স্ফুলিঙ্গ চতুষ্টয় । ফাহিমা আল ফারাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৫, ১২:০৩ অপরাহ্ণ, | ২০০২ বার পঠিত
১
কিন্তু তারপর সব ঘাস হয়ে গেল
ঘ্যাসঘ্যাসে লোহা, আর তামাদি ফোস্কাবৎ আধান্যাংটা ঘোড়া —
সোজাসাপ্টা আলোয় তা বেমালুম উদয় হলো —
যদিও ততটা নির্ভার স্বর্ণপ্রভায় নয়, যেমনটা তুমি চেয়েছিলে,
নিছক এক তাপ—বৈদ্যুতিক খেলাচ্ছলে
উড়ে গেল শতদলে মৃতপাখা তুরন্ত শেল, বিনা লক্ষ্যভেদে।
বিনামেঘে বজ্রপাত, ঘাস থেকে বেরোল হঠাৎ শ্বেতশুভ্র ডিম —
হয়তো-বা থাকলে থাকতেও পারে নবোপলব্ধির সুরভিত কুসুম।
২
আমাদের হুটোপুটি, যন্ত্রণা,
ফ্যাঁসফোঁস, ক্যাঁচক্যাঁচ, প্যাঁকপ্যাঁক —
সব এক-লহমায় গপ করে গিলে নিয়ে
তিমিটা হারিয়ে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বরে
কে জানে ফের উদয় হবে কোন মৃত সাগরের বুকে,
উগড়ে দিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হাপুস জলোচ্ছ্বাসে।
সেখানে লুটোপুটি, ঘোঁতঘোঁত লারেলাপ্পা নিয়ে বয়ে যাবে
নীহারিকা যেন অঝোর স্মিত বেদুইন;
ধড়মুণ্ডহীন আবহমান অজগর।
৩
ভোর এগিয়ে আসে
. ভোরের মদালস বক্ষ চিরে উঁকি দেয়
. কালোবিবর —
ভোরের শরীর বেয়ে নিকষ রক্তের ধারা —
. আচমকা মেঘ, ভাস্কর্যের ছাই-মুখ
. ঝলসে ওঠে ছুরিকা-হাতে।
লাইটপোস্টগুলো ঠোঁটে তর্জনী চেপে
. হলুদে-ভেজা ভ্যানগাড়িগুলোকে শাসালে
. কড়কড়ে বিদঘুটে আওয়াজে
. দিগন্ত আলোকিত করে ডাকে
. একটা রূপালি সাইরেন
তার ধবল শব্দে শিরা-উপশিরা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট —
. উহ্, কী পোড়া গন্ধ
. রক্তাক্ত লাল ফুলের গুচ্ছ হয়ে
মাটিতে সজোরে আছড়ে পড়ে
. ছুরিকাহত ভোর।
তারপর অসীম বিস্ফোরণের বিচ্ছুরণে
আমাদের আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
৪
বর্ষণের ভেতরে যে ক্ষোভ লুকিয়ে আছে
তাকে মুষ্টিবদ্ধ করো —
খাপখোলা তরবারির মতো বেজে উঠুক
তার হিমনাদ, পঙ্কিল পিপাসার
ভেতর সে সাড়া দিক,
ছিটকে বেরিয়ে আসুক, ফিরিয়ে দিক
আভা অধিকৃতদের নিভন্ত স্বরে
তাকে জাপ্টে ধরো,
ছুটে যেতে যেতে খামচে ধরো তার
আস্তিন, টুঁটি চেপে ধরো তার,
জোর আলিঙ্গন করো, বুকে পিষে
শুষে নাও তার অস্থির তরঙ্গাদি —
হরেক রঙের বেহায়াপনা তার চূর্ণ করো
যতক্ষণ না
যতক্ষণ না তার
সমস্ত ভাষাটুকু ফিরে পেয়েছ,
উপলব্ধি করেছ তার সংহারি বর্ণমালা
বর্ষণের ভেতরে যে ক্ষোভ ঘুমিয়ে আছে
তাকে ভালবাসো, আত্মস্থ করো আবার
পুনর্জন্ম নাও, তার আত্মজা হয়ে।
# #