কালো ঘোড়া ও মোরগের বিষণ্ণতা গুলো । হাসনাত শোয়েব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০১৫, ৫:৪২ অপরাহ্ণ, | ২৩৬২ বার পঠিত
পৃথিবীর অন্তর্বাস ও সূর্যমুখী ফুল
কালো মোজার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে জলপাই রঙের দুটি পা। ছেলেটির হাতে ধরা সাদা ফিতের নিচে ঝুলছে লাল কেডস। নগ্ন পায়ে সমুদ্র দেখতে নেই জেনে সে ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে ফেলে ডিসেম্বর মাসের সবকটি সূর্যাস্ত। এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে নেমে আসছে পৃথিবীর অন্তর্বাস ও সূর্যমুখী ফুল।
অনেক দূরে এইসব দৃশ্যের পাশে বসে আমার মা সেলাই করছে সন্ধ্যা।
কালো ঘোড়া
প্রিয়তমা রাফালা, পিতার মৃত্যুতে বেজে ওঠে বিষণ্ণ রেবাব। তোমার সুরে ঢেকে গেছে পীতবর্ণ মানুষের চোখ। হরিণীর মাতম শেষে চোখ মুছে দূরের জঙ্গল। কালো ঘোড়াটির নাম কে যে হায় রেখেছিলে মহামতি জিব্রাইল। ময়দানের পাতারা এখনো উড়ে উড়ে গান গায়, খায়, ঘুমায়।
তবুও তুমি কে, যে এজিদের নামে বাজাও রুকবানি রাগ।
পোষা মোরগের বিষণ্ণতা
সারি সারি লাল মোরগ আমাদের দিকে ছুটে আসছে। যাদের চিবুক জুড়ে বিষণ্ণতা। মোরগের চিবুকে হাত রাখলে মানুষের পাকস্থলীর ওজন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। সেইসাথে বিষণ্ণতারও। পোষা মোরগের চিবুকে হাত রেখে বাবা একদিন বলেছিলো
—যীশু মোরগ ভালোবাসত। কারণ তার আছে সংখ্যা সম্পর্কিত যাবতীয় ধারণা।
—পাখিদের মধ্যে মোরগ সবচেয়ে কাছে থাকে মানুষের।
—সে পাকস্থলীর বেদনা বুঝতে পেরেছিলো।
—তবে ছুরির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মানুষ কতটুকু জানে?
—ঠিক ততটুকু, যতটুকু মানুষ মাংসের ক্ষেত্রফল আঁকতে পেরেছিলো।
—কনকের মাংসে মৃত্যুর দাগ ছিলো সেটা তুমি বুঝতে পারোনি ।
—দ্বিপ্রহরের যেকোন মৃত্যু গণনা অযোগ্য। এমনকি আমাদের প্রিয় মোরগেরও।
ভ্যাসিলিন আবিষ্কারের গল্প
পাতা থেকে পাতার দূরত্বে থাকে জঙ্গল। পশুদের শুষ্ক ত্বকের ভ্যাসিলিন আবিষ্কার পরবর্তী একাকীত্ব।
এভাবেই শুরু হতে পারে আপনার বিকেলের আলাপ অথবা তার কিংবা ওনার। রঙের মধ্যে ভালোবাসা বলতে হতে পারে গ্রে অথবা লেমন ইয়েলো। আপনি হয়তো ভেবেছিলেন ম্যাজেন্ডার কথা। মানুষকে ভেবে নিন নিছক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। তবুও বাতাসের পিঠ থেকে আলতো করে সরিয়ে দিন শিশিরের শব্দ। অতঃপর দেখবেন বুক জুড়ে লিফট সমান নীরবতা। এবার যেতে পারেন জঙ্গলের দিকে। শুনে নিতে পারেন শুষ্ক ত্বকের ভ্যাসিলিন আবিষ্কারের গল্প।
জোড়া ভ্রুতে নামে কাজল ঘুম
আসন্ন ক্ষতদিনে জোড়া ভ্রুতে নামে কাজল ঘুম। কেউ লিখে কেউ আঁকে। ব্ল্যাকবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে রাতের হরিণেরা। কেউ ডাকে সমুদ্রের অন্ধ চিতাবাঘ। কনক জানে হীরের নাকফুল কীভাবে অন্ধকারে জ্বলে ওঠে!
—আমি কী জানি, অনুবাদ গ্রন্থের বিষণ্ণতাসমূহ?
—তুই শুধু জানিস লবণ ও সমুদ্রের কোলাজে আছে অনুবাদকের সুঘ্রাণ।
—তবে যেসব শিশুরা নামতা পড়তে পড়তে হতাশ হয়ে পড়ে?
—হতাশা মূলত সুস্বাদু বাদামি চকলেট।
তবুও কী জানতে নেই অন্ধ চিতাবাঘের একাকী শিকারের গোপনতা?
শিরীষকুসুম জানে
তুমি জানো না, শিরীষকুসুম জানে
—একটি সাদা আতা ফল কেনো আত্মজীবনী জুড়ে একা রয়ে গেছে
—জয়তুন নগরে পাখিদের একান্ত আহার
—উৎসব শেষে অতিথিদের বাড়ি ফেরার যন্ত্রণা
তুমি যা দেখো না, শিরীষকুসুম দেখে
—ইশকুলের অনুষ্ঠানে চ্যাপলিনের একক সংগীত।