অনিক-উজ্জামান বাপ্পি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ৬:৩২ অপরাহ্ণ, | ১৭৪৭ বার পঠিত
“Hours” (2013)… “পল ওয়াকার” এর শেষ অমর সৃষ্টি
কিছু কিছু মানুষ যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়, তখন তার ভক্তদের সব থেকে বেশী কাঁদিয়ে যায় তার শেষ সৃষ্টি কর্মের দারা। যেমন “অ্যান্ডু হোয়াইটফিল্ড” এবং “হিথ লেজার” তাদের শেষ অমর সৃষ্টি “স্পারটাকাস” এবং “দা ডার্ক নাইট” এর মাধ্যমে ভক্তদের হৃদয় সিক্ত করেছেন ও তাদের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে রয়েছেন। “পল ওয়াকার” আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। তিনি তার বিখ্যাত “ফাস্ট & ফিউরিয়াস” সিরিজ দিয়ে অনেক আগেই ভক্তদের হৃদয় জয় করেছেন, এছাড়াও তার অনেক ভাল ভাল মুভি রয়েছে যা অনেকের মনকেই নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ঐযে বললাম, শেষ সৃষ্টি কর্ম বলে একটা কথা আছে। “পল ওয়াকার” এর শেষ মুক্তি পাওয়া মুভি “Hours” যা এখনও সারা দুনিয়ায় ভাল করে রিলিজ হয়নি। মাত্র ৪ মিলিওন ডলার বাজেটের এই মুভি হয়তো সারা দুনিয়ায় আলোড়ন তুলতে পারবে না, কিন্তু যারা “পল ওয়াকার” এর মৃত্যুতে চোখের জল ফেলেছেন, এই মুভিটি পুনরায় তাদের চোখে জল আনতে বাধ্য করবে।
এক দুর্যোগ কবলিত শহরে, এক পরিত্যক্ত হাসপাতালে, এক সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে বাঁচাতে তার বাবার আমরণ প্রচেষ্টার এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে এই মুভিতে। এ মুভির পটভুমী ২০০৫ সালে ঘটে যাওয়া হ্যা্রিকেন “ক্যা্ট্রিনা” এর সময়ে একটি হাসপাতালে… “নোলান” (“পল ওয়াকার”) তার প্রেগ্নেন্ট স্ত্রীকে নিয়ে আসে। কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার স্ত্রী মারা যায় ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু শিশুটি ইনফেন্ট হবার কারণে তাকে আলাদা একটি কিউবে অক্সিজেন ও স্যালাইন (বা ঔষধ) দিয়ে ৪৮ ঘন্টার জন্য পর্যবেক্ষণে রেখে দেয়া হয়। আর এমন সময় শহরে আঘাত হানে হ্যা্রিকেন। সকলে হাসপাতাল ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, কিন্তু “নোলান” যেতে পারে না তার সন্তানকে এমন অবস্থায় ফেলে। এদিকে কারেন্ট চলে যায়, হাসপাতালে বন্যার পানি ঢুকে জেনারেটর নষ্ট হয়ে যায়। “নোলান” ব্যাটারীর সাহায্যে কিউবের মেশীন অন রাখার চেষ্টা করে কিন্তু সেই ব্যাটারী প্রতিবার পাম্প করলে মাত্র ৩-২ মিনিট পাওয়ার সাপ্লাই দেয়। এক সময় সেটাও নষ্ট হয়ে যায়, এদিকে বাচ্চাটিকে যে স্যালাইন (বা ঔষধ) দেয়া হচ্ছিল সেটাও শেষের পথে চলে আসে, আবার দুর্যোগের সুবিধা উঠাতে হাসপা্তালে লুটেরাদের আগমণ ঘটে, টেলিফোন নষ্ট, সকল যোগাযোগ বন্ধ, কোন দিক থেকে কোন সাহায্য আসার কোন সুযোগ নেই এমন অবস্থায় সম্পুর্ণ একা এক বাবা যে কিনা কিছুক্ষণ আগে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে বিহবল, সে কিভাবে পারবে তার স্ত্রীর রেখে যাওয়া তাদের একমাত্র ভালবাসার নিদর্শন, তাদের সন্তানকে বাঁচাতে ?
