তাড়িত ভ্রমর, ঢেউ ও অন্যান্য কবিতা / রুদ্র হক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৪, ৬:২০ পূর্বাহ্ণ, | ২৫৫৬ বার পঠিত
_____ ঘুম
গভীর বনে অন্ধকার জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো তুমি
ওপর ওপর নক্ষত্র সিলভার
ঘুরে উঠছে ভূমিঘাস,গাছ, অন্ধ বাঁদুর ঝাঁক
দুরে বিষপাত্র হতে বাস্প উড়ছে হাতে হাতে
মরণোন্মুখ মানুষের উৎসবমূখর চোখে
মহিমান্বিত হয়ে উঠছে
গরল গুঞ্জন, হাওয়া, তীব্র সঙ্গীত..
তার থেকে দূরে,গভীরে
পাতাল থেকে ঢোল বাজিয়ে ফিরছে পেট মোটা পিঁপড়ের দল
_____ অশ্ব
কি আনত মুখ স্থবির জলরেখা তুমি ধারণ করেছো অশ্ব!
বহুদল ফেলে বন্য পাহাড়ে একা
তুমি এক খুরে মাটি ঘঁষো…
দূরে
সমুদ্র ধেয়ে আসে
সেইদিকে ছুটে চলে মেঘ
হাওয়ায় ঘূর্ণি তুলে ঘুর ঘুর
ঘুরে ওঠে ঝরা পাতা
চূড়োয় সাদা চাঁদ…
এইখানে
দেহ হারালো যে বৃক্ষ
নির্জন প্রস্তর গরল বয়ে চলে তার
গোপন শিনায় তবু এখানেই
চিক চিক করে ওঠো
খয়েরি শরীর…
_____ ঢেউ
সমুদ্রে জন্ম হয়নি কেন?
তীরে, বার বার বিছানা সাজিয়ে ফিরে যাওয়া হতো
ঘুমুনো হতোনা
গভীরে, যেখানে মহল আছে উৎসব মুখর রঙিন মাছে
জীবন ফলিয়ে- ফিরে আসা হতো ফের অতল জাহাজে
মৃত মানুষীর কন্ঠহার
চির উন্মুখ দৃষ্টির ভিতর
কোথাও নেই জেনে, মানুষের মতো অভিমান হতো!
ঠোঁট উল্টে ঢেউ হতো আর ঢেউ হতো…
_____ তাড়িত ভ্রমর
কুকুর তাড়িয়ে দিচ্ছে হাঁস
মুখে তার অজস্র লালা হিংস্র নখর
এক্ষুনি এক কলহে মেতে এসে সঙ্গিনী সাথে
কুকুর হয়ে যাচ্ছে রাজহাঁস
রাজহাঁস তাড়িয়ে ফিরছে মানুষ
লাল নিয়ে চোখে উটের মত মাথা বাঁকিয়ে তার
ভার রেখে প্রসারিত পায়ের পাতায়
রাজহাঁস হয়ে যাচ্ছে পাখি
পাখি তাড়িয়ে ফিরছে মেঘ
যদিও জলের সঙ্গম এক হয়ে গেছে জন্মান্তরে
পানকৌড়ি বেশে হেসে হেসে লুকোচুরি খেলে
এইসব দৃশ্যান্তরে গ্রাম অতীত হয়ে যাচ্ছে চোখে
তবু এক কিশোরীর নখে বুকে পিঠে অমোচনীয় দাগ
আর ক্লেদ আর রক্ত জমাট বিছানার পাশে হাসনাহেনা ফুল
স্থুল হয়ে যাচ্ছে অমিমাংশিত দৃশ্যাবলি সব
হাসনাহেনা তাড়িয়ে ফিরছে মন
সাপ তার কোলে রেখে
দেখে ফিরে তবু যাই ভুলে-ভ্রমে তাড়িতের মতন
যেন এক জলজ শিকারীর চোখে ওঁত পেতে বসে আছি মেরে এ ঘাই
এইভাবে তাড়িয়ে ফেরাদের দলে আর যাওয়া হয় নাই
_____ পাহাড়
উড়িয়ে দাও অবশিষ্ট ধুলো
তারপর চলো ওই রক্তিম পাহাড়ের দিকে
চুড়োয় একাকী বৃক্ষ
তার ছায়ায় মাটি ঘুমোচ্ছে বিভোর
ওদিকে গোধুলী মরে যাচ্ছে
এদিকে করুণ পৃথিবীর ভিতর চাঁদ জাগছে ফের…
বিভ্রমের চেয়ে ক্ষনস্থায়ী সুগন্ধি কিছু নেই জেনো
বুকে মাটির দাগ তোমার
হাতে মাটির দাগ…
মাটির মতো উবু হয়ে কখনো ঘুমুতে পারোনি তুমি…
_____ নিমজ্জন
আমিতো ডুবে যাচ্ছিরে-
ওপরে জ্বল জ্বল জ্বলে যাচ্ছে সূর্যটা
হাওয়ায় উড়ে ফিরছে হাওয়া
মেঘের অধিক ছায়া ফেলছে চিল
সমস্ত জলে একা-
একা একা স্টিমার ফিরছে দূর হতে
আর সকল ঘূর্ণন
সবুজ গাছে, বুড়ো ঘুঘুর কান্নাসমেত
কেবল এইখানে ঘুরে ঘুরে মরে যাচ্ছে
অতলের খুব কাছে এসে
বার্তা আসে…
এর’চে তন্দ্রার ভিতর যে দুপুর
মরে যেতে বসেছিলো
তার সাথে রঙ্গীন পতঙ্গের মতো
দলবেঁধে উড়ে যাওয়া
ভালো ছিলো…
ঘোলা শব্দের ভিতর কলহধ্বনির মতো
শুনতে পাই
মা ডাকছে…হাবিব! হাবিব!
_____ এক্সিডেন্টাল ট্রেন
লাল এক পুকুরের গায়
হেলে পড়ে আছে এক্সিডেন্টাল ট্রেন
কি এমন অসুখের ঘোরে
লোহার ইঞ্জিন সে থামালো দুপুরে?
পুকুরের গায়
লাল যে ছায়া পড়ে আছে
সে পাতা ও ফুলের
তাতে আধোমুখ ডুবিয়ে ট্রেন
তাতে বিস্ময়ে বিমূঢ় জলে ডোবা পাখি
ঘুরে ফিরে আসে
আর শরীর বাঁকিয়ে ফিরে যায়
আলোয় রেখায়…
তাকেই ফিরে আসতে দেখি রোজ
আজ হেলে পড়ে আছে ট্রেন
ইষৎ মুখ ডুবিয়ে জলে
মৎস শিকারের ভ্রমে
অপ্রয়োজনীয় মাছ নিয়ে উড়ে চলে যাবে?
এ অনিদ্রার দেশে
শিশুরা সব পাতাল অভিমুখে গেছে
সেখানে স্বর্ণমুদ্রার দেশে
কতো কি ঘটে…
ফিরে আসবে জরা অভিমুখ হলে
তবে কি নিমজ্জনের ছলে?
এক্সিডেন্টাল ট্রেন…
নাকি বিষ খেয়ে, ঘুরে ফিরে
এখানেই মরতে এসেছিলে?