ভবিষ্যতের কবিতা । অর্পণ দেব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০১৫, ৬:৩১ অপরাহ্ণ, | ৩৬৩১ বার পঠিত
আমি তো যাই নাই কখনও সীমান্তের স্বরূপ-সন্ধানে—
ভাবি নাই, বারুদে কি থাকে—মোহ নাকি আগুনের জল…!
ব্যক্তিগত পলিটিক্যাল বয়ান : ০১
আসেন মোনাজাত করি।
.
ব্যক্তিগত পলিটিক্যাল বয়ান : ০২
শহরের যেই রাস্তায় মোড়ে কোনো গাড়ি থামে না, সেইখানে ১টা রেডিওস্টেশন বসাইয়া দেয়া হোক। নাগরিক লাউডস্পিকারে বাজানো হোক ফড়িঙের শেষচিৎকার। যেহেতু এই শহরে বলার মতো কোনো শব্দ নাই, সুতরাং কাকেরাই শুনাইয়া যাক পতনের সুমধুর স্বর।
সম্ভাবনারা আপাতত আকাশে ভাসুক।
ব্যক্তিগত পলিটিক্যাল বয়ান : ০৩
লোভ সামলাইতে হয়, যেমন সামলাইতে হয় নানবিধ মেদের বাহার। বা কতটুকু রাখবেন বা রাখবেন না। ৫তলা ফাউন্ডেশনের উপর ১০তলা বিল্ডিং বানাইলে আকাশচুম্বী হওয়ার খায়েশ যদিও জাগে, গোড়ায় গলদ তবু থাইকাই যায়। ভূমিকম্প কখন আসে তা কি জানি আমরা?
খনা তো সেই কবেই বইলা গেছেন—
“ঊনো ভাতে দুনো বল, অতি ভাতে রসাতল।”
ব্যক্তিগত পলিটিক্যাল বয়ান : ০৪
মানুষের সময় কাটে কেমনে? গরীব বা বড়লোকের কথা কইতেছি না। তাদের সময় তো এমনেই কাইটা যায় —টাকা কামাইতে গিয়া নয়ত খরচ করতে গিয়া। কিন্তু যার বা যাদের এই টাইপ ধান্ধা নাই তার বা তাদের ব্যস্ততাবহির্ভুত ১টা সকাল বা ১টা দুপুর বা সন্ধ্যা বা রাতের সময়গুলা কাটে কেমনে? ফলে ভাবি যে নেশা থাকতে হয়। মাদকের কথা কইতেছি না। ১টা ভিতরকার ভাললাগা থাকতে পারে, যা তারে তাড়াইয়া বেড়ায়। কেউ জানে, কেউ জানে না বা যে যেইভাবে ভাইবা নেয় আর-কি!
সম্পর্কের বৃথা আস্ফালন
০১
বলে নেয়া ভালো—ভ্রমণেই সর্বশেষ সুখ! পথে নামলেই পাওয়া যেতে পারে হালকা সবুজ। তবুও বিবিধ বিচ্ছিন্নতা হাতে নিয়ে বলি—যে পথে উড়ছে সামঞ্জস্যের নীলচে আগুন, সেখানেই আগত কথার ফুলঝুরি; রঙিন এবং বেদনাময়!
০২
সামাজিক সন্ধানযাত্রায় আপাত কোনো সত্য নাই। এই বাক্য পাওয়া যায় ভুবনসংখ্যার শেষবর্ণনায়।
এই ইশারায় পর্যটকের বিচ্ছিন্ন অবয়ব—ধরা আছে জৌলুশ গ্রামীণ ক্যামেরায়!
