সুইসাইড নোটস / ইলীয়াহ হাবীব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০১৪, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ, | ২৭১২ বার পঠিত
সুইসাইড করার ঠিক কয়েকটা সেকেন্ড মানুষ কীভাবে তা ভাবার চেষ্টা করছি। আসলে এই ভাবনাটা গত কয়েকদিন ধরেই মাথায় ঘুরছে। কারণ,মানুষের মৃত্যুর আগমুহূর্তগুলো কেমন হয় তা নিয়ে একটু গবেষণা করতে হবে। গবেষণাটিঠিক পড়াশুনার জন্য নয়, নিজের জন্য। কারণটা পরে বলছি। আমার এক ফ্রেন্ড অবশ্য একবারসুইসাইড এটেম্পট নিয়ে ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে মরে নি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি,কেন যে সে মরল না? মরাটা দরকার ছিল, এটলিস্ট বুঝতে তো পারতাম কী কী কারণ কাজ করেসুইসাইড করার পেছনে। যাই হোক, এখন আসল কথা হল একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে; সুইসাইডেরআগে করণীয় কয়েকটা জিনিসের। আমি যতটুকু শুনেছি সুইসাডের আগে মানুষ সব লেখক হয়ে যায়। মানে, সুইসাইড নোটের কথা বলছি। তাদের মধ্যে কেউ সুদীর্ঘ চিঠি লিখে, কেউ আবার অতিসংক্ষেপে চিঠি লিখে। কিন্তু আজকাল এমন অবস্থা যে মানুষ মোবাইলে সুইসাইড টেক্সট পাঠায়। বিষয়টা মোবাইলে পাঠানো বা চিঠি লিখার না, বিষয়টা হল সুইসাইড নোটের।
আমার এক পরিচিত আপু ৫-৬ বছর আগে সুইসাইড করেমারা যায়; নয়তলার ছাদ থেকে পড়ে। ওর কাহিনীটা আমার কাছে অনেক বেশি তুচ্ছ লেগেছিল।নিলা আপু ওর আব্বু-আম্মুর আপন সন্তান ছিল না। সুইসাইডের আগের দিন রাতে সে এই কথাজানতে পারে। তখন তার আব্বু-আম্মুর মধ্যে হঠাৎ ঝগড়া লেগে যায় এবং তাদের মুখ-ফসকে এইকথাটা বের হয়ে যায়। ও এই সত্যটা কেন জানি একসেপ্ট করতেই পারল না। তাই ভাবল সুইসাইডকরবে। সুইসাইডের আগে সে বাসা পর্যন্ত তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আসল। বাসার নিচে আইসক্রীম-ওয়ালারকাছ থেকে আইসক্রীমও খেলো। এরপর ছাদে গিয়ে রেইলিং এর উপর থেকে পড়ে মারা গেল। মারাযাওয়ার আগে ও একটা সুইসাইড নোট লিখেছিল। নোটটা ছিল এইরকম:
‘সব চিন্তা-ভাবনা করেই কাজটা করছি। আমি চাইনা তোমারা পরের মেয়েকে নিয়ে ঝগড়া কর। আমার কারণে তোমাদের সম্পর্কটা খারাপ হোক তাওআমি চাই না। তাই আমি আত্মহত্যা করছি। বিশটা বছর আমাকে লালন-পালন করার জন্য অনেক অনেকথ্যাঙ্কস। তোমাদের ঋণ আমি শোধ করতে পারলাম না বলে সরি। ভাল থেকো আম্মু-আব্বু।
-নিলা’।
ছাদ থেকে নিচে পড়ার সময় বলে নিলা আপুকিছুক্ষণের জন্য রেইলিং ধরে ঝুলে ছিল; বাঁচার চেষ্টা করছিল। পরে যখন আর পারছিল না,তখন বলে হাত ছেড়ে দিয়েছিল। এই কথাটা পাশের এপার্টমেন্টের এক পিচ্চি মেয়ে বলেছিল। ওনাকি যখন ছাদে খেলছিল, তখন এগুলো দেখেছিল। কথাগুলো কতটুকু সত্য তা জানি না। তবেযদি কথাগুলো সত্যি হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে ও মৃত্যুর আগমুহুর্তে আসলেই বুঝতেপেরেছিল যে, ও একটা তুচ্ছ বিষয়ে নিজের জীবন নিচ্ছে। নিজের জীবন নিজে কাছ থেকে কেড়ে নেয়াটা অনেক বড় একটা বোকামি।
