মার্ভেল ইউনিভার্স To অ্যাভেঞ্জারস অ্যাসেম্বল–পর্ব ২ / অনিক-উজ্জামান বাপ্পি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, | ২৫১৬ বার পঠিত
দ্য অ্যাভেঞ্জার্স (২০১২)
অবশেষে যে যাত্রার সূচনা হয়েছিল ২০০৮ সালে “আয়রন ম্যান” এর দ্বারা, তার সফল পরিসমাপ্তী ঘটলো ২০১২ তে এসে “দ্য অ্যাভেঞ্জার্স” মুক্তির মাধ্যমে। “আয়রন ম্যান”, “হাল্ক”, “থর” এবং “ক্যাপ্টেন আমেরিকা” এর এক অসাধারণ কম্বিনেশন দেখানো হয়েছে এতে। এই ৪টি চরিত্র একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একজন যে তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না, পরেরজন যে হল জেদী, একরোখা ও বেপরোয়া, আরেকজন যার মাঝে কখনো কোন সিরিয়াসনেস দেখা যায় না, সব কিছু হাল্কা ভাবে নিতে সে পছন্দ করে আর ৪র্থ ব্যক্তি সব সময় থাকে ন্যায়-নীতি ও আদর্শ নিয়ে। কিভাবে হবে এদের দ্বারা একটা সফল টিম ? মুভির একটি বড় অংশ জুড়ে এরা শুধু নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া ও মারামারি করে গেছে এবং অবশেষে মুভির শেষ দিকে এসে তবে এরা টিম হয়ে লড়াই করেছে। টেকনিক্যালি এ মুভিকে “থর” ও “ক্যাপ্টেন আমেরিকা” এর সিক্যুয়াল হিসেবে ধরা যায়। এ মুভির ভিলেন আমাদের অতি পরিচিত “থর” এর সৎ ভাই “লোকি” যে কিনা এবার “টেসেরাক্ট” এর দ্বারা “চিটুয়ারি” নামক এক বর্বর অ্যালিয়েন সভ্যতার সাহায্যে পৃথিবীতে আক্রমণ চালায়। “আয়রন ম্যান ২” এবং “থর” এর ইন্ট্রোডিউসিং চরিত্র “ব্ল্যাক উইডো/নাতাশা রোমানফ” ও “হ্কআই/ক্লিন্ট বার্টন” এ মুভির খুব বড় দুটি গুরুত্তপূর্ণ রোল প্লে করেছে, যদিও মুভির অর্ধেকেরও বেশী অংশে “হকআই” ছিল ভিলেন রোল এ। যাই হোক, এ মুভিতে আরো একটি চরিত্রের অভিষেক ঘটলো, “মারিয়া হিল”, “শিল্ড” এর একজন সদস্য যে কিনা “নিক ফিউরি” এর সাথে খুব ক্লোসলি কাজ করে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছে “কবি স্মাল্ডারস”। আর বরাবরের মত “নিক ফিউরি” তো আছেই। “পেপার পটস” চরিত্রে অল্প সময়ের জন্য “গোয়েনেথ প্যালট্রো” কে দেখেও খুব ভাল লেগেছে। “থর” এর আরেক চরিত্র “ড. এরিক সেলভিগ” কেও এখানে পাওয়া যাবে তবে “হকআই” এর মত একটু নড়বড়ে পজিশনে। তবে যে চরিত্রটি সব থেকে মন কেড়েছে, সে হল “ফিল কলসন”। এই রোবোটিক, হ্যান্ডসাম ও কোল্ড হেডেড “শিল্ড” এজেন্টের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছে “ক্লার্ক গ্রেগ”। “আয়রন ম্যান”, “আয়রন ম্যান ২” ও “থর” এ খুব অল্প ও সহজ-সরল চরিত্র প্লে করলেও এ মুভিতে তার চরিত্রটি ছিল খুব ইন্সপায়ারিং ও হিরোয়েটিক। কিন্তু তার সাহসিকতার সাথে মৃত্যু বরণ আসলেই মনটা খারাপ করে দেয়। তার চরিত্রটা এত জলদি শেষ করে দেয়া উচিত হয়নি। তবে আপনারা যারা সত্যিই এই চরিত্রটির ভক্ত আছেন তারা “BBC” এর টিভি সিরিজ “Marvel’s Agents of S.H.I.E.L.D” দেখতে পারেন। এখানে আপনারা আবার “ফিল কলসন” কে ফিরে পাবেন। তবে এই ৪ সুপার হিরোর মধ্যে যে যেমনি অভিনয় করুক না কেন, মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল “স্টিভ রজারস/ক্যাপ্টেন আমেরিকা”। ব্যক্তিগত ভাবে আমার “ক্রিস ইভান্স”কেই বেশী এনারজেটিক, ন্যাচারাল ও দুর্দান্ত লেগেছে। নতুন “হাল্ক” হিসেবে “মার্ক রুফালো” খুব ভাল ছিল কিন্তু “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক” এর বডি ইমেজের সাথে “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর “হাল্ক” এর তুলনা করে বেশ হতাশ হয়েছি। এই “হাল্ক” আমার কাছে একটু হাস্যকর লেগেছে “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক” এর মত ভয়ংকর ও বিধ্বংসী লাগেনি। “ক্রিস হেমসওর্থ” তার চরিত্রে ঠিক ছিল। শুধু একটা যায়গায় বুঝতে পারলাম না, “থর” হুট করে পৃথিবীতে চলে আসলো কিভাবে, যেখানে “থর” এ দেখানো হয়েছে বাইফ্রস্ট ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় পৃথিবীতে আসার তার সব রাস্তা বন্ধ। “রবার্ট ডাউনি জুনিয়র” এর অভিনয়েও আমার একটু খুত লেগেছে। সে “টনি স্টার্ক” ও “শার্লক হোমস” এই দুই চরিত্রকে এক সাথে গুলিয়ে ফেলেছে “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এ। তবে “আয়রন ম্যান ৩” তে সে আগের মতই ঠিক ছিল।
যাই হোক, ২০০৮ সালে “আয়রন ম্যান” এর সাফল্যের পর “মার্ভেল” ঘোষনা দেয় যে তারা “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” ২০১১ সালে মুক্তি দেবে, কিন্তু পরে রিলিজ ডেট এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়। এ মুভিতে “হাল্ক” চরিত্রে “এডোয়ার্ট নরটন” এর স্থানে অভিনয় করে “মার্ক রুফালো”। আগেই বলেছি “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক” এর জন্য মেকারদের প্রথম পছন্দ ছিল “মার্ক”, কিন্তু রোলটি পরে তার হাতছাড়া হয়ে যায়, তাই এ পর্বে মেকার এবং “মার্ক” কেউ আর ২য়বার সুযোগ হাতছাড়া করেনি। “হাল্ক”কে নিয়ে এ পর্যন্ত যত মুভি ও টিভি সিরিজ তৈরী হয়েছে, তাতে “হাল্ক”এর ভয়ংকর গলার ভয়েজ দিয়েছে আমেরিকান অ্যাক্টর/ফিটনেস ট্রেনার ও অবসরপ্রাপ্ত বডি বিল্ডার “লু ফেরিগনো”। এ মুভিতেও সেই ভয়েজ দিয়েছে, তবে একমাএ “লোকি”কে কাপড় ধোবার সেই বিখ্যাত দৃশ্যের পর “হাল্ক” এর বলা বিখ্যাত “Puny God” ডায়লগটি ছিল “মার্ক রুফালো” এর নিজের। অতঃপর ২২০ মিলিয়ন বাজেটের “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” ডমেস্টিক বক্স অফিসে ৬২৩ মিলিয়ন এবং সারা বিশ্বে ১.৫১ বিলিয়ন আয় করে সর্বকালের সবচেয়ে বেশী আয় করা মুভির লিস্টে “অবতার” (২.৭৮) এবং “টাইটানিক” (২.১৮) এর পর ৩য় স্থানে নাম লেখায়।
অবশেষে আসা যাক পোস্ট ক্রেডিট সিনে… এখানে দেখা যায় যে পৃথিবীর কাছে হেরে যাবার পর “চিটুয়ারী” সভ্যতার লিডার চলেছে নতুন কোন পরিকল্পনা তৈরীতে। আমার কাছে এই সিনটা খুব একটা অর্থবহ বলে মনে হয়নি, তবে আসলেই এটা কতটা অর্থবহ সেটা বোঝার জন্য আমাদের “থর ৩” বা “দ্য অ্যাভেঞ্জারস ৩” পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
“দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর ঠিক পরের বছর ৩ মে তে এক নতুন ডার্ক থিম ও পাওয়ারফুল ভিলেন নিয়ে আবার ফিরে এল “আয়রন ম্যান” এর ৩য় পর্ব। প্রথম দুই পর্ব “জন ফেবেরু” ডিরেক্ট করলেও এবারের পর্বের দায়িত্বে ছিল “শেন ব্ল্যাক”। তবে “টনি স্টাক” এর বডিগার্ড ও শেফারের রোলটা বরাবরের মত “জন ফেবেরু”ই পালন করছে, যদিও মুভির ৪ ভাগের ৩ ভাগ সময় তার চরিত্রটি কাটিয়েছে হাসপাতালের বেডে। যাই হোক, এ পর্বে “টনি স্টার্ক” “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর ঘটনার পর “পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসোর্ডার” এ ভুগতে থাকে ও তার একাকীত্ব দূর করতে নিজের সুট নিয়ে একের পর এক এক্সপেরিমেন্ট করে। এ পর্বটা এমন ভাবে বানানো হয়েছে যার সাথে “আয়রন ম্যান” ও “আয়রন ম্যান ২” এর কোন মিল খুজে পাওয়া যাবে না। এখানে “আয়রন ম্যান” কম “টনি স্টার্ক”কেই সশরীরে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ও তার মানবীক দিক গুলো প্রকাশ পেয়েছে, এটা এ মুভির একটি প্লাস পয়েন্ট। “রবার্ট ডাউনি জুনিয়র” প্রথম দুই পর্ব ও “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর থেকেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। এ পর্বে তার দাড়ির স্টাইলটাও পুরাই অসাম ছিল। প্রথম দুই পর্বে “জারভিস” কে শুধু মাত্র মেশিন রূপে দেখানো হয়েছে ও “টনি” ও “জারভিস” এর মধ্যকার সম্পর্কটা অনেকটা মালিক ও কর্মচারীর মত প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু এ মুভিতে “জারভিস” কোন মেশিন নয় বরং “টনি”র জীবনের একটি অংশ, সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু ও বিপদের একমাএ সহায়। “টনি” ও “জারভিস” এর এই সম্পর্কটাই আমাকে সব থেকে বেশী নাড়া দিয়েছে। “আয়রন ম্যান ২” এর “ওয়ার মেশিন” এবারের পর্বে হয়ে গেছে “আয়রন পেট্রিয়ট”, আর এই চরিত্রে “ডন চেডল” বরাবরের মতই “টনি”র বেস্ট ফ্রেন্ড ও বিপদের বন্ধু হিসেবে দারুন অভিনয় করেছে। “গোয়েনেথ প্যালট্রো” এর “পেপার পটস” চরিত্রকে এ পর্বে অন্য পর্ব গুলোর তুলনায় একটু বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তবে শেষ অ্যাকশন দৃশ্যে তাকে নিয়ে টানা-হেচড়া আমার কাছে ভাল লাগেনি। এটা যেন একটা কমন বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে যে হিরোকে মারতে গেলে হিরোইনকে নিয়েই সব সময় টানা-টানি করতে হবে, আর অন্য কোন ওয়ে নেই। “মায়া হেনসন” চরিত্রে “রেবেকা হল” মোটামুটি ছিল, কিন্তু আমার মতে মুভিতে এ চরিত্রটা না থাকলেও চলতো। “ম্যান্ডারিন” চরিত্রে “বেন কিংসলে” যেমন ভীতিকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে তেমনি “ট্রেভর স্ল্যাটারী” রূপে আমাদের বিনোদিতও করেছে। আর সব শেষে “অল্ড্রিক কিলিয়ান” চরিত্রে “গাই পিয়ার্স” প্রথম দুই পর্বের তুলনায় সিরিজের সব থেকে মারাত্বক ভিলেনের ভুমিকায় অভিনয় করেছে। “গাই পিয়ার্স”কে এ মুভিতে কোন অংশে একজন হিরোর থেকে কম মনে হয়নি। তবে আমার মতে “ম্যান্ডারিন” চরিত্রটার সাথে মোটেও সুবিচার করা হয়নি। “ম্যান্ডারিন” হল “আয়রন ম্যান” সিরিজের অন্যতম এক সেরা ভিলেন, অথচ এই চরিত্রটাকে খুব গুরুত্বের সাথে শুরু করে শেষে এসে একদম মাঠে মেরে দিয়েছে। এটা মোটেও উচিত হয়নি। “এক্সট্রিমিস” থিউরীটা খুব বিধ্বংসী ও অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে যেটা বাস্তবের সাথে খাপ খাওয়ানো মুশকিল। তবে এবারের পর্বের সব থেকে আকর্ষনীয় দিক হল সুটের উপর “টনি”র অটো কন্ট্রোল, সুট ট্রান্সফরমেশন ও অভাবনীয় লাস্ট অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স। সত্যিই “আয়রন ম্যান” যত পর্ব আসছে, সায়েন্সের একেকটা দরজা আমাদের চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে। গল্পের কথা যদি বলতে হয়, আমার কাছে একটা বিষয় ভাল লাগেনি যে এবারের ভিলেনও ২য় পর্বের মত “টনি”র পূর্ব শত্রু যে প্রতিশোধ নিতে চায়। এখানে পুরানো কাসুন্দি না ঘেটে একটু নতুন কনসেপ্ট আনা যেত। এছাড়া বাকি সব ঠিক ছিল, তবে মুভির শেষ দিকে “পেপার”এর শরীরে যে “এক্সট্রিমিস” প্রয়োগ করা হয়েছে, পরবর্তিতে তার কি প্রতিকার করা হল এবং “টনি” যে তার বডি থেকে “শার্পনেল” ও “আর্ক রিয়াক্টর”টা সার্জারীর দ্বারা অপসারণ করলো, এখন সে “আর্ক রিয়াক্টর” ছাড়া বেঁচে থাকবে কিভাবে ? ওইটাই তো তার হার্টে ও তার সুটে শক্তি জোগায়। এই বিষয়টা আমার কাছে ক্লিয়ার হল না। যাই হোক, ২০০ মিলিয়ন বাজেটের এই মুভি ডমেস্টিক বক্স অফিসে ৪০৩ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ১.২১ বিলিয়ন আয় করে সর্ব কালের সব চেয়ে বেশী আয় করা মুভির লিস্টে “অবতার”, “টাইটানিক”, “দ্য অ্যাভেঞ্জারস”, “হ্যারি পটার এন্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ পার্ট ২” (১.৩৪) এর পর ৫ম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।
এ মুভির পোস্ট ক্রেডিট সিনে আহামরি কোন কিছুই নেই, জাস্ট ফরমালিটি পালনের জন্য পোস্ট ক্রেডিট সিন দেয়া উচিত বলেই দেয়া হয়েছে। এখানে দেখানো হয় যে এই “ড. ব্রুস ব্যানার” (“হাল্ক”) এর কাছে সাইকো থেরাপী নিতে এসে “টনি স্টার্ক” গোটা মুভিতে যা যা ঘটলো তার সব কিছু চোখ বন্ধ করে বলে যাচ্ছে আর এই সুযোগে “ড. ব্যানার” ঘুমাচ্ছে।
কেউ যদি জানতে চান যে সব শেষে বিখ্যাত “ট্রেভর স্ল্যাটারী” এর কি হল, তাহলে সবাই “মার্ভেল” এর ১৩ মিনিটের নতুন ভিডিও ক্লিপ “All Hail The King” দেখতে পারেন। নিঃসন্দেহে চরম মজা পাবেন।
“আয়রন ম্যান ৩” রিলিজের ঠিক ৬ মাস পর একই বছর ৮ নভেম্বর মুক্তি পেল “থর” সিরিজের ২য় মুভি ও “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর সিক্যুয়াল “থর-দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড”। এ মুভির কাহিনী টান দেয়া হয়েছে অতীতের এক ঘটনা থেকে যখন “ওডিন” এর বাবা “বোর” ক্ষমতায় ছিল, সেই সময় “ম্যালেকিথ” নামক এক এলফ গোটা ইউনিভার্স ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায় “ইথার” নামক এক ভয়াবহ অস্ত্রের দ্বারা, কিন্তু “বোর” এর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে “ম্যালেকিথ” তার দল নিয়ে পালিয়ে যায় ও “ইথার” চলে আসে “বোর” এর কব্জায়। পরবর্তিতে “বোর” এই “ইথার” এমন এক স্থানে লুকিয়ে ফেলে যেখানে কখনো কারো পৌছানো সম্ভব হবে না। পরবর্তিতে “জেন ফস্টার”এর হাতে এই “ইথার” এর পুনরায় সন্ধান লাভ, “ম্যালেকিথ” এর প্রত্যাবর্তন, অ্যাসগার্ড আক্রমণ ও “ইথার” হস্তগত পূর্বক ইউনিভার্স পুনরায় ডার্ক ওয়ার্ল্ডে পরিনত করার চেষ্টা এবং ইউনিভার্স বাঁচাতে ও “ইথার” ধ্বংস করতে “ওডিন” এর বিপক্ষে গিয়ে অ্যাসগার্ডের সব নিয়ম-কানুন ভেঙ্গে “লোকি”কে কয়েদখানা থেকে ছাড়িয়ে “থর” নেমে পড়ে এক অসম্ভব যাত্রায় “লোকি” ও “জেন ফস্টার”কে সাথে নিয়ে ডার্ক ওয়ার্ল্ডের