নিহত দেয়াশলাই ও অন্যান্য কবিতা । তানভীর আকন্দ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০১৫, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ, | ৩৬৯৩ বার পঠিত
নস্টালজিয়া
রাত্রি গভীর হলেই কেবল মৃত কবিদের সাথে কথা বলা যায়
তখন লতিয়ে উঠা আইভিলতার নির্যাস পেয়ালা পূর্ণ করে
জং-ধরা অস্থিগুলো স্বগতোক্তি করে উঠে—আমিই সে বেহালা
দেয়ালের ভগ্ন আশ্রয়ে জন্মে উঠা জীর্ণ বাসন্তী ফুল
সে-ও নাকি করে যায় আপন অস্তিত্বসাধনা! তবে কেউ কেউ মৃত কবিদের মত
বৃষ্টির গভীর গ্রন্থিতে নিজেকে লুকিয়ে রাখে, কী এক কৌতুহলে
অজান্তেই ছেড়ে দেয়া দীর্ঘশ্বাসে ডেকে আনে এইসব বিস্মৃত কথকতা
নেফারতিতির গান
পাথরের দেয়ালে এক পাথর খণ্ড করে যায় পাথরের স্তব
চন্দনের বুক চিরে নেফারতিতির গান, যেন এক মুমুর্ষু ফোয়ারা
ধুঁকে ধুঁকে ঢুকে পরে শরীরের অভ্রান্ত নিশানায়
যেখানো জাগাও প্রেম সেখানেই ছড়িরে পড়ে ঈর্ষার প্রজ্জ্বলিত ছুরি
আদিম উল্লাসে যেন দেয়ালে আছড়ে পড়ে নেফারতিতির গান,
ঝুলে আছে পড়ন্ত রোদের জেওর— অবিন্যস্ত স্মৃতি
যেটুকু দূরত্ব তা কখনই পেরোবার নয়…
বক্ষবন্ধনী
জড়তার সমস্ত ফুল ফুটে আছে বক্ষবন্ধনীর কাছে
সন্ধ্যার সাথে সাথে ফুড়িয়ে আসে অহমের উদ্ধত পেয়ালা
মুমুর্ষু ভালুকের নিঃশ্বাসে তুমি সাজাচ্ছ এই দেহ, পেখম মেলার দিনে
তাই আজ বেজে উঠে মনে ময়ূরের রহস্য উল্লাস…
পাথরের বন
বাবলা পাতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গড়ে উঠে এইসব পাথরের বন
পথের উপর পথ, লালচে আলোয় উজ্জ্বল
বিবর্ণ বিশ্বাসে কেটে যায় সহস্র এক রাত, সমস্ত বালিয়াড়ি জুড়ে নগ্ন পায়ের
উল্লাস
জনকের জন্মদাতা সেও এক গ্রন্থাগার, প্রাচীন প্রবাদ
রাতের কুয়াশা দীর্ঘ হলে পরে লাল হয় নীল, নীল হয় জন্মহীনতার ব্যাধি
এইসব ব্যাধির গল্পজুড়ে অজস্র পাথরের বন
নিহত দেয়াশলাই
পতাকার তলে সহিসও বিলোপ হয়
এই মৃত নদী, কোথাও চড়ছে ঘোড়া?
পর্দা সরালে পরে ভুল গুলো খেয়ে যায় পিঁপড়ের দল
আপাত ভেল্কিবাজি উড়ে যায় সন্ধ্যার সিক্ত বাতাসে
কেবল গোপনে জ্বলতে থাকে আমাদের নিহত দেয়াশলাই
হ্যাংওভার
রোদের সন্ত্রাসে কাঁপে এই রুক্ষ মরুভূমি, ধূ ধূ প্রান্তর
তবু এইসব ফণীমনসার ঝোপে আবদ্ধ, শুষ্ক ধ্যানে
ক্রমশ জাগিয়ে তুলছে যেন ঘুমন্ত সাইমুম।
মৃত শামুকের খোসলে আবৃত সময়ের উচ্চ ভবনগুলো
এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ভেঙে, চূর্ণ চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় সেই রুক্ষ মরুভূমি
সঙ্গম
গভীর থেকে গভীরে পৌছায় নদী
মৃত হাঙরের পাশে পড়ে আছে উদ্ধত নিঃশ্বাস
উড়ন্ত বকের চোখে এইসব শিহরিত রাত বদলায়
অপর রাতের সাথে, ধ্যানমগ্ন শিকারির স্থিরতায়
তবু তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ যেন ঢেউয়ের ভাজে সমস্ত আকরিক ফেনা
ট্রেন
এইসব সময়ের রেলপথ কোথায় গিয়েছে চলে?
কোথায় লিখছে বিরতি কোথায় লিখছে গতি?
নাকি সে পথেই সে বারবার ফিরে আসে ঘড়ি,
আকাশেই কেন জড়ো হতে থাকে বিকিরিত জোছনার আলো?
এখানে আবাদ করি তার ফসলের ছায়া
এই অলীক বাগানে
কখনই পৌছাবেনা সেই কল্পিত জীবনের ট্রেন
প্যাস্কেলের গোলক
পাখিটা আটকে আছে প্যাস্কেলের অসীম গোলকে,
যার পরিধি কোথাও নেই, কেন্দ্র সবখানে—
তবুও পাখিটা অনবরত উড়ে যাচ্ছে কেবলই কেন্দ্রের দিকে…
সময়ের মৃত্যদণ্ড
নিদ্রা থেকেও গভীর এক অন্তরাল
ঈর্ষায় শানিয়ে নেয়া ছুরি,
আঘাতে আঘাতে জর্জরিত,
প্রেম আর পৃথিবীর কাছে যতখানি চাওয়া
তাতেও আক্ষেপ আছে, ভ্রান্তি আছে
ব্যাধ আর ব্যধির মাঝে খানিকটা নিরবতা—
আহত নীলের রাতে
প্রতিঘাতে
মৃত সময়ের গোলকধাঁধায়
ফিরে আসা ভুল মার্জিনে লেখা চিঠি
# # #