন্ঠে ‘গালিয়ান’ গানটা শুনেই বুঝলাম তার উচ্চারন, কন্ঠ উঠা-নামা এগুলোতে অনেক সমস্যা আছে। এই ‘শ্রদ্ধা কাপুর’কেই নাকি আবার ‘রক অন টু’ তে কাস্ট করা হয়েছে কারণ সে গান গাইতে পারে। লাউ ঠ্যালা… !!! আরে বিভিন্ন গানের রিয়ালিটি শো গুলোতে যারা প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে যায় তাদের কন্ঠ অন্তত এদের তুলনায় লক্ষ কোটি গুণ ভাল আছে। ‘প্রিয়াংকা চোপড়া’ ও ‘ফারহান আকতার’ ও এই তিন জনের তুলনায় যথেষ্ট ভাল গান গায়। সবার দ্বারা সব কিছু সম্ভব না, আর টাকা থাকলেই সব কিছু করা উচিত না, এটা অন্তত মাথায় রাখা উচিত।
আচ্ছা, অনেক প্যাচাল পাড়লাম এবার মেইন টপিকে ফিরে আসি। আমাদের নারীর দিলের ধাড়কান, ইয়ং জেনারেশনের হার্ট থ্রব ‘ইয়ো ইয়ো হানি শিং’ বর্তমানে যে গতিতে দৌড়াচ্ছেন তাতে তার ‘গ্রামী’ পেতে বেশী দেরী লাগবে না বোঝাই যায়। আমি বুঝি না, এই আবালটা গায়ক ক্যামনে হল ! এইটা তো কোন জাতের মধ্যেই পড়ে না। র্যাপারদের আমি কখনো গায়ক বলবো না, আর র্যাপ মিউজিককে আমি কোন গানের কাতারেই ফেলবো না। এগুলো টোটালি আবর্জনা। এই ‘হানি শিং’ এ পর্যন্ত যত গুলো গান গেয়েছে (লুঙ্গি ড্যান্স, চার বোতল ভদকা, ব্লু হ্যান পানি’, পার্টি উইথ ভুতনাথ, ব্লু আইস, দেশী কালাকার ইত্যাদী) এগুলো জাস্ট হুজুগের মাথায় ইন্ডিয়ান মগজহীন শ্রোতাদের কারণে হিট হয়েছে। এগুলো পিওর গার্বেজ ছাড়া আর কিছুই না। এই আবালের চুলের স্টাইল দেখলেই মনে হয় গিয়ে ধরে থাবড়াই, আবার এই স্ট্যাইল নকল করে যখন পোলাপান চুল কাটে, তখন ঐ সব পোলাপানদের কমন সেন্স দেখে লজ্জায় মনে হয় কোন গর্তে গিয়ে নিজের মাথা ঢুকায় দেই। তবে এখনকার সময়ে বলিউড বেশ প্রতিভাবান কিছু শিল্পী পেয়েছে, যাদের মাঝে ‘অরিজিৎ শিং’ ও ‘অঙ্কিত তিউয়ারী’ অন্যতম। এখন ‘ধীরে ধীরে’ এর মত একটা আবেগঘন গান যা শুনলেই মন উদাশ হয়ে চায়, মনের মাঝে অনুভুতী কাজ করে সেই গান এই আবালের কন্ঠে কোন যুক্তিতে গাওয়ানো হল এটা আমার মাথায় কাজ করছে না। সেই একই ফর্মুলা এই গানেও মেরে দেয়া হয়েছে। পাঞ্জাবী লাইন, র্যাপ মিউজিক, চিকন কন্ঠ সব মিলিয়ে টোটালি বলাৎকার করা হয়েছে এই গানের। ইচ্ছা করতেছে ‘ভুশন কুমার’কে ধরে জিন্দা কবর দিতে, বাপের নাম পুরাই ডুবায় দিসে এই হারামজাদা। আবার গানের ট্যাগলাইনে লিখে দিসে ‘In loving memory of Shri Gulshan Kumar’। ফাইজলামীর একটা সীমা আছে। ভাগ্য ভাল যে ‘গুলশান কুমার’ এখন বেঁচে নেই। সে যদি বেঁচে থাকতো তবে এই গান শুনে সলিড হার্ট এটাক করতো। কেন, বলিউডে কি শিল্পীর অভাব পড়ছে ? ‘সনু নিগম’, ‘মোহিত চৌহান’, ‘কেকে’, ‘শান’ এবং হালের ‘অরিজিৎ শিং’, ‘অঙ্কিত তিউয়ারী’ এরা কি কম জনপ্রিয় ও যোগ্যতাসম্পন্ন এই আবালের থেকে ? আরে ‘হিমেশ’কে দিলেও তো এতটা খারাপ হত না যতটা এখন হইছে। আর এই গানের ভিডিওতে আবার নেয়া হয়েছে ‘হৃতিক’ ও ‘সোনাম’কে যা পুরোপুরি পাবলিসিটি স্ট্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আবর্জনা যদি হিট হয় তবে এই দুজনের ক্যামিস্ট্রির কারণেই হবে। আর কিছুই না। অবশেষে, যারা যারা এখনো এই গান শোনেন নাই বা দেখেন নাই, তাদের নিকট আমার অনুরোধ ভুলেও এই গান অন করবেন না। তাহলে আপনাদের মনে অরিজিনাল গানটি নিয়ে যে অনুভুতী আছে তার পুরাই মাঠে মারা যাবে। অনেক বলেছি। আর কিছুই বলবো না, আর কিছুই বলার নেই। বাকিটা আপনারাই ভেবে দেখেন।