জাতিস্মর: গানের ইন্দ্রজালে আটকা পড়া এক চলচ্ছবি / ফাহিমা আল ফারাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০১৪, ৯:২২ পূর্বাহ্ণ, | ২৬৮৩ বার পঠিত
জাতিস্মর (২০১৩)
পরিচালক- শ্রীজিত মুখার্জী
নানা ঝামেলায় দেখা হয়ে উঠছিল না, আজ (২১/০৭/২০১৪) দেখলাম। সিনেমাটি বেড়ে হয়েছে, বিশেষত সিনেমাটোগ্রাফি আর স্ক্রিপ্টের নিরিখে চমৎকার; কিছু ফিশ-আই শট আর ওভার দ্য টপ সিন ভিন্নতা এনেছে দর্শন অভিজ্ঞতায়। অভিনয় কারোরই মন্দ হয় নি, তবে প্রসেনজিতের পারফরমেন্স অতীতের যে কোন কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। সম্পাদনা যদিও খানিক ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে, দৃশ্যাবলীর সংযোজন প্রায়শই অমসৃণ ঠেকেছে, সিনেমার শেষে তা ক্ষমাযোগ্য বোধ হয়।
তবে যে বিষয়টিতে খটকা লেগেছে মূলত তা হল ওই শিরোনামে। জাতিস্মর বলতে বোঝায় যে আগের জন্মকে স্মরণ করতে পারে। সিনেমায় তাহলে জাতিস্মরের ভূমিকায় আছে কুশল হাজরা, যে তার পূর্বজাত অ্যান্থনি ফিরিঙ্গির জীবনকে স্মরণ করতে পারে। কিন্তু শিরোনাম্নি চরিত্র কুশলকে যে সিনেমাটি যথেষ্ট প্রাধান্য দেয় না তার প্রমাণ কুশলের জীবন সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য না থাকা, যে জীবন বা আত্মপরিচিতি রক্ষায় কুশল শংকিত হয়ে থাকে ছবি জুড়ে। বরং সিনেমাটির পুরো আধেয় আবর্তিত হয় অষ্টাদশ শতকের ফিরিঙ্গি কবিয়াল অ্যান্থনিকে ঘিরে। কথা হল, ছবিটি যদি অ্যান্থনিকে নিয়েই হতে হয়, এবং তার জাতিস্মর কুশল এখানে মুখ্য নয়, তবে ওই গিমিকটুকু বোধয় না থাকলেও চলত। প্রেমিকপুরুষ রোহিত আর তার মহামায়া এবং থিসিসের বিষয় ‘অ্যান্থনির লাইফ অ্যান্ড টাইমস’ নিয়েই দিব্যি সিনেমা বানিয়ে নেয়া যেত ফ্ল্যাশব্যাকের বা নন-লিনিয়ার স্টোরি-টেলিং এর মাধ্যমে।
জাতিস্মরের ধারণা নিয়ে এসে ছবিটি আরো যে বাড়তি ভেজালে পড়ে তা হল চরিত্র-সংকোচন। ছবির সংকট নিরসনে (অর্থাৎ কুশলের ব্যাধি সাড়ানোর তাগিদে) ঝুঁকতে হল সেই বাংলা সিনেমার প্যানাশিয়া প্রেমের প্রতি, গায়ক ও কবি অ্যান্থনির থেকে দীর্ঘায়িত করা হল তার প্রেমক-স্বত্তা, যার বৈধতা প্রদানের পর্যাপ্ত খোরাক আবার ফিল্মে মেলে না। জাতিস্মর কুশলের ব্যক্তিক ইমেজের মত অ্যান্থনি-সৌদামিনীর প্রেম-কাহিনীও তাতে অনুপস্থিত, শুধুমাত্র দু’টি দৃশ্যের মাঝে তাদের মহাকাল-ব্যাপি প্রেমকে সীমাবদ্ধ রাখা শেষ দৃশ্যের কতটা বৈধতা প্রদান করে আমার জানা নেই।
কিন্তু শেষ কথা এই যে, সিনেমাটি টলিউডের আর্ট হাউজ সিনেমাকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যায় ক্যামেরার কিছু নতুন টেকনিক আর নন-লিনিয়ার কিছু উপাদান যোগে। সামগ্রিক এক অর্থ তৈরিতে জাতিস্মরের প্রচেষ্টা অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়লেও দর্শককে যদি তা একটু ভিন্ন স্বাদ চাখাতে পারে- তবে তাই হোক।
____________________###