“পল ওয়াকার” এতটাই বাস্তব ও করুণ অভিনয় করেছে যে মুভিটা দেখার সময় আমি যেন নিজেই “পল”কে অনুভব করছিলাম, যেন আমি নিজেই “নোলান”, যে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারে না। লাশ রাখা ঘরে তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্ত্রীর লাশ এক কোনায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সে পাগল হয়ে যায়। সে এতটাই শোকাহত হয়ে যায় যে প্রথমে তার সন্তানকেই তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণে মেনে নিতে পারে না। অতঃপর সে কিউবে তার ঘুমন্ত কন্যার পাশে বসে তাকে তার মায়ের গল্প শোনায়, ছবি দেখায়, তাদের পুরনো দিনের রোমান্টিক সৃ্তিগুলো মনে করে। আবার ২ মিনিট পর পর ব্যাটারীতে পাম্প করে মেশিন সচল রাখে। এরই মাঝে সাহায্য ও ঔষধের জন্য গোটা হাসপাতাল ছোটাছুটি করে আবার ২ মিনিট পর পর তার হাতঘড়িতে অ্যালার্ম বাজলে ছুটে যায় তার সন্তানের কাছে ব্যাটারীতে পাম্প দেবার জন্য। প্রতিটি ঘটে যাওয়া মূহুর্ত যেন ছিল এক একটি ঘন্টার সমান। অবশেষে মুভির শেষ দৃশ্য দেখে সত্যিই চোখে পানি এসে গিয়েছিল। এ মুভিতে “পল ওয়াকার” এর অভিনয় দেখে আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি, তততা কষ্ট আমি তার মৃত্যুতেও পাইনি। এ মুভি দেখার সময়ই আমি অনুভব করলাম যে, আমরা কাকে হারিয়েছি। সত্যিই, “পল ওয়াকার” এর মৃত্যুটা আমি মোটেও মেনে নিতে পারছিলাম না। বারবার মনে হচ্ছিল, এটা ঠিক হয়নি… এটা ঠিক হয়নি। এভাবে এত অল্প বয়সে কেন একজন মানুষ যে কিনা আমাদের আরও অনেক কিছু দিতে পারতো, কিভাবে চলে গেলো… এ মুভিটা আমার আফসোস আরো বাড়িয়ে দিল। এ মুভিটা পুরোটাই ওয়ান ম্যান (“পল ওয়াকার”) শো। পর্দায় তাকে ছাড়া আর কাউকেই তেমন দেখানো হয়নি। আর এ কারণেই এ মুভিতে তার অভিনয় পুর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। যদিও ২০১৪ সালে তার সম্পুর্ণ কমপ্লিট হওয়া শেষ মুভি “Brick Mansions” আসছে যা কিনা ২০০৪ সালের ফ্রেঞ্চ অ্যাকশন মুভি “District 13” এর রিমেক। “District 13” সিরিজকে আশা করি অ্যাকশন মুভি লাভারজদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। “পল ওয়াকার” বেঁচে থাকলে হয়তো “ফাস্ট & ফিউরিয়াস” এর পর এই “Brick Mansions” সিরিজও তার জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে থাকতো। তবে, চরিত্রের গভীরতা ও অভিনয় দক্ষতার কথা চিন্তা করলে “Hours” মুভিটাই তার জীবনে এরকম শেষ মুভি। তাই, সকল “পল ওয়াকার” ভক্তদের কাছে আমার অনুরোধ যদি পুনরায় “পল ওয়াকার” কে অনুভব করতে চান তো এই মুভিটি মোটেও মিস করবেন না।