জীবনে কিছু সময় আছে; যখন দাঁড়ানো হয় ঐ সময়গুলোতে, তখন মনে হয় ‘মরে যেতে পারলাম না কেন? মরলে বেশি ভাল হত’। আমি এখন যে সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, তার মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমার এমনটা মনে হয়েছিল। আর সবচেয়ে ভাল বিষয়টা কী জানেন? আমার যেটা মনে হয়েছে, তা সত্যিও হয়েছে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ভাবছেন। আমি বর্তমানে মৃত একজন … লাইনটা পূর্ণ করতে পারছি না। কারণ একটাই; আমি জানি না আমি মানুষ ছিলাম কিনা। আমাকে অন্যেরা কি মানুষ হিসেবে কখনও ভাবত? অনেক আগে একজন বলেছিল, ‘তোদের আবার ব্যাথা লাগে নাকি? মানুষের না ব্যাথা লাগে, বেইশ্যারা তো মানুষ না’। এই ধরণের কথা তো অনেক শুনতে হয়েছে, এই কারণে কোন কথাই গায়ে লাগে না। যদিও এই কথাটা অনেক গায়ে লেগেছিল। উচিত শিক্ষাটা দেয়া হয় নাই ঐ ব্যাটাকে, বেঁচে থাকলে দিতাম একদিন।
নাম সীমা, বয়স ২১। ৫ বছর ধরে আছি এই লাইনে। ম্যাট্রিক পরীক্ষাটা দিতে পারি নাই, এছাড়া ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিলাম। মা বাবা মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় আমার আত্মীয়দের আসল চেহারা বের হয়ে আসে। কেউ আমাকে আর আমার ছোট্ট ভাইটাকে এক্সেপ্ট করতে পারছিল না। আমি আর আমার ভাই, সায়েম তাই নিজের বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠাৎ একদিন কলিংবেল বেজে উঠল, খুলতেই দেখি আমাদের দুজনকে যেই ভাইয়াটা পড়াত সে এসেছে। এসেই আমাকে জিজ্ঞাসা করল বাসায় কেউ আছে কিনা। আমিও বোকার মত বললাম ‘না’। সে বলল তার জন্য এক গ্লাস পানি দিতে। আমি যখন তাকে পানি দিতে যাচ্ছি, তখন সায়েম গেইম খেলছিল প্লে-স্টেশনে। আমি পানির গ্লাসটা টেবিলে রাখা মাত্রই সে রুমের দরজাটা আটকিয়ে দিল আর আমার মুখ ও হাত দুটো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলল। তারপর আর কী হওয়ার? আমি তখন একজন রেপ-ভিক্টিম; কান্না করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমার। যখন চিৎকার করছিলাম, তখন শুধু মনে হচ্ছিল ‘আমাকে মারতে চাইলে মেরে ফেলো, আমার ভাইটার যেন কিছু না হয়’। চলে যাওয়ার সময় ছেলেটা আমার মুখ আর হাত খুলে দিল। আমি তখন তাকে বললাম, ‘আমাকে মেরে ফেলবেন না?’ সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নাহ’। আমি বললাম, ‘কেন?’ ‘আমার ইচ্ছা নাই তোমাকে মারার, আর যেটা ইচ্ছা ছিল করার তা তো করছি’। সে চলে গেল। আমি বসে রইলাম খাটের এক কোণায়।
আমি কাউকেই বললাম না এই ঘটনার কথা। আমার মাথায় তখন অন্য কিছু চলছে। দুইদিন পর আমি আমাদের ঐ টিউটরকে একটা ম্যাসেজ পাঠালাম আমাদের বাসায় আসার জন্য। অপেক্ষা করতে থাকলাম তার, সে আসল না। সে আসল তিনদিন পর। আমার বাসায় তখন আমি আর আমাদের পার্ট-টাইম কাজের বুয়া। বুয়া কাজ করতেছে আর সায়েম স্কুলে। তাকে আমি রুমে নিয়ে বসালাম। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কেন ডাকছ বল’। আমি বললাম, ‘তিনদিন পর আসলেন কেন?’ ‘পরীক্ষা চলতেছিল তাই’। ‘ও, হুম। আমি কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম আপনার সাথে’। ‘বলো’। ‘আমি হিসেব করে দেখলাম আব্বুর প্রভিডেন্ট ফাণ্ড আর ইনস্যুরেন্সের টাকাটা মাসে মাসে না তুলে কমপক্ষে ৪ বছর জমিয়ে রাখলে যেই টাকাটা হবে, তা দিয়ে সায়েমকে ছোট চাচার কাছে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেয়া যাবে আর ২০ বছর হওয়া পর্যন্ত ওর থাকা-খাওয়া-পড়াশোনার খরচটা হয়ে যাবে। আমাদের প্রতি মাসে খরচ লাগবে ২০,০০০টাকা। আম্মুর যেই সেভিং একাউন্ট ছিল তা থেকে প্রতি মাসে আমরা ১০,০০০টাকা পাব, তাও আবার ১০বছরের জন্য। বাকি ১০,০০০টাকা আমাকেই ম্যানেজ করতে হবে। আমাদেরকে কেউ হেল্পও করবে না এটা জানা কথা। এখন মেইন কথা হল, আপনি আমাকে হেল্প করবেন এই ১০,০০০টাকা প্রতি মাসে ম্যানেজ করার জন্য। পারবেন?’ আমার কথাগুলো শুনে সে কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। প্রায় ১০ মিনিটের মত সে মাথা নিচু করে বসে রইল, কিছু বলল না। ‘আপনি কি শুনেছেন আমি কী বলেছি আপনাকে? ম্যানেজ করতে পারবেন?’, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। সে এতক্ষণ পর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী বলতেছ তুমি জানো?’ ‘জি, জানি। এখন আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিন’। ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না’। ‘কে বলেছে আপনাকে আমাকে বিয়ে করতে?’ ‘তুমি তো বললা’। ‘না তো, কখন?’ ‘একটু আগেই তো বললা, প্রতি মাসে ১০,০০০টাকা দিতে। আমি তো স্টুডেন্ট, আমি কীভাবে তোমাকে বিয়ে করব আর মাসে মাসে ১০,০০০টাকা দিব? এছাড়া আমার পড়া শেষ হতে এখনও ২বছর বাকি’। ‘আমি আপনাকে বলিনি আমাকে বিয়ে করতে আর ঘর চালানোর জন্য টাকা দিতে। আমি যেই কথাটা বলতে চাচ্ছি, তা আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনি কথাগুলো আবার চিন্তা করুন, এরপর উত্তর দিন’। ‘তুমি কি প্রস্টিটিউশনের কথা বলতেছ?’ আমি চুপ করে রইলাম, কিছুক্ষণ পর মাথা নাড়ালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, এরপর চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ানোর আগেই আমি তার হাতটা ধরে ফেললাম। সে হঠাৎ আমার গালে অনেক জোরে একটা থাপ্পর দিল। ‘মারলেন কেন?’ ‘রাগ উঠছিল তাই’। ‘রেপ করার সময় কি মনে রাগ ছিল?’ সে চুপ করে বসে রইল। ‘রাগ যদি নাই থাকে তাহলে ঐদিন এমন কেন করলেন আমার সাথে? কী ব্যাপার? উত্তর দিচ্ছেন না কেন?’ প্রশ্নের কোন উত্তর সে দিচ্ছিল না, আর আমি তাকে অনর্গল প্রশ্ন করছিলাম আর থাপ্পর দিচ্ছিলাম। একটা পর্যায়ে আমি থেমে গেলাম, বললাম ‘এখনই বের হন বাসা থেকে, না বের হলে আমি আপনাকে খুন করে ফেলতে পারি’। সে চুপ করে বেরিয়ে গেল। সে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি দরজা আটকিয়ে চিৎকার করে কাঁদলাম অনেকক্ষণ।