পথে, যে পথ একমাএ “লোকি” ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই, নিরূপায় হয়ে জোর করে হলেও “লোকি”র উপর “থর” এর বিশ্বাস রাখতে হয় কারণ নিজের প্রিয়তমার জীবন বাঁচাতে ও অ্যাসগার্ড এবং ইউনিভার্সের ভবিষ্যত রক্ষার্থে একমাএ “লোকি”র সাহায্যই পারে “থর”কে জয়যুক্ত করতে। আর এদিকে অ্যাসগার্ড, ইউনিভার্স ও জেন কাউকে নিয়েই “লোকি”র কোন মাথা ব্যথা নেই, তবুও “লোকি” চলেছে “থর”কে সাহায্য করতে শুধুমাএ তার একটি বিশেষ উদেশ্য পূরণ ও “ম্যালেকিথ”এর উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য। ব্যস, আর কিছু বলবো না, তাহলে একটু বেশীই স্পইলার হয়ে যাবে। মূলত এ মুভির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু না “থর”, না “জেন”, না অন্য কেউ। সে হল একমাএ “লোকি”। কিন্তু এই “লোকি” সেই “লোকি” নয় যাকে আমরা “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এ দেখেছি। এ পর্বের “লোকি”কে না পারা যাবে বিশ্বাস করে কাছে টেনে নেয়া কিংবা ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দেয়া। এ মুভির সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হল “থর” ও “লোকি”র একসাথে যাত্রা। এখানে “লোকি”র ছোট ছোট কৌতু্ক আপনাকে হাসাবে আবার “থর” ও “লোকি”র পরস্পর আবেগঘন কথোপকথন আপনাকে নতুন করে ভাবাবে এবং সর্বোপরি “লোকি”র পরিনতি আপনাকে ইমোশনাল করে তুলবে। তবে মনে রাখবেন, এ মুভিতে আপনার জন্য অনেক চমক অপেক্ষা করে আছে এবং মুভির শেষ চালটা কিন্তু “লোকি”ই দিবে। যাই হোক, “লোকি” চরিত্রে “টম হিডেলস্টন” অভিনয়ের দিক থেকে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। “ক্রিস হেমসওর্থ” বরাবরের মতই “থর” হিসেবে অসাধারণ ছিল। “নাটালি পোর্টম্যান” “জেন ফস্টার” চরিত্রে মোটামুটি ছিল। আমার কাছে “অ্যানথনি হপকিন্স” ও “নাটালি পোর্টম্যান” কে প্রথম পর্বের তুলনায় এ মুভিতে তেমন ভাল লাগেনি। “ড. এরিক সেলভিগ” চরিত্রটাও একটু বাজে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেটা আমার কাছে ভাল লাগেনি। কাহিনীটাও সব মিলিয়ে প্রথম পর্বের তুলনায় বেশ দুর্বল লেগেছে। তবে ডার্ক ওয়ার্ল্ডের গ্রাফিক্স এবং শেষ অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স গুলো পুরাই মাথা নষ্ট করার মত ছিল যা অনেক ভাল লেগেছে। যাই হোক, ১৭০ মিলিয়ন বাজেটের “থর-দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড” ডমেস্টিক বক্স অফিসে ২০৫ মিলিয়ন (১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) এবং সারা বিশ্বে ৬৩৮ মিলিয়ন আয় করে এরই মধ্যে পরিণত হয়েছে ব্লকবাস্টারে।
এ মুভির পোস্ট ক্রেডিট সিনটা “আয়রন ম্যান ২” এর মতই একটু ঘোলাটে ও জটিল। এই সিনে সম্ভবত “থর ৩” সম্পর্কে কিছু না কিছু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এখানে দেখানো হয় যে “ইথার” নিয়ে এত কান্ড, তা “কালেক্টর” নামক এক নতুন চরিত্রের হাতে তুলে দেয়া হয় যেন “ইথার” নিরাপদে থাকে, কিন্তু পরক্ষণেই “কালেক্টর” এর আচরণ ও কথা শুনে একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ভবিষ্যতে সে কোন ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনা করছে।