০৩
দাবা খেলায় ঘোড়ারে খুব পছন্দ আমার। সে-ই একমাত্র পঙ্খিরাজ যে ১লাফে আপনারে আড়াইঘর উড়াইয়া নিয়া যাইতে পারে (সামনে কেউ থাক বা না-থাক); সে-ই একমাত্র জাদুকর যে সর্বদাই ৮চালের রহস্য কব্জায় রাখে। আপনি ভাইবা নিতে পারেন ডাইনে-বাঁয়ে-উত্তরে-দক্ষিণে-উপরে-নিচে সকল সম্ভাবনার যুগসূত্রের ফলাফল। যদিও ভুল চালে আপনি ঘোড়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী হইয়া যাইতে পারেন, তবে ভয় নাই, নৌকা-হাতি-মন্ত্রী-সৈন্যসামন্ত আপনার পাশেই আছে।
ঘোড়া ছাড়াও খেলায় জয়লাভ করা যায়!
০৪
বড় বেশি প্রকাশ্য আজকাল সময় আর সম্পর্কের জাদু। পৃথিবীর নির্জনতম কোণ থেকে ফিরে এসে দেখি ফ্ল্যাশআউট হয়ে আছি এফবিতে, ইন্সটাগ্রামে, সেলফিতে অথবা বিবিধ নিউজপোর্টালময়। আড়ালে লুকিয়ে রাখা স্মৃতির রসদ অনায়াসে ফেলে যাচ্ছে ছিপ শহরের সমস্ত সন্ধ্যায়, বিভিন্ন সনির্বন্ধ ইশারায়। এতসব বঁড়শি গলায় বিঁধে যাবার পর ভাবি—যদি আরেকটু গোপন হতো ব্যক্তিগত মুগ্ধতাবোধ, যদি চাইলেই না পাওয়া যেত ভ্রমণের সর্বশেষ সুখ; আরেকটু গভীর হতো তবে এই বেঁচে থাকা!
০৫
ধরা যাক—একটা মোহ জন্মাইলো। ধরা যাক—সেই মোহ ফ্লাইওভার ধইরা হাঁটতে হাঁটতে … মহাশূন্যে গিয়া মিলাইয়া গেল। মহাশূন্যের অসংখ্য শূন্যের দুঃখে কেউ আইসা একটা ১’রে ধইরা-বাইন্ধা শূন্যের সামনে বসাইয়া দিলো। মহাশূন্য মহাপূর্ণ হইয়া গেল। যখন এইসব ঘটনাবলি চলতেছিলো—সেই মুহুর্তে আইসা জ্যামিতির টিচার কইলো—হয় নাই। কল্পিত এতশত শূন্য দিয়া এই উপপাদ্য প্রমাণিত হয় না। কিন্তু জ্যামিতির টিচাররা যেহেতু নিঃসঙ্গ, সুতরাং কন্সট্রাকশন চলতে লাগল।
ধরা যাক এই গল্পের নাম—রেললাইন।
০৬
আমার গল্পে কোনো লোকালবাস নাই, কারণ আমি তার রেগুলার কাস্টমার। ফলে কল্পনায় ভাসে—১টা খয়েরী মার্সিডিজ বেঞ্জ অথবা নীলচে মারুতি নিশান অথবা ১০০ সিসির বাজাজ মোটরবাইক। এই অভিযাত্রায় সঙ্গ দেয় অভিজাত ডিজের ভঙ্গিমা, বাহারি নেশার কসরৎ আর সুইমিংপুলের উল্লাস। নিজের ঘরটাকে তাই মনে হয় নিদারুণ ভুলের ভাণ্ডার—অন্ধরা গন্ধ পায় যেমন!