‘এক্সপেরিয়েনছ আছে নাকি এই মাইয়্যার?’ ‘নাহ, নাই’। ‘তাইলে ওরে দিয়ে ইস্পেশালগুলো করানো যাইব। কদ্দুর পড়ছে এই মাইয়্যা?’ ‘ক্লাস টেন পাশ’। ‘কস কি? এইডারেই আমার চাই, ওরে নিয়া আয় ভেতরে’। আমি আর হামিদভাই বাহিরে বসেছিলাম। একটা হিজরা ভেতরের রুম থেকে বের হয়ে আসল। ‘আপনেগো ম্যাডাম ডাকছে, ডিল হইব’, ডান চোখটা টিপ মুখের সব দাঁতগুলো দেখিয়ে সে বিশ্রী ধরণের এক হাসি দিল। ভেতরে যাওয়ার পর দেখলাম এক ফর্সা মোটা মহিলা বসে আছে। ‘এই ছ্যারা? তোরে তো কন্দিন দেখছি বইলা মনে পড়ে না আমার? কে পাঠাইছে তোরে? ঠিকানা জানছোস কেমনে?’ ‘আমি আসি নাই কখনও। আমার বন্ধু সাদিক আপনার ঠিকানা দিছে’। ‘বুঝবার পারলাম। এইডার কথাই তো কইছিলি? মাইয়্যা কে হয় তোর? শাদি কইরা আইনা বেইচ্যা দিতাছোস না তো?’ ‘না, আমি ওনার বউ লাগি না, আত্মীয়ও লাগি না’। ‘অ, তাইলে কিছুই লাগোছ না। ভালা হইছে আমার লাইগ্যা। তো, কামের কথা আই। ফিগার তো ভালাই, দেখতেও সুন্দর তুই। তোরে দিয়া আমার ইস্পেশাল কেলাইন্টগুলোর খেয়াল রাখামু আমি। মাসে তিনবার আওন লাগবো এইহানে, বেশি হইলে চাইরবার। এক ক্লাইন্ট ৫,০০০-৬,০০০ট্যাকা। এইর চাইতে আমি বেশি দিতে পারুম না কইলাম। রাজি থাকলে এক্ষণই কও, আমার হাতে আবার সময় কম কিনা তাই কইতাছি’। ‘হ্যাঁ আমি রাজি’। ‘আর শুন মাইয়্যা, দুইখান কথা মাথায় রাখ। এক, এইখানে যারা ঢুকে তারা বাইর হইতে পারে না, বাইর হইতে চাইলেই তুই মরছোস কইয়্যা দিলাম। আর দুই, তুই আমার ইস্পেশাল কেলাইন্টের লাইগ্যা, তাই তুই কাম ছাড়াও হেগোর লগে ফাঁকফোঁকরে ইংরেজি কথা কইবি, মদ গাঞ্জা খাবি, বাহিরে ঘুরতে যাবি। বকশিশ সহ যত টাকা পাবি, তার থেইক্কা তোরে পাঁচ বা ছয় হাজার ট্যাকা দিমু’।
পার্ট–২
‘মানুষের অনুভূতিগুলো কেমন জানেন?’ ‘অনেক ধরনেরই তো হয়, তুমি কোন ধরনের বুঝাইতে চাচ্ছ?’ ‘চোর পালাইলে বুদ্ধি বাড়ার মত’। কথাটা শুনার পরপরই রিয়াদ অনেক আওয়াজ করে হেসে উঠল। ‘হাসলেন কেন?’ ‘অনেক বেশি হাস্যকর লাগল তাই’। কথাটা শুনে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। রিয়াদের রেডি হওয়া শেষ হয়ে গেল। দরজা খুলে বের হয়েও গেল। একটুপর আবার ফেরত আসল সে। ‘কী ব্যাপার? আবার আসলেন? মন ভরে নাই বুঝি?’ ইচ্ছা করে খোটা মেরে কথাটা বললাম। ‘সীমা, তোমার কাছ থেকে এই টাইপের কথা আমি আশা করি না’। ‘কোন টাইপের কথা?’ ‘এই যে, প্রস্টিটিউট টাইপ কথাবার্তা’। ‘আমি তো প্রস্টিটিউটই, আমি তো এমন ধরনের কথাই বলব’। ‘নাহ, আমার জন্য তুমি প্রস্টিটিউট না’। ‘তাহলে আমি কী, মি. রিয়াদ চৌধুরী?’ ‘জানি না। শুনো, আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলেছি, তোমাকে কালকের জন্য বুক করেছি’। ‘কেন?’ ‘বলব, কালকেই বলব। এখন আসি’। ‘রিয়াদ সাহেব?’ ‘কী’ ‘বললেন না তো আমি কী?’ জবাব দিল না মানুষটা। চলে গেল। রিয়াদ চৌধুরী, বয়স ২৫ ২৬ এর মত হবে। চাকরী করছে একটা ব্যাংকে, ভাল ঘরের ছেলেই মনে হয়। প্রথম দেখা হয়েছে বনানীর এক পার্টিতে। আমার যেই ক্লায়েন্ট ছিল সে বিদেশ থেকে এসে ছিল রিয়াদের ব্যাংকের কোন এক কাজের জন্য, দেশে ফেরার আগের দিন সে এক পার্টি দিয়েছিল বনানীতে। ম্যাডাম আমাকে আর নাইমাকে পাঠিয়ে ছিল ঐ পার্টিতে। রাত তখন বাজে প্রায় ১টা। পার্টিতে যারা এসেছিল তারা সবাই মোটামোটি পুরাই টাল, একজন দুইজন শুধু আমাদেরকে রুমে নিয়ে গিয়েছিল। আমি আমার রুম থেকে কাজ শেষ করার পর বের হয়ে বার সাইডে গেলাম নাইমাকে খোঁজার জন্য। গিয়ে দেখি নাইমা আর তার ক্লায়েন্ট দুজনই টাল হয়ে হোটেল রুমের দিকে আগাচ্ছে। বুঝলাম ওর সময় লাগবে আর আমারও ওয়েট করা ছাড়া কোন উপায় নাই। আমি গিয়ে একটা সোফাতে বসলাম, হঠাৎ খেয়াল করলাম রিয়াদকে তার এক বন্ধু জোরাজোরি করছে আমার কাছে যাওয়ার জন্য। আমি ভাবলাম, ঐ বিদেশি ক্লায়েন্টের মানুষ। সে হঠাৎ করে আমার পাশে এসে দাঁড়াল আর জিজ্ঞাসা করল, ‘If you don’t mind, can I bring a drink for you?’ একটু খটকা খেলাম আমি। এভাবে কেন জিজ্ঞাসা করছে পার্সনটা। আমি বললাম, ‘yah, sure’. সে বারসাইডে গেল আর দুটো ড্রিঙ্কস নিয়ে আসল। ‘Thanks for the drink’. ‘Welcome. আপনার সাথে কথা বলতে পারি কিছুক্ষণ যদি কিছু মনে না করেন?’ ‘বলুন, আমার কোন সমস্যা নেই’। ‘নাহ, একচুয়েলি … কিছু না। আপনি কী করেন? I mean কী জব করেন?’ ‘আপনি কী করেন তা আগে বলুন? পরে আমি আমারটা বলব’। ‘আমি একটা ব্যাংকে জব করছি, সিনিওর একাউন্টেন্ট’। ‘তার মানে, আপনি সিএ কমপ্লিট করেছেন?’ ‘হ্যাঁ, কিন্তু অনেক কষ্টে। পড়তে গিয়ে জান বের হয়ে গিয়েছিল’। ‘কেন? এত বেশি টাফ বুঝি?’ ‘হ্যাঁ, আমার জন্য ছিল। জব করা, জব শেষে ক্লাস এটেন্ড করা, পরীক্ষা তো লেগেই থাকত’। ‘আমি ভেবেছিলাম, এত কঠিনও হবে না। আমার ইচ্ছা ছিল এই সেক্টরে কাজ করার’। এই ধরনের কথা বলতে বলতে রাতটা পার হয়ে গেল। সকাল ৬টা বাজে তখন, আমি আর রিয়াদ ঐ বারসাইডের সোফাতেই বসেছিলাম। হঠাৎ সে বলল, ‘নাস্তা করবেন না?’ ‘হুম, করব। খিদাও লেগেছে’। ‘চলেন, এখানেই করে ফেলি। এখানের ব্রেকফাস্টের সেট মেনুটা ভাল’। ‘আচ্ছা, চলুন করে ফেলি’। হোটেলের সবচেয়ে ভাল জিনিসটা ছিল, রুফটপ প্লেসটা। আমরা দুজন ওখানেই নাস্তা করলাম। অনেকদিন পর খোলা জায়গায় অনেক ভাল মজার খাবার-দাবার দিয়ে নাস্তা করছিলাম, আব্বুর কথাও মনে পড়ে গিয়েছিল। আব্বু এমন করতেন, শুক্রবারে আমাদের প্রায় বাহিরে ব্রেকফাস্ট করাতেন। শীতকাল ছিল বলে সূর্যটাও আস্তে আস্তে উঠল, খুব একটা নরম আর আরাম ভাব ছিল ঐদিনের সূর্যের আলোটায়। বিল দেয়ার সময় মজা হল, একবার রিয়াদ কাড়াকাড়ি করছে আরেকবার আমি কাড়াকাড়ি করছি। শেষমেশ আমি জিতলাম। পরে আমরা নিচে নেমে আসতেই দেখলাম নাইমা আমার জন্য ওয়েট করছে লবিতে বসে। আমাকে দেখেই বলল, ‘এক্ষণই চল, না হলে লেট হয়ে যেতে পারে’। আমি রিয়াদকে বললাম, ‘আমি যাই, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লেগেছে অনেক। ভাল থাকবেন’। ‘আপনিও ভাল থাকবেন। আচ্ছা, আমি কি আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি? কারণ, আমি আপনার সাথে এমন আরও অনেক কথা বলতে চাই’। ‘হ্যাঁ, পেতে পারেন। আমি একটা কার্ড দিচ্ছি, ওখানেই আমার সবকিছু লেখা আছে’।
ইলীয়াহ হাবীব
শিক্ষার্থী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
জন্ম ৩১ জুলাই
ইমেল: ehp_tweety@yahoo.com