০৭
ভাবি যে, দীর্ঘশ্বাসের জন্ম কিভাবে হয়? ঐদিন রেললাইনের ধারে ১টা দীর্ঘশ্বাসরে খুইজা পাওয়া গেলো। যেহেতু আমি প্রতিদিন রেললাইন ধইরা হাইটা-হাইটা অফিসে যাই, নানাবিধ দীর্ঘশ্বাসের লগে দেখা হইয়া যায়। যেমন দেখি কোনো কোট-টাইপরা স্মার্ট ১টা ইয়াং লোক হুদাই রেললাইনে বইসা থাকে অফিসটাইমে। অনুমান কইরা নেয়া যায়—তার আসলে চাকরি নাই। কিন্তু আমার যেহেতু চাকরি আছে—তাই কাওরানবাজার মোড়ে আইসা মাছ ঢাকার বরফ দিয়া বানানি লেবুর শরবত খাই, ছায়া খুইজা-খুইজা হাঁটতে থাকি। প্রেমিকার কথা মনে হয়, মনে-মনে ফোন দেই—ব্যাস্ত! রাস্তার পাশের চা-দোকানে বইসা রিকশাওয়ালাগো রসের আলাপ শুনি। ভাবি যে, কারো কারো কাছে মোবাইলের ক্লিপ্সই বিনোদন, কারোর আবার ভ্যান গঘের কাছে যাইতে হয়, কুরোশাওয়ার সিনেমা দেখতেহয়! উপসংহার এই—যে যেই কাজ কইরা আনন্দ পায়, সে আসলে ঐ কাজের মধ্যেই একটা অর্থ খুইজা বেড়ায়, যদিও সে পুরাপুরি জানে তা না! এইসব নানাবিধ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ঘটনারে একফ্রেমে আইনা ডাকতে গেলেই দেখি—
দীর্ঘশ্বাসেরা বেসিক্যালি শিরোনামহীন।
০৮
শয়তানেরও দর্শন আছে, যেমন চোরেরও থাকে সাগরেদ। আর কেইবা না জানে যে, শয়তানের (কু)বুদ্ধি একটু বেশিই থাকে। কিন্তু কথা হইলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বিজয়ীর ট্রফি কার ঘরে যায়? দেখি যে, সমগ্রের শুরুতে শকুনিরাই পাশায় হারাইয়া দেয় আর যুগব্যাপী অজ্ঞাতবাসে বা জ্ঞাতসারে নৈতিকতায় হাইটা আসে পাণ্ডবসকল। মানে বর্তমান (প্রায়) সর্বদাই শকুনশাসিত; কিন্তু লং-রেইসের হার্ডলস পার হয় কারা? তাই মরণের পরেও যাদের স্যালুট দেই আমরা, সেই আমরাই সহস্রবছর পরেও মনে কইরা একবার মিনায় পাথর ছুইড়া আসি!
০৯
আসলে কোনো ব্যস্ততা নাই, যা আছে তার নাম অভিনয়। মাঝখানে জেনবাবা আইসা কয়, বিজিনেস ইজ ল্যাজিনেস। মানে এই-যে সকাল টু সন্ধ্যা মিরপুর টু গুলিস্থানের মতো খালি আইতাছি আর যাইতাছি — এর নাম অলসতা। এর মধ্যে আমি নাই। মাঝেমাঝে নিজেরে খুঁজতে গিয়া মনে পড়ে, মাথাটা তো হারাইয়া ফেলছি ২৩বছর আগেই। অতীতে কেমনে ফিরা যাই!?
পরিবেশপাতায় লেখা কিছু না-থাকা কথা
০১
অদ্ভুত আনন্দে ফোটে নীল জবাফুল!
সকালের কণ্ঠে শুনি মুগ্ধতার গান।
০২
কিছুদূর হাঁটলেই পাওয়া যায় হালকা সবুজ।
সামান্য হলুদ ভেবে তাই হয়ে গেছি বিবাগী ফড়িং।
০৩
নিয়মের জাল গ্যাছে জলে, তবুও মাছেদের হাহাকার নাই। এই বাস্তুবিদ্যায় অভিবাসী আরেকটা সকাল হারায় নৌকাবিন্যাসে—গলিত মাংসের খোঁজে। ফলে এ-যাত্রায় দেখা যায় না অভিজ্ঞানের মহড়া, ফসলের বিষণ্ন চিৎকার।
০৪
মৃত্যু আসলে একটা চিরকালীন সুখ, মেয়েটার আর দুঃখ থাকল না … !
# # #